সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

বরেন্দ্রে আলুর বাম্পার ফলনের আশাতেও দামে চিন্তার ভাজ

আব্দুল বাতেন, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বরেন্দ্রে আলুর বাম্পার ফলনের আশাতেও দামে চিন্তার ভাজ
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন -যাযাদি

রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে আর ১৫ হতে ২০ দিনের মধ্যে উঠতে শুরু করবে আলু। জমিতে আলু পরিচর্যায় শেষ সময়ে ব্যস্ততা সময় পারছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় আশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।

গত কয়েক বছরে আলুর দামে লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। সাধারণ ভোক্তা আলু সর্বোচ্চ ৭০ হতে ৮০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছেন। এতে সাধারণ মানুষ আলুর দামে নাভিশ্বাস ফেললেও কৃষকদের মাঝে বেশ স্বস্থি দেখা গেছে। আলুর দাম আকাশ চুম্বি হওয়ায় মধ্যস্থভোগী ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে মোটা অংকে লাভবান হয়েছে। তুলনামূলকভাবে কৃষক এবারের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বেশি দামের আশায় আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে আলুর বর্তমান বাজার মূল্য নিম্নমূখী হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন কৃষকরা। জমি লীজ গ্রহণ হতে শুরু করে আলু আবাদে সারের ব্যবহার, কৃষকদের মজুরীসহ অন্যান্য খরচ বেশী হওয়ায় খরচ উঠানো নিয়ে দু:শ্চিতায় পড়েছে কৃষকরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে রাজশাহী জেলায় আলু চাষ হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে। আলুর দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবার কৃষকরা আবাদ বাড়িয়ে দেয়। এবারের ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার হেক্টর। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর।

বরেন্দ্র অঞ্চলের আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতিবিঘা আলুর উৎপাদন খরচ হচ্ছে ৭০ হতে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিবিঘা ফলন হয় ১০০ থেকে ১২০ মণ।

গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী এলাকার আলুচাষি সাইদুর রহমান জানান, 'আমরা দুইভাই মিলে এবার ৭০-৭৫ বিঘা আলু আবাদ করেছি। এবার জমিতে আলুর গাছ বেশ ভালো আছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর চাষে তেমন ব্যাঘাত ঘটেনি। যার ফলে আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।'

তিনি আরও বলেন, 'গতবার কোল্ড স্টোরে রেখে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। এবার আলুর ফলন বেশি, আবার খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন। সে তুলনায় খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০ হতে ২৫ টাকা। আমাদের আলু উঠতে আরও সময় লাগবে। ফলে আলুর দাম তেমন পাব না। দাম কি হবে সেটাও বলা মুশকিল। এ কারণে এবারের যে খরচ তা ওঠা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।'

চৈতন্যপুর এলাকার আলুচাষি শাহজাহান জানান, 'আমি গতবার ৪০ বিঘা আবাদ করেছিলাম এবার ৩০০ বিঘা জমিতে আবার করেছি। এবার আলুর যে দাম ও আবাদ খরচ তাতে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। গত বার ৪০ বিঘায় ১২ লাখ টাকা মতো লাভ হয়েছিলো আবার আলুর উৎপান খরচ ও দাম নিম্নমুখি হওয়ায় পথে বসতে হবে।'

উপজেলার ঈশ্বরীপুর বস্নকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার জানান, 'গতবারের চাইতে আমার বস্নকে আলুর আবাদ অনেক বেশি। দাম ভালো পাবার আশায় অনেকে বেশি করে আবাদ করেছেন। এবারের মৌসুমে আলুর আবাদে আবহাওয়া বেশ উপযোগী। তেমন কোনো রোগ বালাই দেখা যায়নি। তবে আলুর যা দাম তা নিয়ে হতাশায় আছেন কৃষকরা।'

রাজশাহী জেলার মধ্যে সবচাইতে আলু আবাদ হয় তানোর উপজেলায়। এবার ওই উপজেলায় আলু চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে। তানোর উপাজেলার কৃষকরা জানান, এবার আলু আবাদে খরচ বেশি। কোল্ড স্টোরে রেখে আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে এবার কোল্ড স্টোরের মালিকরা কেজি প্রতি খরচ ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করেছে বলে শুনেছি। অন্যদিকে এবার আলুর দাম নিম্নমুখি। ফলে এবার আমাদের প্রচুর লোকসান হবে।'

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, 'গতবছর আমার উপজেলায় আলু আবাদ হয়েছিল ১৯৮৫ হেক্টর জমিতে। এবার তা বেড়ে ২৩১৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর গাছ বেশ ভালো আছে। আলু চাষিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এবার আশা করা যায় আলুর বাম্পার ফলন হবে।'

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা জানান, গতবারের চাইতে আলু রাজশাহী অঞ্চলে এবার বেশি আবাদ হয়েছে। এবার আলুর আবাদ লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। এবার তা ছাড়িয়ে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করেছি। তাতে দেখা গেছে আবহাওয়া অনুকূলে খাকায় জমিতে আলুর গাছ ভালো আছে। রাজশাহী কৃষি অফিসের নির্দেশনায় উপজেলার কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সহযোগিতা করছেন। আশা করা যায় এবারও আলুর ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে