সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
জনদুর্ভোগ চরমে

লোহাগড়ায় মধুমতীর ভাঙ্গনে তিন গ্রামের প্রবেশের রাস্তা বিলীন

লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
লোহাগড়ায় মধুমতীর ভাঙ্গনে তিন গ্রামের প্রবেশের রাস্তা বিলীন
নড়াইলের লোহাগড়ায় মধুমতী নদীর ভাঙনে বিলীনের পথে কোটাকোল ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রবেশের রাস্তা -যাযাদি

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সর্বনাশা মধুমতী নদীর ভাঙনে কোটাকোল ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের প্রবেশের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামে প্রবেশের রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ ও দূর্দশা। তিনটি গ্রামে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ওই এলাকায় যেতে পারছেন না। তিনটি গ্রামের প্রবেশের রাস্তা না থাকায় এলাকাবাসী যারপরনাই দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন নতুন রাস্তা নির্মাণের দাবীতে নদী পাড়ে বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও সৃষ্ট সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। এতে করে, এলাকাবাসীর যে দুর্ভোগ-দূর্দশা তা রয়েই গেছে।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই সর্বগ্রাসী মধুমতী নদী তার রুদ্ররূপ ধারণ করে। মধুমতী নদী ভাঙনের করাল গ্রাসে উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের রায়পাশা, করগাতি ও তেলকাড়া গ্রামে প্রবেশের প্রায় ৪ কিলোমিটার মূল কাঁচা রাস্তা নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ওই তিনটি গ্রামে কমপক্ষে ১২ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা না থাকায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে অশেষ দুর্ভোগ। গ্রামে প্রবেশের রাস্তা না থাকায় সাধারণ মানুষের যেমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তেমনি ওই এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। রাস্তা না থাকায় সব থেকে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে ওই তিন গ্রামের অসুস্থ রোগীরা। রাস্তা না থাকায় কোনভাবেই অ্যাম্বুলেন্সসহ ইঞ্জিন চালিত কোন যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মধুমতি নদী পাড়ের কোটাকোল ইউনিয়নের অবস্থান। কোটাকোল ইউনিয়নটির অধিকাংশ গ্রাম ভাঙ্গন কবলিত। ফি বছর নদী ভাঙনে এ ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত পাঁকা সড়ক-রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর এবং ফসলি জমি যেমন বিলীন হয়েছে, তেমনি সর্বনাশা মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ বসতবাড়ি হারিয়ে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করছে বাধ্য হচ্ছেন।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মধুমতী নদীর তেড়কাড়া পয়েন্টে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করছে বালুখেকোরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব বালু খেকোরা ইজারাকৃত এলাকা থেকে বালি উত্তোলন না করে অপেক্ষাকৃত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙন পিছু ছাড়ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তেড়কাড়া পয়েন্টসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তলদেশে ভূকম্পনের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ভাঙন দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে।

তেলকাড়া গ্রামের রেজাউল শেখের ছেলে ভ্যানচালক ফারুক শেখ, করগাতি গ্রামের ওহাব খানের ছেলে নাসির খান, রায়পাশা গ্রামের হাসেম খানের ছেলে মসজিদের মুয়াজ্জিন মোশাররফ হোসেন, তেলকাড়া গ্রামের পটু মিয়ার ছেলে কৃষক দিদার মিয়া ও করগাতি গ্রামে ভিটেমাটি হারা হেমায়েত হোসেনের স্ত্রী পাচি বেগমসহ অনেকে বলেন, 'অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন ও মধুমতী নদী ভাঙনের ফলে আমাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এমনকি এখান থেকে উপজেলা এবং জেলা শহরে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। আমাদের কোন আত্মীয় স্বজন অসুস্থ হলে তাকে দ্রম্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে রোগীদের কাঁধে অথবা কোলে করে প্রায় চার কিলোমিটার পথ হেঁটে যেতে হয়।'

বিগত দিনে নদী ভাঙন রোধের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে স্থায়ী কোন বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। যখন ভাঙন শুরু হয়, তখন সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে তাদের দায়িত্ব শেষ করে। কিন্তু কিছুদিন পরে তা আবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। আর এভাবেই চলছে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ।

এ বিষয়ে নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া বলেন, নড়াইল জেলার পূর্ব সীমানায় মধুমতী নদীর ভাঙনকবলিত পয়েন্টগুলোয় ভাঙন রোধের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে