দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সেচ প্রকল্পের নাম মেঘনা-ধনাগোধা সেচ প্রকল্প। যা চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়ন ১৩ হাজার ৬০২ হেক্টর জমি নিয়ে গঠিত। নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ এলাকায় সেচের পানি না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা।
এর আগে কৃষকরা পানি না পাওয়ায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। পরে হঠাৎ তড়িঘরি করে ২০ জানুয়ারি এই সেচ প্রকল্পের কালীপুর ও উদামদী পাম্প হাউজে পানি সেচের উদ্বোধন করে। উদ্বোধনের পর উদামদি পাম্প হাউজে ১০ মিনিট পানি উত্তোলন করলেও কালীপুর পাম্প হাউজে ১৩ সেকেন্ড পরই সুইচ বন্ধ করে দেয়।
এ নিয়ে আবারও পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৫ জানুয়ারি পানি দেওয়া শুরু করে। তবে সেচ প্রকল্পের ক্যানেল পরিস্কার ও কালভার্ট নির্মাণ করার কাজ চলমান থাকায় অধিকাংশ কৃষক এখনো কাঙ্ক্ষিত পানি পাননি।
এদিকে এখলাছপুর ও ডুবগী দুইটি বোস্টার পাম্পে আওতায় সেচ সুবিধা পায় কলাকান্দা, মোহনপুর, এখলাশপুর ও গজরা ইউনিয়নের বেশিরভাগ জমি।
সরজমিনে দেখা যায়, পাম্পের রিজার্ভে পানি আসছে। এই বোস্টর পাম্পগুলো ১-২ ঘণ্টা চালিয়ে বন্ধ করে দেয়।
সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ জমি বোরো চাষের আবাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন কৃষকরা। জমিতে পানি না পাওয়ায় চারা রোপণ করতে পারছেন না। সেচ প্রকল্পের বিভিন্ন ক্যানেলে এখনও সংস্কার কাজ চলছে। ক্যানেল বন্ধ করে চলছে কালভার্ট ও ব্রিজ নির্মাণ। তাই কিছু ক্যানেল এখনো পানি শূণ্য।
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানা যায়, এ উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯৮৪ হেক্টর ও উৎপাদন ৪৩ হাজার ১৪৬ মে.টন।
বীজতলা করার উপযুক্ত সময় ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিন। ৪০ দিনের চেয়ে বেশি চারার বয়স বাড়তে থাকলে ক্রমেই উৎপাদন কমতে থাকবে। অধিকাংশ কৃষকরা এখন পর্যন্ত সেচ সুবিধা না পাওয়া বোরো ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। তাই উৎপাদনে বিপর্যের আশঙ্কা রয়েছে।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, 'আমার এলাকায় ক্যানেলের কাজ হচ্ছে। পানির জন্য চারা রোপণ করতে পারছি না।' কলাকান্দা কলাকান্দা ইউনিয়নের কৃষক বোরহান উদ্দিন মোলস্না জানান, 'দশানী এলাকায় বেড়ি বাঁধের সঙ্গে ক্যানেলের কাজ চলছে।
কবে পানি পাব বলতে পারছি না।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, বোরো মৌসুমে সেচ ক্যানালে এখন পর্যন্ত পানি পাচ্ছেন না বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন। তাদের চারার বয়স বেশি হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ করতে না পারলে বোরো মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, 'সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে জানতে পেরেছি। আমি এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলব।'