বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা

৬ বছর ধরে ঝুলে আছে কুমিলস্না-নোয়াখালী চার লেনে সড়ক উন্নীতকরণের কাজ

মো. আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কুমিলস্না
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
৬ বছর ধরে ঝুলে আছে কুমিলস্না-নোয়াখালী চার লেনে সড়ক উন্নীতকরণের কাজ
৬ বছর ধরে ঝুলে আছে কুমিলস্না-নোয়াখালী চার লেনে সড়ক উন্নীতকরণের কাজ

রাজনৈতিক প্রভাব, দখলদারদের মামলা, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় ছয় বছর ধরে ঝুলে আছে কুমিলস্না-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ। এতে যানজটের নিত্য ভোগান্তিতে লাকসাম, নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুরের যাত্রীরা। ৫৯ কিলোমিটার এ মহাসড়কের চার লেনের সুফল আটকে আছে মাত্র ৮ কিলোমিটারের জন্য। জটিলতা কাটিয়ে দ্রম্নত মহাসড়কের প্রকল্প শেষ করার দাবি যাত্রী ও চালকদের। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি অধিগ্রহণের অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্রম্নতই কাজ শুরু হবে।

জানা যায়, কুমিলস্নার দক্ষিণাঞ্চল, নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুরের বাসিন্দাদের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র পথ কুমিলস্না-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। ২০১৮ সালে ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কটির চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় দীর্ঘদিন শেষ হচ্ছে না কুমিলস্না-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ। এ পর্যন্ত তিন বার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। তবুও কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ! অথচ সড়কটির প্রায় ৯৭% শতাংশ কাজ শেষ হলেও ঝুলে রয়েছে লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার, শানিচোঁ ও লাকসাম বাজার কিছু অংশের কাজ। দীর্ঘ সময় ধরেও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির কবলে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।

1

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৬ সালে বাগমারা বাজার এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিয়ে আদালতে একটি রীট করা হয়েছে, যা জানতো না সড়ক বিভাগ! তাছাড়া লালমাই উপজেলার ১.৮ কি.মি. শানিচোঁ অংশে অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদারের বাড়ির পাশে ১.৬ কি. মি. এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে।

জানা যায়, মামলা সংক্রান্ত জটিলতা শেষ হয়েছে আরও আগে। তবুও অধিগ্রহণ জটিলতা যেন অদৃশ্য শক্তি কারণে আটকে আছে। এ ছাড়াও লাকসামে এপিপি'র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪.৫ কি.মি. সড়কে তৈরি হবে ওভারপাস। সেই ওভারপাস তৈরি হলে তার উপরে ফোর লেন নির্মাণ করা হবে বলে বহু আগেই জানিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ!

সরেজমিনে গিয়ে দেখে যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কটির ফোর লেনের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় বাগমারা বাজার অংশে যানজট বেড়েছে। বাগমারা বাজারের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক অটো-মিশুক চলাচল করায় এ সড়কে সবসময় যানজট লেগেই থাকছে। সিএনজি চালক আলমগীর হোসেন বলেন, 'আমি প্রতিদিন লাকসাম থেকে কুমিলস্না পর্যন্ত যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু বাগমারা বাজারে আসলে অনেক সময় দীর্ঘ ১ থেকে দেড় ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে হয়। যার কারণে নিয়মিতভাবে মালিকের ভাড়ার টাকাও দিতে কষ্ট হয়।' ট্রাকচালক জহির বলেন, 'ট্রাক ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন সময় নিমসার বাজার থেকে কাঁচামাল নিয়ে লাকসাম, নোয়াখালী যেতে হয়। তবে, বাগমারা বাজারের জ্যামের কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারি না। যার কারণে প্রতিনিয়ত আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে। লাকসাম পৌর এলাকার ধামৈচা থেকে ফয়েজগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এবং লাকসাম উপজেলার উত্তরদা ইউনিয়নের চন্দনা বাজার প্রায় আধা কিলোমিটার ফোর লেনের কাজ হয়নি।'

নোয়াখালীগামী বাস চালক মোস্তফা বলেন, ঢাকা থেকে লালমাই বাজার পৌঁছেছেন আড়াই ঘণ্টায়। কোথাও জ্যামে আটকাতে হয়নি। বাগমারা এসে আধাঘণ্টা ধরে দীর্ঘ জ্যামে আটকে থাকেন। প্রতিদিনই এই সড়কে গাড়ি চালান। জ্যামের কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে।

বাগমারা বাজার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কাজী ইকবাল হোসেন কাজল বলেন, 'চারলেন সড়ক বাস্তবায়ন না হওয়ায় পথচারী, যাত্রী, চালক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা ভূমি মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা দিতে প্রস্তুত। আমাদের অধিগ্রহণের নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং যতটুকু অধিগ্রহণ হবে সেখানে স্থাপনার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করেছে সড়ক বিভাগ। আমরা চাই জনদুর্ভোগ নিরসনে ন্যায্য মূল্য দিয়ে ভূমি অধিগ্রহণ করে দ্রম্নতই চারলেন প্রকল্পের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করা হোক।

কুমিলস্না সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে তা সঠিক, টাকাও চলে গিয়েছে। বিষয়টা সবাই জানে। আশা করছি ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকার আমাদের টাকা দেবে এবং আমরা কাজ শুরু করব।'

কুমিলস্না জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়ছার বলেন, 'মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, এখন ভূমি অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ফাইলটি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। টাকা প্রস্তুত করা আছে। অধিগ্রহণ শেষ করে রাস্তার কাজটি শেষ করতে পারব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে