নতুন বছরের দেড় মাস অতিবাহিত হয়েছে। এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের নতুন বই পায়নি। চাহিদার অর্ধেক বই এসেছে। বাকী অর্ধেক বই এখনও পাওয়ার বাকী। সব বিষয়ের নতুন বই না পাওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহবোধ করছে না। অভিভাবকরাও সন্তানদের বাসায় পড়ার জন্য তাগিত দিতে পারছেন না। সব বিষয়ের বই না পাওয়ায় পাঠ কার্যক্রম কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। সব ক্লাশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। খেলাধুলা ও ছুটাছুটিতে সময় পাড় করছে শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষকরা বলছেন, সকল বিষয়ের নতুন বই না পেলেও পাঠ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। নতুন ও পুরাতন বই মিলিয়ে চলছে পাঠ কার্যক্রম। তাছাড়া নেট থেকে পাঠ ডাউনলোড করে পাঠদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং কিন্ডার গার্টেন রয়েছে ১৩৫টি। এরমধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৪টি এবং কিন্ডার গার্টেন স্কুল ৮১টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণীর জন্য প্রায় ২ লক্ষ ৩৭ হাজার বই প্রয়োজন। অপরদিকে উপজেলায় ২২ স্কুল ও ৭টি মাদরাসার জন্য বই প্রয়োজন প্রায় ৩ লাখ।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়ায় প্রাক প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সকল বিষয়ের নতুন বই দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ এবং ৫ম শ্রেণীর মাত্র একটি বিষয়ের বই দেওয়া হয়েছে। বাকী বই কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির সকল বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়েছে। ৭ম শ্রেণির ৮টি বিষয়ের বই দেওয়া হয়েছে। বাকী রয়েছে ৬টি বিষয়ের বই। ৮ম শ্রেণির তিনটি মেইন বই দেওয়া হয়েছে। ১২টি বিষয়ের বই বাকী রয়েছে। ৯ম শ্রেণির ৮টি বিষয়ের সব বই এসেছে। তবে গ্রম্নপের বইগুলো এখনও বাকী রয়েছে। ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ের বই পেয়েছে।
অপরদিকে, মাদ্রাসায় ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণির কোন বই এখনও আসেনি। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ৪টি বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়েছে। ১০ শ্রেণির ৬টি বিষয়ের বই দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ের বই বাকী রয়েছে। মাধ্যমি ও মাদ্রাসায় চাহিদার অর্ধেকের বেশি বই এসেছে।
নাছরীন নবই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তোড়া বলে, 'আমি তিনটি বই পেয়েছি।' পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তায়েবা জানায়, সে শুধু ইংরেজি পেয়েছে। আর কোনো বই পায়নি। বই না পাওয়া পড়তে সমসস্যা হচ্ছে।
নাছরীন নবী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত বনিক বলেন, '৬ষ্ঠ এবং ১০ শ্রেণির সব বইই পেয়েছি। কয়েকটি ক্লাশের কিছু বই বাকী আছে। তবে, আমরা নতুন ও পুরাতন বই দিয়ে পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।'
৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আদির বাবা কাজী সুহেল খাদেম বলেন, 'আমার ছেলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। সে মাত্র ৩টি বই পেয়েছে। সব বিষয়ের বই না পাওয়ায় ঠিক মত ক্লাশ হচ্ছে না। বাড়িতেও পড়তে পারছে না।'
আখাউড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহ ইলিয়াছ উদ্দিন বলেন, 'দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দেশীয় ছাপাখানায় নতুন বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বইয়ের মান খুবই ভালো। আশা করছি শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।'
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার কফিল উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'আমরা চাহিদার অর্ধেকের বেশি বই পেয়েছি। এ মাসের শেষ নাগাদ অবশিষ্ট বইগুলো পাবো বলে আশা করছি।'