কৃষকের উৎপাদিত সবজির ভালো দাম পেলেও চলতি ও বিগত মাসের কয়েক সপ্তাহ শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় অনেকটাই দাম কমে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে ক্রেতাদের মধ্যে। তবে হঠাৎ করে শীতকালীন সবজির দাম তলানিতে আসায় কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গিয়েছে।
সোমবার সকালে পাটকেলঘাটা কাঁচা বাজারে সরোজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতে শীতকালীন কাঁচা শাক ও সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও সম্প্রতি দাম তলানিতে এসেছে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য পরিবহণ খরচই উঠছে না তাদের। ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বস্তি মিললেও দিশাহারা কৃষক। সার তেল কীটনাশক বিদু্যতের মূল্য বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে অধিকাংশ কাঁচা শাক ও সবজির দাম কমলেও আলু, ও রসুনের দাম ক্রেতার নাগালে এখনও আসেনি।
সরেজমিনে তথ্য বলছে, কয়েকদিন আগেও পাটকেলঘাটা কপোতাক্ষ নদীর ধারে অবস্থিত কাঁচা সবজির বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হতো ৬০-৭০ টাকা, এখন ১৫-২০ টাকা। শসা বিক্রি হতো ৫০-৬০ টাকা, এখন ২৫-৩০ টাকা। করলা বিক্রি হতো ১২০-১৪০ টাকা। লালশাক এক আটি ৩০-৩৫ টাকা, এখন ৫-৭ টাকা। ধনে পাতা এক আটি ৩০ টাকা, এখন ৫-৭ টাকা। পেঁয়াজ আগে ছিলো ১৬০-১৮০ টাকা কেজি, এখন প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে নেমে এসেছে ১০০ টাকা কেজি দর। শিম বিক্রয় হয়েছে ১০০-১২০ টাকা কেজি এখন ১০-২০ টাকা কেজি।
কাঁচা মরিচ ৪০০- ৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, যা এখন ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাঁধাকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ১০ থেকে ১৫ টাকা। টমোটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা। ফুলকপি প্রতি পিস আকার ভিত্তিক ৭ থেকে ১০ টাকা। নতুন আলু প্রতি কেজি ৪০ টাকা তবে পুরাতন আলু ৮০-১০০ টাকা কেজি। রসুন প্রতি কেজি ২৪০-২৬০ টাকা। পোঁটল কেজি প্রতি -৩০ টাকা। পেঁয়াজের কালি ১০ টাকা আটি। ওলকপি ১০ টাকা কেজি। গাজর ৪০ টাকা কেজি। পালংশাক ৫ টাকা আটি। মানকচু ৬০ টাকা কেজি। এমন বাজার পরিস্থিতিতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হলেও কৃষকরা অসন্তোষ।
পাটকেলঘাটা কাঁচা বাজারে ক্রেতা রিপন হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক গাজী জানান, 'রীতিমতো সবজি খাওয়া ভুলেই গিয়েছিলাম অনেক বেশি দামের কারণে। এ রকম দাম পেলে আমাদের সবজির ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারব।' ভ্যানচালক আমিনুর রহমান জানান, 'সারাদিনে যা উপার্জন করি, তা চাল-ডাল কিনতেই শেষ হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সবজির দাম কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি।'
এদিকে পাটকেলঘাটা পাইকারি সবজি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক হাবিবুর রহমান, রেজাউল শেখ সবজির দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, শীতকালীন শাক সবজির দাম প্রথমে ঠিক থাকলেও এখন যে জায়গায় এসে দাড়িয়েছে তাতে কৃষক বাঁচবে না। দামের মধ্যে সামঞ্জস্য হওয়া উচিত ছিল! এরফলে আগামীতে কৃষক সবজি চাষে অনাগ্রহী হবে।
কয়েকজন কৃষক জানান, যেভাবে সবজির দাম কমে গেছে তাতে আমাদের পরিবহণ খরচ নিজের পকেট থেকেই দিতে হবে। সরকার একটা ব্যবস্থা না নিলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। নানাবিধ পরিস্থিতিতে সবজি উৎপাদনে খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি হয়েছে। এমতাবস্থায় বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে পথে বসতে হবে। শুধু কৃষকরাই ধাক্কা খায়নি। সেই সঙ্গে খুচরা বিক্রেতারাও ধাক্কা খেয়েছে অনেক বড়।
জেলা বাজার মনিটরিং কমিটি, ভোক্তা অধিকার সংগঠন ও কৃষক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা প্রয়োজন।