কুমিলস্নায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (আমেরিকা) নেওয়ার কথা বলে নেপাল নিয়ে জিম্মি করে তারেক আজিজি নামের এক যুবকের পরিবারের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আশেক এলাহী নামের এক জামায়াতের সমর্থকের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তারেকে আজিজ কুমিলস্নার মনোহরগঞ্জ উপজেলার মৈশাতুয়া ইউনিয়নের খানাতুয়া গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে। অভিযুক্ত আশেক এলাহী একই উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের মৃত ইছহাক মিয়ার ছেলে। তিনি জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক বলে জানা গেছে। আশেক এলাহী কুমিলস্না পশ্চিম অঞ্চলের ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি।
শনিবার দুপুরে কুমিলস্না নগরীর টমছমব্রিজ একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবারটি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী তারেক আজিজ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় তার বাবা কামাল হোসেন, চাচা জসীম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারেক আজিজ বলেন, 'ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা আশেক এলাহী ভুক্তভোগী তারেক আজিজদের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা। বিগত ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর আশেক এলাহী তারেক আজিজের বাবা কামাল হোসেনেকে বলেন তার ছেলে তারেক আজিজকে কম কষ্টে সহজ রুটে আমেরিকা নেওয়া হবে। বিনিময়ে ৪৫ লাখ টাকা দিতে হবে। আশেকে এলাহী আরও জানান, বৈধ পথে ঙহ অৎৎরাধষ ভিসায় নেপাল গিয়ে সেখান থেকে ইঋঝ এর মাধ্যমে ভিসা নিয়ে ব্রাজিল হয়ে মেক্সিকো বর্ডার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। আশেক এলাহী একজন রাজনীতিবিদ হওয়ায় তারেকের বাবা তার ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাতে রাজি হয়ে যান। পরে আশেক এলাহী তারেক আজিজ ও তার পরিবারকে ঢাকার ফার্মগেট এলাকার টুরিজম এইড লিমিটেড নামের একটি এজেন্সিতে নিয়ে যান। সেখানে চুক্তি হয় ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রথমে ২ লাখ টাকাসহ পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে জমা নেন।
চুক্তি অনুযায়ী গত ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর তারেককে নেপাল পাঠানো হয়। সেখানে একটি গোডাউনে আটকে রেখে তারেকের মোবাইল ফোন, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেয় আশেক এলাহীর ভাড়া করা লোকজন। পরে তারেকের অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে 'তারেক মেক্সিকো অবস্থান করছে' বলে তার বাবার হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস রেকর্ড পাঠাতে বাধ্য করে। তার বাবা চুক্তির বাকি ৪৩ লাখ টাকার মধ্যে ৪০লাখ টাকা মধ্যস্থতাকারী রেজাউল করিম রতনের অ্যাকাউন্টে এবং নগদ ৩ লাখ টাকাসহ মোট ৪৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পর, চক্রটি তারেকের চোখমুখ বেঁধে গাড়িতে করে কাঠমুন্ডুর একটি রাস্তায় ফেলে চলে যায়। পরে ঘটনার কথা তারেক তার বাবাকে ফোন করে বিস্তারিত জানান।
পরে নেপাল পুলিশের সহযোগিতায় আউট পাসের মাধ্যমে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফেরত আসেন তারেক। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সহায়তায় কয়েক দফায় সালিশ বৈঠক বসে। সালিশে শিবিরের সাবেক নেতা আশেক এলাহী ভুক্তভোগী তারেকদের কাছ থেকে নেওয়া ৪৫ লাখ টাকা তারেকের ক্ষতিপূরণ ১লাখ টাকাসহ মোট ৪৬ টাকা পরিশোধ করবেন বলে স্ট্যাম্প দেন। সংবাদ সম্মেলনে তারেক অভিযোগ করে বলেন, স্ট্যাম্প দেওয়ার পরেও আশেক ১ টাকাও পরিশোধ না করে উল্টো হুমকি ধামকি দেন ভুক্তভোগী পরিবারটিকে। পরে ২০২৪ সালের ৯ মে ঢাকার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইবু্যনালে ৪জনকে আসামি করে মামলা করেন তারেক আজিজ। মামলার পর আসামি আশেক এলাহীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু অদ্যাবধি পুলিশ আশেক এলাহীকে গ্রেপ্তার করেনি।