সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মদনমহন মন্দিরে শত বছর ধরে মাসব্যাপী প্রসাদ বিতরণ

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে সাহাপাড়া মদনমহন মন্দিরে তিনশ' থেকে চারশ' ভক্তকে দেওয়া হচ্ছে প্রসাদ -যাযাদি

মাঝ রাত সরগরম হয়ে ওঠে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়া মদনমহন মন্দির। বড় বড় ডেকচি নিয়ে রাঁধুনিদের ব্যস্ততা বাড়ে। রান্না হয় নরম খিচুড়ি, পায়েস, লুচি, কাটা হয় হরেক রকমের ফল। অন্তত ৩শ থেকে ৪শ মানুষের জন্য প্রতিদিন তৈরি হয় এই ভোজ।

এমন আয়োজন হঠাৎ করে নয়; শত বছর ধরে বাংলার সনের কার্তিক মাসজুড়ে হয়ে আসছে। মদনমহন মন্দিরে সকালে পূজা-কীর্তণের পর প্রসাদ বিতরণ করেন কমিটির লোকজন।

জানা যায়, আজ থেকে ১১৮ বছর আগে প্রায় ১৯০৬ সালে সারিয়াকান্দি মদনমহন মন্দির স্থাপন করেন পশ্চিমবঙ্গের মালদা নিবাসী সুরেশ চন্দ্র গোস্বামী। প্রতিষ্ঠার সময় অনেকেই জায়গা জমি দেবোওর সম্পওি হিসেবে দান করেন মন্দিরে। তাদের মাঝে অন্যতম ছিল সুনীল কুমার সাহা, রমণী মহন সাহাসহ সেই সময়ে সনাতনি সমাজের গণ্যমান্য পরিবারের ব্যক্তিরা। আজও তারা বংশ পরম্পরায় মন্দিরের কাজ দেখভাল করে আসছেন।

মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বাল্য ভোগ নামে কার্তিক মাসে মাসব্যাপী সকালে মন্দির হতে খাবার বিতরণ করা হয়। এটা যুগের পর যুগ ভক্তদের অনুদানে চলে আসছে নিয়মের কোনো রকম ব্যত্যয় হয়নি আজও।

মদনমহন মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, সকালে কীর্তন হচ্ছে, কীর্তন শেষ হওয়ার পরে সবাই মন্দিরের ভেতর সারিবদ্ধ হয়ে বসে পড়েছেন। কেউ বাড়ি হতে খাবার বাটি পেস্নট এনেছেন, কেউ আবার মন্দির থেকে দেওয়া ওয়ান টাইম পেস্নট নিয়ে বসে পড়েছেন। সুশৃঙ্খলভাবে তাদের প্রসাদ বিতরণ করছেন মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা।

এই দিনে খাবার আইটেম ছিল খিচুড়ি, পায়েস, লুচি, পেয়ারা ও আপেল। অধিকাংশরা প্রসাদ নিয়ে সেখানেই খেতে বসে পড়েন। কেউ আবার খাবার নিয়ে রওনা দেন বাড়ির পথে।

মদনমহন মন্দির আসা গোপাল নামে এক ভক্ত জানান, 'ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মন্দিরে এ রকম প্রসাদ বিতরণ হয় কার্তিক মাসজুড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মন্দিরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসে কীর্তন শুনি তারপর প্রসাদ খাই এতে মনটা প্রশান্তিতে ভরে যায়। আর আমরা বাড়িতে খিচুড়ি রান্না করে খাই কিন্তু প্রসাদে যে খিচুড়ি দেয় এটা অমৃত।'

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণাংশু বাবু জানান, মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ হয় কার্তিক মাস পুরোটাই। সমাজের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তি যারা আছে তাদের প্রত্যেকের জন্য দিন নির্দিষ্ট করা আছে। প্রত্যেকে তাদের নির্ধারিত দিনে প্রসাদের খরচের টাকা বহন করবে। এছাড়াও সমাজের যে কেউ যদি খাবার বা কোন ফল মুল দিতে চাই সে সেটা দিতে পারবে। শেষের দিনে সবাই মিলে চাঁদা তুলে ভালো করে প্রসাদের আয়োজন করে থাকি।

মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলা সাহা বলেন, প্রতিদিন ৩শ' থেকে ৪শ' লোকের খাবার তৈরি হয়। এটি সম্পূর্ণ নিরামিষ খাবার। এ খাবার তৈরি করতে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। সমাজের সবার সহযোগিতায় এটা আমাদের আদি পুরুষদের হাত শত বছর আগে থেকেই চলে আসছে।

মদনমহন মন্দির কমিটির সভাপতি চঞ্চল কুমার সাহা বলেন, 'আগে আমার বাবা মন্দির কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি প্রায় ১২ বছর আগে ইহলোক ত্যাগ করেছেন। এরপর থেকে মন্দির কমিটির সভাপতি আমি। আমাদের গুরুজনেরা যেভাবে কার্তিক মাসে প্রসাদ বিতরণ করতেন, আমরাও করে যাচ্ছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে