খরস্রোতা তিস্তা। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জেগে উঠেছে চর। হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য। বর্ষা এলেই বন্যা আর ভাঙনের মুখে পড়েন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙন আর প্রবল স্রোতে ভেসে যায় তিস্তা পাড়ের মানুষের ফসলি জমি, বসতভিটাসহ সব স্থাপনা।
চারদিকে জেগে উঠেছে ধু-ধু বালুচর। মরতে বসেছে খরস্রোতা তিস্তা। নদীর আশেপাশের এলাকায় পানি নিচে নেমে গেছে। অকেজো হয়ে পড়াছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প, প্রকৃতিতে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। গ্রাস করেছে গ্রামের পর গ্রাম। কেড়েছে কৃষকের স্বপ্ন। কিন্তু মাস ঘুরতেই সেই সর্বনাশী তিস্তা এখন শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। পলি ভরাট হয়ে ধু ধু বালুচরের তিস্তা এখন হেঁটেই পার হওয়া যায়।
তিস্তা পাড়ের মানুষের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ছাপ। এমনিতেই তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাব থেকে বঞ্চিত এঅঞ্চলের মানুষ। শুকনো মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার হয়ে পড়ে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ।
অন্যদিকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে নদীপাড়ের মানুষ আন্দোলন- সংগ্রাম করে এলেও বিগত সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি উঠলেও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি।
কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান, কালু মিয়া সহ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তাঁরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, শুকনো মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। ফলে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে।
নদী বিষয়ক গবেষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, 'তিস্তা আন্তর্জাতিক একটি নদী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে খাল খনন করছে। এটা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ভারতের বৈরী আচরণের পরেও যদি সঠিক পরিচর্যা করা যায় তাহলে তিস্তায় প্রাণ ফেরানো সম্ভব।
জানা গেছে, ডালিয়ায় তিস্তা নদীর পানি সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর দুই দেশে এ প্রকল্প আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ অঞ্চলে প্রথম সম্ভাবনা যাচাই সমীক্ষা হয় ১৯৬০ সালে। দ্বিতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন ১৯৬৯-৭০ সময়ে সমাপ্ত হয়। পাকিস্তান আমলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি পরিকল্পনা স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে তিস্তা নদী। জেগে ওঠে অসংখ্য চর। বর্ষায় পানির ঢল নামায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এখন দাবি একটাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।