মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় মনু নদীর ওপর নির্মিত রাজাপুর সেতু দর্শনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। কুলাউড়া-পৃথিমপাশা-হাজীপুর-শরীফপুর সড়কের এই সেতুটির কাজ সাড়ে তিন বছর আগে শেষ হলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ হয়নি। কাজ না হওয়ায় তা মানুষের কোন কাজে আসছে না। কবে নাগাদ শেষ হবে সংযোগ সড়কের কাজ তাও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর মৌলভীবাজার ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে ২০১৮ সালে রাজাপুর সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পের অধীনে সড়কের ১৪তম কিলোমিটারে ২৩২ দশমিক ৯৪ মিটার পিসি গার্ডার সেতু, সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুধুমাত্র সেতুর নির্মাণকাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হয়। ২০২০ সালে কার্যাদেশ পাওয়া প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুর দু'পাশে সাড়ে ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় সিলেটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মো. জামিল ইকবাল।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতা থাকায় পর পর দুই দফায় কাজের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্তমানে রাজাপুর-চাতলাপুর সংযোগ সড়কের কাজে শরীফপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় শতাধিক লোক এখনও জমি অধিগ্রহণের টাকা পাননি। যার জন্য শরীফপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়ার নেতৃত্বে জমির মালিকরা টাকা না পাওয়ায় কাজে বাঁধা দিচ্ছেন বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়।
অন্যদিকে সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য বালু পরিবহণে বাঁধার অভিযোগ করে গত ৩ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এবং জেলা প্রশাসকের কাছে পৃথক অভিযোগ দেন সংযোগ সড়ক কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য লাল মিয়া জানান, ইউনিয়নের মনোহরপুর মৌজায় শতাধিক মানুষ এখনও জমি অধিগ্রহণের টাকা পায়নি। যাদের জমি সংযোগ সড়কে পড়েছে, তারাই কাজে বাঁধা দিচ্ছেন- এটা স্বাভাবিক বিষয়। তিনি কোনো কাজে বাঁধা দেননি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামিল ইকবালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাইফুল আহমদ জানান, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা ও বালু পরিবহনে বাধার কারণে কাজ বন্ধ আছে।
সওজ অধিদপ্তরের কুলাউড়া সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আক্কাছ আলী জানান, সংযোগ সড়কের কাজের জন্য পুরোপুরিভাবে জমি বুঝে না পাওয়ার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
সওজ বিভাগ মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়ছার হামিদ জানান, রাজাপুর সেতুর কাজ প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে শেষ হয়েছে। আর সংযোগ সড়কে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
ইউএনও মো. মহিউদ্দিন জানান, সংযোগ সড়কের কাজে স্থানীয় লোকদের বাধার খবর পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সওজ কর্মকর্তা চাতলাপুর এলাকায় গিয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।