প্রতিযোগিতামূলক বাজার পস্নাস্টিকের দখলে থাকায় বোতলজাত পানি, তেল, কোল্ড ড্রিংকস এবং বাসা-বাড়িতে ব্যবহার্য ঝুঁড়ি, বালতি, জগ ও মগসহ পস্নাস্টিকের সকল পণ্য ব্যবহার শেষে বা ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর মানুষ যত্রতত্র ফেলে রাখে! যা এক পর্যায়ে মাটিতে মিশে বা পানিতে পড়ে মাটিতে পুঁতে যায়! এতে করে মাটির উর্বরা হ্রাস ও পরিবেশ দূর্ষণ হয়! মাটির উর্বরা শক্তি আশংকাজনক হারে হ্রাস পায়! সময়ের বির্বতণে এখন ব্যবহার্য পস্নাস্টিক ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পর তা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করে রেমিট্যান্স আসছে দেশে।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় পস্নাস্টিক পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে রয়েছে একটি ফ্যাক্টরী। এখানে মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকার লেনদেনে কয়েকটি উপজেলার ্তুফেলনা্থ পস্নাস্টিক পণ্য হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুঁড়িয়ে আনছে ফেরিওয়ালারা। এতে একদিকে ফেলনা পস্নাস্টিক বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা ও মাটির হচ্ছে। উপজেলার মহামুনি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নিজস্ব জায়গায় 'বিসমিলস্নাহ পস্নাস্টিক ফ্যাক্টরী গড়ে তুলেছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম।
সরেজমিনে দেখা গেছে ২০-২২ জন শ্রমিক নানা প্রান্ত থেকে আসা ব্যবহার অনুপযোগী পস্নাস্টিক উপকরণ বোতলজাত পণ্য এবং বাসা-বাড়িতে ব্যবহার্য ঝুঁড়ি, বালতি, জগ, মগসহ পস্নাস্টিক বাছাই করে পৃথক করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিক। পরে পৃথক করা এসব পস্নাস্টিক পণ্যগুলো মেশিনে ফেলে গুঁড়ো (ছোট) করে তা পানিতে ফেলে পরিস্কারের পাশাপাশি সেখানেও আবার কালার (রং) অনুযায়ী আলাদা করে তা শুকিয়ে নেওয়া হচ্ছে! পরে তা বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী বস্তায় ভরে শহরমুখী বড় ফ্যাক্টরীতে সরবরাহ উপযোগী করতে স্টেক করছে শ্রমিকেরা।
এ সময় শ্রমিক মেমাচিং মারমা বলেন, 'আমরা নারী, দূরবর্তী জায়গায় গিয়ে কাজ করা কষ্ট। বাড়ির পাশে নিয়মিত কাজের পরিবেশ হয়েছে। এতে আমরা খুশি।' মো. ওবায়দুলস্নাহ বলেন, 'ইতোপূর্বে এসব এলাকার মানুষ জানত না, পস্নাস্টিক পণ্য ব্যবহার শেষে তা আবার বিক্রি করা যায়! না জানার ফলে মানুষ বাড়ির আশপাশে, হাটবারে যত্রতত্র খালি বোতল, পরিবারে ব্যবহার অনুপযোগী পস্নাস্টিক পণ্য যেখানে-সেখানে ফেলে রাখত! ফলে তা পানিতে, মাটিতে মিশে পরিবেশ দূষিত হতো! এখন আর তা হয় না।'
বিসমিলস্নাহ পস্নাস্টিক ফ্যাক্টরীর স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, 'কৃষিপ্রধান দেশে পস্নাস্টিক পণ্য ব্যবহার শেষে মাটি ও পানিতে মিশে মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাসের পাশাপাশি পানি ও পরিবেশ মারাক্তভাবে দূষণ করছে! কম সংক্ষক মানুষই এসব পণ্য নামমাত্রমূল্যে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করে। এতে তেমন পয়সা না আসায় মানুষ পস্নাস্টিক বর্জ্য সংরক্ষণ না করে পরিবেশ দূষণ করছেই! ফলে আমি ভাবলাম পরিবেশ সুরক্ষা ও মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাসরোধে হাতের নাগালে কিছু একটা করতে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রথমে ফেরিওয়ালা থেকে পস্নাস্টিক উপকরণ সংগ্রহ করে শহরে পাঠাতাম। এতে দেখা যায় কেরিং, টোল খরচ দিয়ে তেমন একটা লাভ হয় না। পরে এসব পণ্য এলাকায় প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন সংগ্রহ করে তা এখানেই গুঁড়ো করে শহরে সরবরাহ করি। এতে অন্তত ১০ গাড়ির মাল প্রক্রিয়াজাতে এক গাড়ি হয়! এতে কেরিং খরচ অনেক কমে যাওয়ায় তৃণমূল থেকে পস্নাস্টিক একটু বেশি দামে কিনতে পারি। মানুষজনও লাভবান হয়।'
তিনি আরও জানান, 'একজন ফেরিওয়ালা বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাদা পস্নাস্টিক বোতল ২০ টাকা এবং কালার বোতল বা পস্নাস্টিক ১৫ টাকা কেজিতে কিনে নিয়ে আসে। আমি তা গড়ে ৪০-৫০ টাকায় কিনি। প্রক্রিয়াজাত শেষে এসব পস্নাস্টিক শহরে নিয়ে ৭০-৭২ টাকায় বিক্রি করি। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে দেশে রেমিট্যান্স আসছে। অন্যদিকে ফেলনা পস্নাস্টিক উপকরণ বিক্রি করে মানুষ লাভবানের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা হচ্ছে।'
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান বলেন, 'পস্নাস্টিক পঁচেও না, গলেও না! ফলে তা মাটিতে দীর্ঘ সময় অক্ষত থাকায় উর্বরাশক্তি হ্রাস পায়। পস্নাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পর তা পুড়ে ফেললে অথবা পস্নাস্টিক ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করার ফলে তা প্রক্রিয়াজাতে এখন লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা ও মাটির উর্বরাশক্তি হ্রাসরোধ করা সম্ভব।'