মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

খানসামায় শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে মিড-ডে-মিল

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
খানসামায় শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে মিড-ডে-মিল
খানসামায় শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে মিড-ডে-মিল

স্কুলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও পড়াশোনার মানোন্নয়নে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দলি গুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ সাল থেকে শিক্ষকদের নিজ উদ্যোগেই মিড-ডে-মিল চালু করা হয়েছে। এতে সপ্তাহে ৫ দিন ডিম কিংবা পুষ্টিসমৃদ্ধ অন্য খাবার এবং প্রতি বৃহস্পতিবার খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। শিক্ষকদের এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগে স্কুলে নিয়মিত শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি স্থানীয় অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের প্রশংসায় ভাসছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, ১৯৯৮ সালে দলি গুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। আর জাতীয়করণ হয় ২০১৩ সালে। ২০১৮ সালে এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো. আক্তারুজ্জামান। ওই সময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ও উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক কম। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৪ জন ও ৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা এবং ঝরে পড়া রোধে নিজেই উদ্যোগ নিলেন পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কার্যক্রম। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং অভিভাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় সবার সম্মতি নেওয়ার পর ২০২২ সালের জুন মাস থেকে প্রধান শিক্ষকের অর্থায়নে ও সহকারী শিক্ষকদের সহায়তায় চালু করেন মিড-ডে-মিল, যা এখনো চলমান।

সরেজমিন পরিচ্ছন্নে ওই স্কুল ক্যাম্পাস গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগী। অন্যদিকে এক সহকারী শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের ছাদে একটি কক্ষে খিচুড়ি রান্নার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাকে সহায়তা করছেন দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা। রান্না শেষ হতেই দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিরতির ঘণ্টা বেজে উঠল। বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এলো শিক্ষার্থীরা। এ সময় হৈ-হুলেস্নাড় করে বেসিন ও টিউবওয়েলে হাত ধোয়া, পেস্নট পরিষ্কার ও পানির বোতল ভর্তিতে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। হাত ধুয়ে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে শুরু করল দুপুরের খাবার। এতে প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামানসহ অন্য সহকারী শিক্ষকদের পরিবেশনে ব্যস্ত দেখা যায়। এতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যেমন বেড়েছে, তেমনি দুপুরে খাবার পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা।

সহকারী শিক্ষক মনমত কুমার রায় বলেন, আগে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম ছিল। বর্তমান প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নানামুখী উদ্যোগ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার আয়োজনের মাধ্যমে ভর্তি ও উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন উপস্থিতির হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।

বিদ্যালয়ের মনিষা, জিৎ, প্রীতম ও কাকলীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সঠিক সময়ে বাসায় রান্না না হওয়া এবং প্রতিদিন স্কুলে আসার পরে ক্ষুধার জন্য বাড়ি চলে যাওয়া বন্ধ করতে স্যারদের এ আয়োজন ভালোই লাগে। প্রতিদিন ডিমসহ নানা খাবার দেন। আর প্রতি বৃহস্পতিবার খিচুড়ি ও ডিম ভাজি খাওয়ান স্যাররা।

রান্নার কাজে সহায়তাকারী অভিভাবক রিমা রানী রায় বলেন, শিক্ষকদের এমন আয়োজনে সবাই খুশি। বাড়ির কাজের ফাঁকে এমন আয়োজনে স্কুলের অভিভাবকরাও সহযোগিতা করেন।

রমা রানী রায় নামে রান্নার কাজে সম্পৃক্ত এক শিক্ষক বলেন, 'শিক্ষার্থীরা ক্ষুধামুক্ত থাকলে পড়াশোনায় মনোযোগ থাকবে। তাই এমন আয়োজন। এতেই আমাদের ভালোই লাগে। কেননা এতে বাচ্চারা ভালো থাকে ও নিয়মিত স্কুলে আসে।'

প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, 'বিদ্যালয়ে যোগদানের পর দেখি অধিকাংশই খেটে খাওয়া মানুষ। অভাব-অনটনের কারণে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে আসত না। অনেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তাই নিয়মিত শিক্ষার্থী উপস্থিতি, শিক্ষার মানোন্নয়নসহ ঝরেপড়া রোধে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি। এই আয়োজনে প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এই ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য। তাই এমন আয়োজনে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এমন উদ্যোগ ধরে রাখার সঙ্গে পরিধিও বৃদ্ধি করা যাবে।'

ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন জানান, নিজ অর্থায়নে স্কুলের শিক্ষকদের এমন উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়। তাদের এমন ইতিবাচক কাজে ইউনিয়ন পরিষদ সর্বদাই পাশে থাকবে।

ইউএনও তাজ উদ্দিন নিজ উদ্যোগে বিদ্যালয়ে মিড-ডে-মিলের বিষয়টিকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, নিজ অবস্থান থেকে সবার এমন উদ্যোগই পারবে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে। এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে