বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নেছারাবাদে বাল্যবিয়ে রোধে কর্মশালা

তরিকুল ইসলাম
  ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
ফ্রেন্ডস ফোরাম নেছারাবাদের বন্ধুরা বাল্যবিয়ে রোধে শপথ নিচ্ছে

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের উদ্যোগে সুটিয়াকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও করণীয় বিষয়ক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে নেছারাবাদ উপজেলার ফ্রেন্ডস ফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপদেষ্টা তরিকুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, মো. কুদ্দুস কবির, মো. সেলিম, মো. মাইনুল ইসলাম রনি, মোসাম্মৎ নাজমুন নাহার, মোসাম্মৎ মাসুমা বেগম ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. খাইরুল ইসলাম তালুকদার ও যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোসাম্মৎ সানজিদা রহমান শুভ্রাসহ অন্য বন্ধুরা। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল ইসলাম মিন্টু। বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বাল্যবিয়েকে না এবং বাল্যবিয়ে সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বাল্যবিয়ের বিভিন্ন কুফল সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের অবহিত করেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। আর্থিক অভাবের কারণে অনেকে বোঝা কমানোর এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নত করার উপায় হিসেবে দেখা হয় বাল্যবিয়েকে। গরিব মানুষ কন্যাসন্তানকে তাদের পরিবারের বোঝা হিসেবে দেখে থাকেন। এসব শ্রেণির মানুষ বাল্যবিয়েকে মেয়েদের সতীত্ব রক্ষার উপায় হিসেবে দেখে থাকেন এবং তাদের স্বাধীনতা ও চলাফেরা সীমিত করা হয়। শিক্ষার অভাব এবং বাল্যবিয়ের নেতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাব নিয়ে আলোকপাত করা হয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম মিন্টু বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে বাল্যবিয়ের কুফল নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে জনসচেতনতা তৈরির জন্য আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিয়ের কাজীদের ও মাওলানা সাহেবদের জরুরি তাগিদ দেওয়া হয় উনারা যেন বিয়ে পড়ানোর সময় বয়স নির্ণয়ে সতর্ক থাকেন।

গ্রামাঞ্চলের অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামগ্রিক সুস্থতার ওপর বাল্যবিয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে অবগত নয়। বাল্যবিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের এবং তাদের পরিবারের জীবনে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়া মেয়েদের মৃতু্যঝুঁকি বেশি থাকে, সেইসঙ্গে গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সঙ্গে সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি থাকে। তারা তাদের স্বামীর কাছ থেকে শারীরিক ও যৌন সহিংসতারও শিকার হন। যেসব মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তাদের প্রায় সবাইকেই স্কুল ছেড়ে দিতে হয়, যা তাদের শিক্ষা এবং ব্যক্তিগতভাবে সামাজিক বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এটি দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের চক্রকে স্থায়ী করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। যেসব মেয়ের অল্প বয়সে বিয়ে হয়, তাদের প্রায়ই সীমিত সামাজিক সমর্থন থাকে এবং তারা তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। কাজেই বাল্যবিয়ে যাতে না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। ফ্রেন্ডস ফোরামের বন্ধুরা আরও বেশি বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কাজ করবে বলে আলোচনা সভা মূলতবি করেন।

উপদেষ্টা, ফ্রেন্ডস ফোরাম নেছারাবাদ, পিরোজপুর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে