শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সংবাদ সম্মেলন ১০ মাসে ৬৯৫ নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের নেতারা। তারা জানান, চলতি বছরের ১০ মাসে (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) সারা দেশে ৬৯৫ জন নারী ও কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে নারী ৫০২ জন এবং কন্যাশিশু ১৯৩ জন। এ সময়ের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ৫৯০ জন, যাদের মধ্যে ৩৪৭ জন নারী এবং ২৪৩ জন কন্যাশিশু। এছাড়া পারিবারিক সহিংসতার শিকার ১৭৯ জন নারী ও ২০ কন্যাশিশু। পাচার ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩২ নারী ও ১৩৬ কন্যাশিশু। বিদ্যমান এ বাস্তবতায় নারী ও শিশুর সুরক্ষার জন্যই এটি জরুরি।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২৩ উপলক্ষে এডুকো (এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) বাংলাদেশের সহযোগিতায় এক সংবাদ সম্মেলনে নারী নির্যাতনের এসব তথ্য তুলে ধরে সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পাশাপাশি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের দাবি জানায় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এডুকো বাংলাদেশের সহায়তায় ৭০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং ২৮টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে

তথ্য সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।

উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০২২ জন। এদের মধ্যে ৩৬২ জন নারী ও ৬৬০ জন কন্যাশিশু। একইসঙ্গে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল আরও ৫৩ জন নারী ও ১৩৬ কন্যাশিশুকে। ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩ জন নারী ও ৩৪ জন কন্যাশিশু। এছাড়া যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন মোট ৩৫২ জন। যার মধ্যে ৯৬ জন নারী ও ২৫৬ জন কন্যাশিশু।

ফোরামের সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি মূল প্রবন্ধে বলেন, 'স্বাধীনতার ৫২ বছরে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে কাঙ্ক্ষিত অর্জন নিশ্চিত হয়নি। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হচ্ছে, আমাদের নারী ও কন্যাশিশুদের এখনো বঞ্চনা-বৈষম্য এবং নিপীড়নের থেকে মুক্তি ঘটেনি। বরং তাদের প্রতি সহিংসতা যেন ক্রমাগত বাড়ছে। পরিবারে, সামাজিক পরিসরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যানবাহনে- কোথাও এ দেশের নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপদ নয়। নারীর ও কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতার একটি বড় অংশ হচ্ছে যৌন হয়রানি।'

তিনি বলেন, 'আমাদের যতগুলো মামলা এখন পর্যন্ত হয়েছে তার কোনোটারই পরিপূর্ণ বিচার হয়নি। সুতরাং বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটা একটা বড় কারণ। যদি আমরা সঠিকভাবে বিচারগুলো করতে পারতাম এবং দৃষ্টান্ত সহকারে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারতাম তাহলে নারীর প্রতি এই নির্যাতন অনেকটাই কমে আসত।'

নাছিমা আক্তার জলি বলেন, '২০২৪ সালের শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরকম একটি প্রেক্ষাপটে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম মনে করে, সংসদ নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের কাছে নারী ও কন্যাশিশুদের সমস্যার ব্যাপকতা তুলে ধরা প্রয়োজন। যাতে দলগুলো তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহারে নারী ও কন্যাশিশুদের কল্যাণে প্রয়োজনীয় প্রতিশ্রম্নতি ও পদক্ষেপ তুলে ধরে এবং বিজয়ী দল সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।

ফোরামের সহ-সম্পাদক ওয়াহিদা বানু বলেন, 'আমাদের দেশে নারী ও শিশু উন্নয়ন নিয়ে যে কয়টা নীতিমালা আছে অন্য কোনো দেশে কিন্তু এত নেই। এগুলো যদি সঠিকভাবে পালিত হতো তাহলে কিন্তু আমাদের এতকিছু করা লাগত না। আমাদের ৪৩ লাখ মামলা জট বেঁধে আছে। এর মধ্যে ১১ লাখ শিশুদের মামলা। এই জটগুলো খুলবে কে? এটা কিন্তু সরকারকেই করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো কিন্তু এই নির্যাতন বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে।'

চাইল্ড রাইটস স্পেশাইজড অ্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট টনি মাইকেল গোমেজের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহসভাপতি শাহীন আক্তার ডলি, এডুকো বাংলাদেশের ডিরেক্টর অফ প্রোগ্রামস ফারজানা খান ও গুডনেইবারস বাংলাদেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রধান রাজিয়া সুলতানা প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে