বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

কুমিলস্নায় আ'লীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না ও তিতাস প্রতিনিধি
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
কুমিলস্নায় আ'লীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত

কুমিলস্নায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষে মো. নিজাম সরকার (৪০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ নেতাকর্মী। জেলার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চালিভাঙ্গা গ্রামে সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নিজাম সরকার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। তিনি স্থানীয় নলচর গ্রামের মো. আব্বাসের ছেলে এবং চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবিরের ছোট ভাই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিলস্না-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনের সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরীর অনুসারী জেলা পরিষদ সদস্য (মেঘনা উপজেলা) আবদুল কাইয়ুম গ্রম্নপের সঙ্গে মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির ও তার ছোট ভাই নিজাম সরকার গ্রম্নপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছিল। এরই সূত্র ধরে সোমবার সকালে কাইয়ুম গ্রম্নপ এবং হুমায়ুন চেয়ারম্যান ও তার ছোট ভাই নিজাম সরকার গ্রম্নপের মধ্যে চালিভাঙ্গা, নলচর, ফরাজীকান্দি গ্রামে কয়েক দফা সংঘর্ষ, দফায় দফায় গুলি বিনিময় ও টেঁটা দিয়ে আঘাত-পাল্টা আঘাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের বেশির ভাগকেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আহত নিজাম সরকারের মৃতু্য হয়।

স্থানীয়রা জানায়, আহতদের বেশির ভাগ টেঁটাবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়াও এর মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ রয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন- টিটু সরকার (২৯), রমজান হোসেন (৩৪), ইব্রাহীম (২৭), শাকিল আহমেদ (২১), খালেদ হাসান (১৮), দেলোয়ার (৩০), আনিছ সরকার (২৪), সুমন আহমেদ (২২), হানিফ (৪৫) ও ওয়াসিম (৩৫)। অপর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, কুমিলস্নার মেঘনা উপজেলাটি কুমিলস্না-১ আসনের যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি এ উপজেলাটি কুমিলস্না-২ সংসদীয় আসনের অধীন যুক্ত হয়েছে। এর পর থেকে কুমিলস্না-২ আসনের মেঘনা এলাকায় এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর পক্ষে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা চালান জেলা পরিষদ সদস্য মো. আবদুল কাইয়ুম। তবে মেঘনার চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও তার ভাই নিজাম সরকার মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলমের অনুসারী। উভয় পক্ষের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে কাইয়ুম ও হুমায়ুন পক্ষ। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

নিহতের স্ত্রী সালমা আক্তার ও ভাই মো. সানাউলস্নাহ সরকার জানান, 'সকালে চালিভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ বাধে। খবর শুনে বাড়ি থেকে ঘটনাস্থলে যান নিজাম। সেখানে যাওয়ার পর তাকে টেঁটাবিদ্ধ করে প্রতিপক্ষ। নিজাম ছাড়াও বেশ কয়েকজন আহত হন। তাদের সবাইকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক নিজামকে মৃত ঘোষণা করেন।'

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, 'মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। আহতরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। তাদের কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।'

মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চালিভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, 'কাইয়ুম ও তার লোকজন আমার ভাই নিজাম সরকারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।'

এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, 'চেয়ারম্যান হুমায়ুনের লোকজন নিজেরা মারামারি করে আমাদের ওপর দায় দিচ্ছে। এতে আমাদের লোকজন আহত হয়েছেন।'

মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, 'আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় হুমায়ুন চেয়ারম্যানের ছোট ভাই নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে