বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
কামরাঙ্গীরচরে ব্যবসায়ী হত্যা

লাশ মাটিচাপা দিয়ে সিমেন্ট ও বালুর ঢালাই দেন তারা

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ তিন আসামির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
লাশ মাটিচাপা দিয়ে সিমেন্ট ও বালুর ঢালাই দেন তারা

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ফেব্রিকস ব্যবসায়ী নূর আলমের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ দুই খন্ড করে কারখানার ভেতরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। কেউ যেন সন্দেহ না করে সে জন্য ওই জায়গায় বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেন তারা। হত্যাকান্ডে গ্রেপ্তার তিনজন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হলে, আদালত তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যাকান্ডের তদন্তে পাওয়া এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

1

পুলিশ জানায়, কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর এলাকায় নূর আলমের ফেব্রিকসের কারখানা। এই ব্যবসায়ী নিখোঁজ হওয়ার চার দিনের মাথায় মঙ্গলবার কারখানার ভেতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে নূর আলমের কর্মচারী মিরাজ মিয়া (২০) এবং তার দুই বন্ধু মো. শিপন ওরফে সম্রাট (২৫) ও মো. রিফাতকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হাতুড়ি, একটি কাঁচি ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, 'নূর আলম কামরাঙ্গীরচরের হাসাননগর ভান্ডারী মোড়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফেব্রিকসের ব্যবসা করতেন। গত ৬ ডিসেম্বর নূর আলম তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে যাবেন বলে তার স্ত্রীকে ফোন করেন। এ সময় কয়েকজন লোকের সঙ্গে নূর আলমের কথা-কাটাকাটি হওয়ার বিষয়টি মুঠোফোনে শুনতে পান নূর আলমের স্ত্রী। এরপর নূর আলম নিখোঁজ থাকায় তার জামাতা মো. আতাউলস্নাহ খান সজীব কামরাঙ্গীরচর থানাকে বিষয়টি অবহিত করেন।'

উপকমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, 'কামরাঙ্গীরচর থানা-পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে। পরে ওই কারখানা থেকে কর্মচারী মিরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন কামরাঙ্গীরচরের ঝাউরাহাটি থেকে রিফাতকে এবং পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

ডিএমপি উপকমিশনার বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছেন, ৬ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে চারটা থেকে পৌনে পাঁচটার দিকে মিরাজ, রিফাত, শিপন ও পলাতক জিহাদসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই-তিনজন মিলে নূর আলমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। পরে কারখানার শৌচাগারে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মরদেহ দ্বিখন্ডিত করা হয়। নূর আলমের মৃতদেহ যাতে কেউ খুঁজে না পায়, সে জন্য মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে মৃতদেহের খন্ড দুটি পলিথিন ও কাপড় পেঁচিয়ে একটি বস্তায় ভরে ছাপাখানার ভেতরে টেবিলের নিচের মেঝে ভেঙে মাটিচাপা দেন তারা। পরে ওই জায়গাটি বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করেন।'

'গ্রেপ্তার তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ফেব্রিকস কারখানার ভেতরের ঢালাই ভেঙে নূর আলমের দ্বিখন্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের টুকরা ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার নিহত নূর আলমের জামাতা আতাউলস্নাহ খান সজীব বাদী হয়ে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।'

সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম জানান, মিরাজ ও তার দুই বন্ধু শিপন ও রিফাতকে আজ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত তাদের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে