বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মধুমেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষ নদে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
  ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মধুমেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষ নদে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ
যশোরে কেশবপুরে মধুমেলা উপলক্ষে কপোতাক্ষ নদে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ চলছে -যাযাদি

সাগরদাঁড়ির মধুমেলাকে সামনে রেখে কপোতাক্ষ নদের উপর সাঁকো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়িতে নদের উপর ১৮০ ফুট দীর্ঘ সাঁকো নির্মাণ কাজে এলাকাবাসীও এগিয়ে এসেছেন। এ কাজে সহযোগিতাকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে মধুমেলা শুরুর আগেই নতুন সাঁকো দিয়ে নদের দুইপারের মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন।

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০১তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহ ব্যাপী মধুমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

1

সরেজমিন সাগরদাঁড়িতে গিয়ে দেখা যায়, যশোরের কেশবপুর ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ধানদিয়া ইউনিয়নের মানুষ সাঁকো নির্মাণের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি মেম্বার কাজী মনোয়ার আবু তাহের বলেন, মধুমেলাকে সামনে রেখে নদের উপর কেশবপুর উপজেলা প্রশাসন ও দুইপারের মানুষের সহযোগিতায় সাঁকো নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৩০০টি বাঁশ কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যে নদের মধ্যে এক পার থেকে অপর পার পর্যন্ত বাঁশ দিয়ে প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ। বাঁশের কাজ শেষ হলেই উপরে কাঁঠের কাজ করা হবে। নদের দুইপারে করা হেব ৮টি পিলারও। সাঁকো সমাপ্ত করতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে সাঁকো নির্মাণের জন্য ২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

গত ৪ মাস আগে বন্যার পানি বৃদ্ধি ও কচুরিপানার চাপে ওই স্থানের পুরনো সাঁকোটি ভেঙে যায়। সে থেকেই এখন পর্যন্ত নদের দুইপারের মানুষ ঝুঁকি নিয়েই নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। এখানকার সাঁকো দিয়ে কপোতাক্ষ নদের ওপারের সাতক্ষীরার শার্শা, সানতলা, কৃষ্ণনগর, পাঁচপাড়া, সেনেরগাতী, সরুলিয়া, ধানদিয়া, কুঠিরঘাটা এবং এ পারের যশোরের সাগরদাঁড়ি, কোমরপোল, চিংড়া, বগা, নেহালপুর, মহাদেবপুর, রেজাকাটিসহ প্রায় ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ ওই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে থাকেন। নদের ওপারের মানুষজন ব্যবসা-বাণিজ্য, বাজার, সওদাসহ সব কাজ সাগরদাঁড়ি বাজারে পরিচালনা করে আসছেন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কাজেদেখা দেয় স্থবিরতা। সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় দু'পারের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

জানা যায়, ২০১১ সালে সাগরদাঁড়ি বাজারের সঙ্গে কলারোয়া ও তালা উপজেলার মানুষের যাতায়াতের জন্যে সাগরদাঁড়ি বাজার কমিটির উদ্যোগে দু'পারের মানুষের কাছ থেকে বাঁশ ও অর্থ সংগ্রহ করে ১৮০ ফুট লম্বা একটি সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে নদের দু'পারের মানুষ ওই সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন।

প্রতিবছর সাগরদাঁড়িতে ২৫ জানুয়ারি থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত'র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ সময় কয়েক লাখ মানুষের ঢল নামে সাগরদাঁড়িতে। যার অধিকাংশ মানুষই যাতায়াতের জন্যে ওই সাঁকোটি ব্যবহার করে থাকেন। সাগরদাঁড়ির আলোকচিত্র শিল্পী মুফতি তাহেরুজ্জামান তাছু বলেন, চকুরিপানা বেঁধে সাগরদাঁড়ির কপোতাক্ষ নদের উপর সাঁকোটি সম্পূর্ণ ভে'ে স্রোতে বিলিন হয়ে যায়। যে কারণে নৌকায় করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যায় পড়তে হয়। সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক কারিগরি ও বাণিজ্য মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্যামল কুমার ঘোষ বলেন, সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় নদের ওপারের ছাত্র-ছাত্রীদের ঝুঁকি নিয়েই নৌকা পার হতে হচ্ছে। সাঁকোটি নির্মাণ কাজ শেষ হলেই ওপারের মানুষ সহজেই সাগরদাঁড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।

সাঁকো নির্মাণ কাজে সহযোগি সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি সাবেক ইউপি মেম্বার কাজী মনোয়ার আবু তাহের আরও বলেন, সাঁকো নির্মাণের জন্য ওপারের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও এগিয়ে এসেছেন।

ধানদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ সহজেই নদ পারাপারের জন্য সবসময় সাঁকো নির্মাণে সহযোগিতা করা হয়। এবার মধুমেলায় আগত দর্শনার্থীদের যাতে যাতায়াতে কোন প্রকার ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, তাই সাঁকোটি টেকসইভাবে করারও সহযোগিতাও করা হচ্ছে।

কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সাগরদাঁড়িতে নদের উপর সাঁকো নির্মাণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামী মধুমেলার আগেই সাঁকোর কাজ সমাপ্ত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে