পাবনার সুজানগরের নিজাম উদ্দিন আসগর আলী (এনএ) ডিগ্রি কলেজে ম্যানেজিং কমিটির এডহক কমিটি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রম্নপের দ্বন্দ্বের জেরে কলেজ অধ্যক্ষ আলমগীর হোসাইকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে ব্যাপক মারধর, লাঞ্ছিত, কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব গ্রম্নপের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠে। রোববার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুজানগর নিজাম উদ্দিন আসগর আলী ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির কয়েকটি গ্রম্নপের বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে রোববার দুপুরের দিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুজানগর -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব গ্রম্নপের অনুসারী সুজানগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পিন্টু, সদস্যসচিব রিয়াজ মন্ডলের নেতৃত্বে বিএনপি ও যুবদল ক্যাডাররা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে গিয়ে সেলিম রেজা হাবিবকে আহ্বায়ক প্রস্তাব না করে পাঠানোয় হত্যাসহ নানা হুমকি দেন অধ্যক্ষ আলমগীর হোসাইনকে। অধ্যক্ষ তাদের বলেন, আপনারা সব গ্রম্নপ আগে মিল হয়ে আসেন। এতে সবার জন্য ভালো হবে। কিন্তু অধ্যক্ষের কথা না শুনে তাকে অবরুদ্ধ করে ব্যাপক মারধর করা হয়। এ সসয় কার্যালয়ে ব্যাপক লুটপাট, ভাঙচুর ও লাঞ্ছিত করা হয়।
এ সময় অধ্যক্ষের ছেলে সিসি ক্যামেরায় বিষয়টি দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে রুমের সামনে পুলিশের ফোর্সকে দাঁড় করিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটজ জোরপূর্বক ডিলেট করানো হয়। এরপর পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে।
আরও জানা গেছে, সুজাগরের নিজাম উদ্দিন আসগর আলী ডিগ্রি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির এডহক কমিটিতে স্থান পেতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান জাফির তুহিন ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাজ্জাদ হোসাইনসহ বেশ কয়েকটি গ্রম্নপ জোর তদবির করে। মাঝেমধ্যেই কলেজে এসে হুমকি-ধামকি দিয়ে যেত। এই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিজাম উদ্দিন আসগর আলীর ছেলে শহীদুর রহমানকে এডহক কমিটির আহ্বায়ক দিতে বিএনপির সব গ্রম্নপ একমত হলেও সেলিম রেজা হাবিবের গ্রম্নপ মানতে নারাজ ছিল। কয়েকদিন আগেই কলেজের প্রতিষ্ঠাতা নিজাম উদ্দিনের ছেলে শহীদুর রহমানের নাম প্রস্তাব করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়ে দেন অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ছেলে ফোন রিসিভ করে বলেন, 'কলেজে বাবার সঙ্গে যা ঘটেছে, সবাই জানে। আমরা আর নতুন করে কিছু বলতে চাচ্ছি না। বাবা বর্তমানে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তিনি কথা বলতে পারবেন না। এরপরও বর্তমান দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। তাই মিডিয়ায় বিষয়টি বলতে চাচ্ছি না।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সুজানগরে কলেজের এডহক কমিটির আহ্বায়ক সেলিম রেজা হাবিবকে প্রস্তাব না পাঠানোয় তার লোকজন গিয়ে অধ্যক্ষকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে। মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ সময় কার্যালয় ব্যাপক লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। সেলিম রেজা হাবিবের ওইসব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
অভিযুক্ত সুজানগর উপজেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ মন্ডল বলেন, 'আসলে সুজানগরের সর্বস্তরের লোকজনের চাওয়া এখানকার সভাপতি সেলিম রেজা হাবিব হবেন। কিন্তু উনাকে না দিয়ে অধ্যক্ষের ইচ্ছেমত লোকের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়ে দিয়েছে। বিএনপির সেলমি রেজা হাবিব গ্রম্নপ, মোলস্না তুহিন গ্রম্নপ, সাজ্জাদ গ্রম্নপ ও জামায়াত ইসলামী- সবাই নিজেদের লোক চেয়েছিল। এটা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তবে সব গ্রম্নপের দ্বন্দ্ব নিরসন করে একজনের নাম প্রস্তাব পাঠানোর কথা থাকলেও অধ্যক্ষ এটা করেননি। সেটা নিয়ে আজকে একটু বিতর্ক হয়েছিল।'
পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম রেজা হাবিব বলেন, 'দেশ এখন স্বাধীন হয়েছে। লোকের অভাব নেই। কে কার লোক বলা মুশকিল। আমরাই এখন কোনঠাঁসা হয়ে গেছি। প্রশাসনে আওয়ামী প্রেতাত্মারা বসে আছে, তারা আমাদের নিয়ে খেলছে। আমার কোনো কথাই শুনছে না। যারা অধ্যক্ষকে মারধর করেছে, তারা আপনার লোক কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আসলে তারা তো যুবদল করে, এখানে আমার অস্বীকার করার কিছু নেই। বর্তমান জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, ইসলামী আন্দোলন ও বিএনপির কয়কটি গ্রম্নপই কলেজের সভাপতি হওয়ার দাবি করছে।' তবে আমরাই এখন অসহায় বলে দাবি করেন তিনি।
সুজানগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, 'সুজানগর এনএ কলেজে এডহক কমিটি নিয়ে বিএনপির লোকজনের সঙ্গে কলেজ অধ্যক্ষের ঝামেলা হচ্ছে- এমন সংবাদে সেখানে আমরা যাই। সেখানে গিয়ে দেখি অধ্যক্ষসহ বিএনপির কয়েকটি গ্রম্নপ বসে আছে দেখলাম। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।'
তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ডিলেট করছে কেন- এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।