খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলা ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন। জলাবদ্ধ ডুমুরিয়া অঞ্চলের কৃষি ভুমি ও অসহায় মানুষকে বাঁচাতে সম্মুখসারির সফল যোদ্ধার নায়ক ছিলেন তিনি। জলাবদ্ধ কৃষি ভূমির পানি নিরসনে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেছেন। যার কারণে কৃষক বোরো চাষাবাদ করতে পারছেন। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সরাসরি জনগণের কাঁতারে। ভরা বর্ষা মৌসুমে জলবদ্ধতার কবলে পড়ে যখন ডুমুরিয়া অঞ্চলের শতশত গরীব-দুঃখি মানুষের কাঁচা ঘর-বাড়ি বিলিন হয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবায় ব্রত নিয়ে দিনরাত ছুটেছেন ইউএনও আল-আমিন। সরকারের ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি তিনি ব্যক্তি উদ্যোগেও ভানবাসীদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন বহুবার। সাধারণ মানুষের কাছে ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নে জন্মগ্রহন করেন তিনি। তার পিতা আমজাদ হোসাইন সরকার একজন জনতা ব্যাংকের অবঃপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মাতা জামসেদা বেগম গৃহিনী। চার ভাই বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার স্ত্রী সুমাইয়া কায়ছার খুলনা জেলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের একজন সদস্য। সুখি দাম্পত্য জীবনে মুহ্তাধীন মুত্তাকী রিয়াল (২০ মাস) নামে এক পুত্র সন্তানের জনক তিনি।
ইউএনও আল-আমিনের কর্মজীবন: পাবনা ক্যাডেট কলেজে ইংরেজি প্রভাষক ও নড়িয়া সরকারি কলেজে ৩৪তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে প্রভাষক এরপর ৩৫ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নড়াইল ও ফরিদপুর, সহকারী কমিশনার (ভুমি) হিসেবে ফরিদপুর ও গাজীপুর এরপর সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর সিনিয়র সহকারী কশিনার রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা হিসেবে খুলনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে পাইকগাছার পরে ২০২৪ সালে ২১ মার্চ ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সু-নামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
জানা গেছে, চারশত চুয়ান্ন পয়েন্ট তেইশ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা। জনসংখ্যার দিক দিয়ে জেলার মধ্যে ডুমুরিয়া সবচেয়ে বেশি। ৩লাখ ৫ হাজার ৬৭৫ জন জনপদের এই ডুমুরিয়া উপজেলায় অত্যান্ত বিচক্ষণের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ইউএনও আল-আমিন। মেধা-মননে একজন সুদক্ষ সরকারি প্রশাসনের ক্যাডার অফিসার হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি যথেষ্ট প্রশংসায় ভাসছেন। যৌতুক-বাল্যবিবাহ রোধ, বাজার মনিটরিং, গণশুনানীর মাধ্যমে স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ, অবৈধ ক্লিনিক ও ইটভাটা, পরিবেশ ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিন্তে একাধিক মোবাইল কোর্ট পারিচালনা, জাতীয় দিবসগুলো যথাযথ মর্যাদায় পালন, রাত জেগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমুলক কাজ করেছেন সমাজের এই স্বপ্নপুরুষ। ডুমুরিয়ায় যোগদানের পর বিশেষ করে দুটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জিংয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপস্নবের পর ৫ই আগস্টে অশান্ত ডুমুরিয়া এলাকায় সম্প্রীতি সুরক্ষা এবং পানি নিরসনের ব্যবস্থা করে জলাবদ্ধ ডুমুরিয়ার কৃষি জমিতে চাষযোগ্য করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটানো।
এ বিষয়ে গুটুদিয়া গ্রামের কৃষক শ্মশান মন্ডল বলেন, জমির উপর যেভাবে পানি উঠেছিলো ভাবতে পারেনি এবার বোরো চাষ করতে পারবো। ৭/৮ ফুট পানির নিচে ছিলো জমি। ধন্যবাদ জানাই উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ আমরা বোরো আবাদ করতে পারছি। বাদুরগাছা বিলের কৃষক ইন্দ্রজিত মলিস্নক জানান, তাদের বিল এলাকায় সকল জমিতে বোরো চাষাবাদ হচ্ছে। জমি না উঠলে না খেয়ে থাকতে হতো তাদের! গত দুইদিন হলো তিনি দুই বিঘা জমিতে বোরো রোপন শেষ করেছে। খুব ভালো লাগছে তার, কারণ বড় বিপদের মধ্যেও সময়মত ধান চাষাবাদ করতে পেরেছেন। তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ইউএনওসহ সকলকে যারা পানি নিষ্কাশনে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন।
প্রভাষক মুফতি আব্দুল কাইয়ুম জমাদ্দার বলেন, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপস্নবের পর দেশে ৫ আগস্টের উত্তাল ডুমুরিয়াবাসীকে শান্ত রেখে এবং ডুমুরিয়ার উন্নয়নে ইউএনও আল-আমিন নিজের আরামকে হারাম করে কাজ করেছেন। বিশেষ করে অতি বর্ষনে ডুমুরিয়া অঞ্চল যখন পস্নাবিত হয়ে পড়ে। তখন এই জনপদে বিশেষ করে তেলিখালী, মান্দারতলা, মির্জাপুর, কৈয়া এবং ষষ্ঠিতলা এলাকা কয়েকবার পরিদর্শন করেন এবং মানুষকে রক্ষা করতে নিরলস কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, জনগণকে নিয়েই আমাদের কাজ। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার বিপস্নবের পর ৫ আগস্টের পরে জনসাধারণের কাছে আমরা বেশি বেশি গিয়েছি এবং তাদেরকে বুঝ দিয়েছে যে, দেশের এই বিশেষ প্রেক্ষাপটে আমাদের সকলকে দায়িত্বশীল আচারণ করতে হবে। কেউ যেন আইন ভঙ্গ না করি, কেউ যেন কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা না করি। সেই ম্যাসেজ জনগনকে বারবার দিয়েছি। ডুমুরিয়ার শান্তি রক্ষায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলকে নিয়ে সুন্দর পরিবেশ এবং শান্তি রক্ষায় একসাথে কাজ করেছি। যার কারণে ডুমুরিয়াতে কোন ধরণের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেনি।
তিনি বলেন, সরকারি জিআর চালসহ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আমার বন্ধু মহল ও কর্পোরেট সেক্টরে যারা আছেন তারাও বানভাসীদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকাসহ দুরদুরান্ত থেকে যারা অসহায় মানুষকে বিপদের সময় সাহায্য করেছিলেন।