চার জেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ৯ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। নীলফামারী, গাজীপুর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আলোচিত শ্রমিক লীগ নেতা এবং চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সভাপতিও গ্রেপ্তার হয়েছেন। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট-
স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী জানান, নীলফামারীতে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার মধ্যরাতে তাদের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- শহরের বাবুপাড়া এলাকার জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন ও জুম্মাপাড়া এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী ফরহাদ হোসেন।
নীলফামারী থানার ওসি মাহফুজুর রহমান সাঈদ জানান, সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক শামীম শাহ আলম তমুর গ্যারেজে অগ্নিসংযোগ ও হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাদের। নাজমুলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। শনিবার আদালতের মাধ্যমে গ্রেপ্তারদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোহানকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে কোনাবাড়ী থানাধীন আতাউর মার্কেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া সোহান গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানা এলাকার শামসুল হকের ছেলে এবং তিনি কোনাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। কোনাবাড়ী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কোনাবাড়ি এলাকায় সোহান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং-মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যরা পালিয়ে গেছে। শনিবার ছাত্রলীগের মিছিল বের করার কথা ছিল। ওসি আরও জানান, সোহানকে একটি রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হাতীবান্ধা (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি জানান, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লালমনিরহাট শহরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় 'হামার বাড়ি' ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ওই পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত শুক্রবার রাতে হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই পাঁচ ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে তাদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ৫ ছাত্রলীগ নেতা হলেন- হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিফুল বাবু, যুগ্ম আহবায়ক সাইদুল ইসলাম জীবন, সরকারি আলিমুদ্দিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিফাত হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা রুমন ও শাকিল চোপড়া।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি লালমনিরহাট শহরের মিশন মোড় এলাকায় বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয় 'হামার বাড়ি' নামে একটি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় হাতীবান্ধা উপজেলার ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহমুদ-নবী বলেন, লালমনিরহাট সদর থানায় বিএনপির পার্টি অফিস ভাঙচুর মামলায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সকালে তাদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, নান্দাইলে কলেজ ছাত্র মুরাদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিদেশে যাওয়ার চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ নেতা হামিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ৩১ মে ময়মনসিংহের নান্দাইলের চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বুকে উঠে উপর্যপুরি ছুরাঘাতে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় কলেজছাত্র মুরাদ হাসানকে (১৭)। এ ঘটনায় মোট ১১ জনকে অভিযুক্ত করে একটি হত্যা মামলা হয়। এক বছর সাত মাস পর কাতারে পাড়ি দেওয়ার জন্য বিমানে ওঠার আগেই হামিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে বিমানবন্দর থানা পুলিশের সহায়তায় নান্দাইল থানা পুলিশ এ অভিযান চালায়। পরে রাতে হামিমকে আনতে পুলিশের একটি দল ঢাকার শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে যায়।
অভিযুক্ত হামিম উপজেলার আলাবক্সপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। তিনি স্থানীয় শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। অন্য দিকে নিহত মুরাদ হচ্ছেন নান্দাইল পৌসভার কাকচর মহলস্নার তফাজ্জল হোসেনে ছেলে।
বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির আলোচিত ও সাবেক শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব হোসেনকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকালে পৌর এলাকার মাজম মিয়ার মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোতালেব উপজেলার সুবর্ণসাড়া দক্ষিন পাড়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে।
বেলকুচি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল বারিক জানান, মোতালেবের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার চরমপন্থী দলের সদস্য ফজলু হত্যাসহ মারধরের আরও দুটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পরেই তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর মোতালেবের সুবর্ণসাড়ার নিজ বাড়িতে বোমা তৈরি করার সময় বিস্ফোরণ হয়। এতে ফজলু হক নামের এক চরমপন্থি গুরুতর আহত হন। এরপর ঢাকায় চিকিৎসাধীন তার মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও মোতালেব এতোদিন গাঢাকা দিয়েছিলেন।
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাজিম উদ্দীন হায়দারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের ডাঙারচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দীন হায়দার কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের কুইদ্দারটেক এলাকার রশিদ আহমদ মাস্টারের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কর্ণফুলী থানার ওসি মুহাম্মদ শরীফ বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান নাজিম হায়দার। গ্রেপ্তারের পর তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।