বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চা বাগানে কমেছে উৎপাদন, ফের লোকসানের মুখে বাগান মালিকরা

মাধবপুর (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চা বাগানে কমেছে উৎপাদন, ফের লোকসানের মুখে বাগান মালিকরা
চা বাগানে কমেছে উৎপাদন, ফের লোকসানের মুখে বাগান মালিকরা

উৎপাদনের মৌসুমে দেশের অন্যতম ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসির) ১২টি বাগানে টাকার অভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি বেতন না দিতে পারায় গত আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ১২টি বাগান বন্ধ ছিল। এর প্রভাব পড়েছে দেশের জাতীয় চা উৎপাদনে। এ ছাড়া টাকার অভাবে সব বাগানে সময় মত সার দিয়ে পরিচর্যা না করতে পেরে গত বছরের চেয়ে উৎপাদন কমেছে। চা চাষের জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হওয়ায় চা উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটেছে।

চা বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, এ বছর দেশের ছোট বড় ১৬৯টি বাগানে ১০ কোটি ৮০ লাখ কেজি চা পাতা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৬ মাসে উৎপাদন হয়েছে ৭ কোটি ৬৬ লাখ। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। কারণ শেষের তিন মাসে চা বাগানে সবুজ চা পাতা তেমন সংগ্রহ করা যায় না। ২০২৩ সালে দেশের সব বাগান মিলে ১০ কোটি ২৯ লাখ চা পাতা তৈরি করা হয়েছিল। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ কোটি ১৩ লাখ চা পাতা উৎপাদন করা কথা। কিন্তু এটি সম্ভব নয়।কারন এই সময় চা বাগানে তেমন পাতা মেলে না।

1

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর চা বাগানের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম ফকির বলেন, 'এনটিসি ১২টি বাগান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় লক্ষমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আগস্ট থেকে নভেম্বর তিন মাস ১৫ হাজার শ্রমিক বাগানে কাজ থেকে বিরত ছিলেন। এখন উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব পড়েছে।'

বাংলাদেশ চা বাগান মালিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, '২০২৪ সালে দেশের চা বাগানগুলোতে অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেক চা বাগানের কারখানা দিনের পর দিন বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকের মজুরি দিতে না পারায় এনটিসির ১২টি বাগান তিন মাসের মত বন্ধ ছিল। টাকার অভাবে অনেক বাগান মালিক সময় মত প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে পারেনি। এ ছাড়া ২০২৪ সালে বৃষ্টি হয়েছে তুলনামূলক বেশি। কারণ সব মিলিয়ে গেল বছর চা বাগানে আশানুরূপ উৎপাদন হয়নি। সমস্যা লেগেই ছিল। এ বছর চায়ের উৎপাদন কম হওয়ায় চট্রগাম, শ্রীমঙ্গল ৩০ টি নিলাম বাজারে চা সরবরাহ কমেছে।'

তিনি আরও জানান, 'এ বছর নিলাম প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম ২১০ টা ৫৬ পয়সা। গত বছর ছিল ১৯২ টাকা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় চায়ের দাম এবার কিছুটা বেড়েছে। গত বছর এক কেজি চায়ের উৎপাদন খরচ ছিল ২২৬ টাকা। এ বছর চা সংশিষ্ট সব উপকরণের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছ। একদিকে চায়ের উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে বেড়েছে খরচ। তাই এ বছর বাগান মালিকদের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।'

চা বেচাকেনা মধ্যস্থতাকারি ন্যাশনাল ব্রোকার্সের সিনিয়র ম্যানেজার অনজন দেব বর্মণ জানান, নিলামে গত বছরের চেয়ে এ বছর চায়ের সরবরাহ কমেছে। তবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা সাড়ে ৯ কোটি কেজি চা পাতা। যে পরিমাণ চা পাতা বাগানে উৎপাদিত হবে দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। চট্রগাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ মিলে দেশে ছোট বড় ১৬৯ চা বাগানে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে