বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বামীর কাছে বদলির রাস্তা খুলল প্রাথমিকের নারী শিক্ষকদের

যাযাদি রিপোটর্
  ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
স্বামীর কাছে বদলির রাস্তা খুলল প্রাথমিকের নারী শিক্ষকদের

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি নীতিমালা-২০১৮ জারি করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকটি পরিবতর্ন আনা হয়েছে। মফস্বল থেকে ঢাকায় বদলি হওয়ার বন্ধ দরজা খুলে গেছে।

আগে স্বামীর নিজ জেলায় নারী শিক্ষকরা বদলি হতে পারলেও স্বামীর কমর্স্থল এলাকায় বদলি হতে অনেক জটিলতা পোহাতে হতো, যা ছিল অনেকটা দুঃসাধ্য কাজ। এই পরিবতের্নর ফলে মানবিক কারণসহ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে যেকোনো সময় শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারবেন। ফলে স্বামীর কমর্স্থলের সঙ্গেই থাকতে পারবেন প্রাথমিক স্কুলের নারী শিক্ষকরা।

1

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত গত ৩০ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নিদেির্শকা-২০১৮ জারি করা হয়। এতে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

নতুন বদলি নীতিমালায় দেখা গেছে, চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষকদের বিয়ে হলে স্বামীর কমর্স্থলের পাশ্বর্বতীর্ স্কুলে বদলি হতে পারবেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের স্থায়ী ঠিকানার পাশ্বর্বতীর্ এলাকার স্কুলে বদলি করা যাবে।

স্বামী মারা গেলে বা বড় কোনো দুঘর্টনা ঘটলে সুবিধামতো স্থানসহ বিশেষ কোনো কারণে বছরের যেকোনো সময় বদলি হওয়া যাবে। দুগর্ম এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চাকরির মেয়াদ দুই বছর পর নিজ এলাকায় বদলি হতে পারবেন।

এসব বদলির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালকের সুপারিশ প্রয়োজন হবে। জাতীয়করণ অনেক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা প্রেষণে নিজ জেলায় পঁাচ বছর পর বদলি হতে পারবেন।

তবে সাধারণ বদলির ক্ষেত্রে বছরের জানুয়ারি থেকে মাচর্ পযর্ন্ত আবেদনের সময় নিধাির্রত রয়েছে।

বলা হয়েছে, শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন ও উপজেলাকে একক ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পৌরসভা-সংশ্লিষ্ট উপজেলা একক ইউনিট হিসেবে বিবেচিত হবে। সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম দুই বছর পূণর্ হলে এবং পদ শূন্য থাকলে আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃসিটি করপোরেশন, আন্তঃজেলা ও আন্তঃবিভাগে বদলি করা যাবে। তবে উক্ত সময়সীমার মধ্যে একই উপজেলা/থানায় পদ শূন্য হলে বদলি করা/হওয়া যাবে। বদলির পর তিন বছর পূণর্ না হওয়া পযর্ন্ত পুনরায় বদলি করা যাবে না।

মন্ত্রণালয় কমর্কতার্রা জানান, গত বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিটি করপোরেশন এলাকায় শিক্ষক বদলি কাযর্ক্রম স্থগিত থাকলেও নতুন বদলি নীতিমালায় সেটি বাতিল করা হয়েছে।

ফলে এখন থেকে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষকরা ঢাকা মহানগরের যেকোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ কারণে যেকোনো সময় বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রদানকারী কতৃর্পক্ষ সুপারিশ করলে বছরের যেকোনো সময় বদলি হতে পারবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাধারণ, বৈবাহিক, প্রশাসনিক, সমন্বয়, সংযুক্তি ও বিবিধ বদলির করার কথা বলা হয়েছে।

বদলি-সংক্রান্ত কাযর্ক্রম প্রতিবছরের জানুয়ারি থেকে মাচর্ পযার্ন্ত করা হবে। শিক্ষকরা নিয়োগের পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এ ক্ষেত্রে বিবাহের কাবিননামা, প্রত্যয়নপত্র, সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ওয়াডর্ কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র, স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার জমির দলিল, খতিয়ান, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর (সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য) এবং ভ‚মি উন্নয়ন কর পরিশোদের রশিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

তবে একই পদে একাধিক আবেদনকারী হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির জন্য বিবেচনা করা হবে। স্বামীর কমর্স্থল, স্থায়ী ঠিকানায় যেখানেই হোক নারী শিক্ষকরা সেই স্থানে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নীতিমালা জারি করা হয়েছে।

এতে কিছুটা পরিবতর্ন আনা হয়েছে। বিশেষ কারণে যেকোনো সময় বদলির জন্য আবেদন করার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরে বদলি হওয়ার রাস্তা খুলে দেয়া হয়েছে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষকদের বদলির জন্য যোগ্য বলে গণ্য করা হবে।

তিনি বলেন, অধিকাংশ শিক্ষকের লক্ষ্য ঢাকা মহানগরের মধ্যে বদলি হওয়া, তাই ২০০ খালি আসনে প্রায় ২০ হাজার আবেদন জমা হয়ে আছে।

এ কারণে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ঢাকায় শিক্ষক বদলি করা হবে। এই নিদের্শনা জারির পর পূবের্র জারিকৃত শিক্ষক বদলি-সংক্রান্ত নিদেির্শকা, প্রজ্ঞাপন ও আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। আগামী জানুয়ারি থেকে বদলি আবেদন গ্রহণ শুরু হবে বলেও তিনি জানান।

বদলি নিদেির্শকায় বলা হয়েছে, নদী ভাঙন বা প্রাকৃতিক দুযোের্গর কারণে শিক্ষকের বসতভিটা বিলীন হলে, প্রশাসনিক প্রয়োজনে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রে একই উপজেলায় কোনো বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষাথীর্র সংখ্যা অনুপাত শিক্ষকদের সুষম বন্টন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে বদলি করা যাবে। এসব নিদের্শনা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান পাবর্ত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে। তবে এর আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার উপযোগী নিদেির্শকা প্রণয়ন করতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ডিপিই, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে থানা শিক্ষা অফিসারদের সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বদলি করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে