দিনাজপুর শহরের আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমানকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করিয়ে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই কলেজেরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বর্তমানে ওই শিক্ষক স্থায়ীভাবে অধ্যক্ষের পদ পেতে এডহক কমিটি গঠনের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এমনকি পছন্দের লোকদের নিয়ে এডহক কমিটিও গঠন করেছেন।
ওই শিক্ষকের নাম হাসিনা আক্তার বানু। তিনি কলেজের উপাধ্যাক্ষ এবং দিনাজপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি এডহক কমিটি গঠন।
দিনাজপুর আদর্শ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৯ সালে। বিগত সাড়ে ৬ বছর ধরে রেদওয়ানুর রহমান অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর কলেজের অনার্স শাখার (নন-এমপিও) শিক্ষকরা কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে রেদওয়ানুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে তাকে পদত্যাগ করতে চাপ দেন। এ সময় অধ্যক্ষ ও উপাধ্যাক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে সেনাবাহিনী এসে অধ্যক্ষ রেদওয়ানুর রহমানকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় রেদওয়ানুর রহমান গত ১৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানায় সাধারণ ডাইরি করাসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ করেন।
এদিকে কলেজে দুই পক্ষের এডহক কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। উপাধ্যক্ষ হাসিনা বানুর স্বাক্ষরিত এডহক কমিটি গঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে এডহক কমিটির সভাপতি পদে আবুল আলা মো. মাহবুবুর রহমানের নাম উলেস্নখ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাধ্যক্ষ হাসিনা বানুর এডহক কমিটি বাতিল চেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় আবেদন করেন অধ্যক্ষ সৈয়দ রেজওয়ানুল রহমান। অধ্যক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাধ্যক্ষের এডহক কমিটি বাতিল করে। তার স্থলে গত ১ অক্টোবর ২৪ তারিখে পুনরায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে সভাপতি করে এডহক কমিটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি এডহক সভাপতি গঠন নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উভয়পক্ষের এডহক কমিটির স্থগিত করে। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্টার নজরুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বানু বলেন, অধ্যক্ষ সৈয়দ রেজওয়ানুর রহমানের সঙ্গে কিছু শিক্ষক ও ছাত্রদের বনিবনা হচ্ছিল না। তিনি সবার সঙ্গে অসদাচরণ করতেন। তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেই আওয়ামী সরকার তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। অধ্যক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিনিধি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের হাতে তার নিয়োগ। সেই সময় ইকবালুর রহিম কলেজের সভাপতি ছিলেন।
পদত্যাগকারী অধ্যক্ষ ডক্টর সৈয়দ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, 'ভাইস প্রিন্সিপাল কলেজের নন-এমপিও শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু লোক নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর আমার নামে কিছু মিথ্যে অপবাদ দিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে এ ধরনের জোরপূর্বক পদত্যাগ গ্রহণ বিধিসম্মত নয়। ঘটনার দিন থেকে কলেজের সভাপতি জেলা প্রশাসক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে যারা ন্যাক্কারজনকভাবে আমাকে লাঞ্ছিত ও হেনস্তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।'