রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আগ্রহ বাড়ছে কালজয়ী বইয়ে

১৯তম দিনে এসেছে ১১৫টি বই নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ আরও ৭ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি
বীরেন মুখার্জী
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
অমর একুশে বইমেলায় সোমবার বড়দের পাশাপাশি ক্ষুদে বইপ্রেমীদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয় -যাযাদি

আগামীকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, মহান ২১শে ফেব্রম্নয়ারি। বইমেলার ১৯তম দিন সোমবার মেলায় দেখা গেল সেই আবহ। রোববারের মতো সোমবারও বিকাল ৩টায় মেলার দুয়ার খোলার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বইপ্রেমীদের সমাগম। এদিন মেলায় বেশিরভাগ পাঠক খোঁজ করেছেন চিরায়ত বইয়ের। মেলার শেষে ভালো বই প্রকাশ করা হবে, এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। তবে বিক্রেতারা বলছেন, পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগের তুলনায় বেড়েছে বিক্রি। এতে খুশি প্রকাশক ও বিক্রেতারা। এদিকে নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে আরও ৭ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটি। মেলায় গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রোববার এ চিঠি দেওয়া হয়। এ নিয়ে এবারের বইমেলায় ১৯ প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, "বইমেলার নীতিমালায় বলা আছে, 'বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকগণ গাইড ও গাইড জাতীয় এবং পাইরেটকৃত বই সংরক্ষণ, প্রদর্শন বা বিক্রয় করিতে পারিবেন না।' কিন্তু টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা দেখেছেন সতর্ক করা স্টলগুলো আইএসবিএন ছাড়া বই, পাইরেটেড বই এবং অন্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হওয়া বই রেখেছে। 'এই ধরনের কোনো বই কোনো স্টলে পাওয়া গেলে উক্ত স্টল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে এবং ওই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে উক্ত বৎসর এবং পরবর্তী এক বৎসরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা হইবে।' তবে নতুন করে সতর্ক করা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। বইমেলা শেষের পর সভায় বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" নতুন করে চিঠি দেওয়া সাত প্রতিষ্ঠান হলো- দোয়েল প্রকাশনী, ছোটদের জ্ঞান-বিজ্ঞান একাডেমি, প্রিয় প্রকাশ, গোল্ডেন বুকস, সাত ভাই চম্পা, ডাংগুলি ও লাইট অফ হোপ। এ ছাড়া আগে ১২ প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করে মেলা কমিটি। সেগুলো হচ্ছে- গাজী প্রকাশন, বঙ্গজ প্রকাশন, কুঁড়েঘর প্রকাশনী, তৃপ্তি প্রকাশ কুটির, বাতিঘর প্রকাশনী, রাবেয়া বুকস, সম্প্রীতি প্রকাশ, মাইক্রোটেক পাবলিকেশন্স, মাহী প্রকাশনী, বাংলাদেশ পাবলিশার্স, সুপ্ত পাবলিকেশন্স ও কিংবদন্তি পাবলিকেশন। এসব প্রতিষ্ঠান শোকজের জবাব দিয়েছে বলেও জানান মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'পাইরেটেড বইয়ের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স থাকা উচিত। নীতিমালা লঙ্ঘনের প্রমাণ থাকলে তা নিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির কঠোর হওয়া উচিত।' চিরায়ত বইয়ের খোঁজে পাঠক :বইমেলার এখনো ১০ দিন বাকি। মেলায় প্রতিদিন নতুন বই প্রকাশিত হলেও এখনো প্রকাশের অপেক্ষায় অনেক বই। তবে বইমেলা প্রাঙ্গণে এসে একদল পাঠক তাদের পছন্দের লেখকদের নতুন বই খুঁজে না পেয়ে যারপরনাই অবাক হয়েছেন। সোমবার অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে নৈঋতা ক্যাফে স্টলে বই দেখছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুমন হোসেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, 'এ যেন বইমেলার একটা নিয়ম হয়ে গেছে, সব ভালো বই প্রকাশ হবে মেলার শেষভাগে। তখন ভিড়ের ঠেলায় মেলা প্রাঙ্গণে ঢোকাই মুশকিল হয়। একটা নতুন বই নেড়েচেড়ে, একটু দেখেশুনে কিনব তার উপায় নেই। বাসায় ভাইবোনদের জন্য আমি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা কিনতে এসেছি।' ব্রেইল বইয়ের খোঁজে দৃষ্টিহীন পাঠক :বইমেলার মাধ্যমে পাঠক-লেখকদের সম্পর্কের সেতুবন্ধ তৈরি হয়। নতুন বইয়ের খোঁজে পাঠক ছুটে আসেন মেলায়। আর যারা দৃষ্টিশক্তিহীন, পড়াশোনা করে তারা দৃষ্টিকে জয় করেছেন। তাদেরও আগ্রহ রয়েছে নতুন বই পড়ার। কিন্তু তাদের চাহিদামতো কোনো আয়োজন নেই মেলায়। এবারের বইমেলায় মোট অংশগ্রহণ করছে ৬৩৫টি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বই পড়তে আগ্রহী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পাঠকদের জন্য রয়েছে একটি মাত্র স্টল। বাংলা একাডেমির বইমেলার প্রাঙ্গণের বাহির গেট-সংলগ্ন হাতের ডানপাশে রয়েছে 'স্পর্শ'র স্টল। কিন্তু দৃষ্টিহীন পাঠকরা বলছেন, প্রতি স্টলে অন্তত একটি ব্রেইল বই থাকা উচিত তাদের জন্য। স্টলের তত্ত্বাধায়ক নন্দিতা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা অনেক ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্রেইল আকারে সেসব বই প্রকাশ করা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের কারণে অনেক প্রকাশনা অনুমতি দেয় না। যে কারণে অনেক ভালো ভালো বই পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।' সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৫টি। এ ছাড়া বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : হাসান আজিজুল হক' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মোজাফ্‌ফর হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন ফারুক মঈনউদ্দীন এবং মহীবুল আজিজ। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। প্রাবন্ধিক বলেন, 'হাসান আজিজুল হক আখ্যানপ্রধান কথাসাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত গল্পের ধারাকে তিনি আরও সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারিত করেছেন। এই বঙ্গে গণমানুষ ও প্রান্তিক মানুষ, দাঙ্গা, খরা, দুর্ভিক্ষ, ক্ষুধা, মুক্তিযুদ্ধ, রাঁঢ়বঙ্গের প্রকৃতি এসবই তার ছোটগল্পে চিত্রিত হয়েছে।' আলোচকরা বলেন, 'বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম প্রধান লেখক হাসান আজিজুল হক তার রচনায় রাঁঢ়বঙ্গের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন। মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ ঘেরা ছিল বাস্তবতার কঠিন আবরণে। তার একাধিক গল্পে শিশুকিশোর চরিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে, যেখানে তাদের মনোজগৎকে নানা মাত্রিকতায় আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন তিনি।' সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, 'বাংলা সাহিত্যের ছোটগল্পের বরপুত্র হাসান আজিজুল হক গল্প-উপন্যাস ছাড়াও গভীর পর্যালোচনা ও প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তার সাহিত্যের অনালোচিত দিকগুলোর ওপর আলোকপাত করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।' লেখক বলছি সোমবার লেখক বলছি- অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক অসীম হিমেল, কবি গাজী রফিক, রম্যলেখক সত্যজিৎ বিশ্বাস এবং গবেষক জিয়াউল হক। রিকশাচিত্র প্রদর্শন বই সংলাপ মঞ্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সদ্যপ্রকাশিত কবিতা সংকলন 'মুজিবমঞ্জুষা' নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন বইয়ের প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনিসহ বিশিষ্টজন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, দুলাল সরকার, মাসুদ আলম বাবুল, কাজী আনারকলি, বাপ্পী রহমান এবং নাজমুল হুসাইন বিদু্যৎ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আনজুমান আরা, বদরুল হুদা জেনু, মাহমুদুল হাকিম তানভীর, আওরঙ্গজেব আরু এবং রূপশ্রী চক্রবর্তী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল শিল্পী ফরিদা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'অচিন পাখি', রাখাল কিশোর ঠাকুরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ত্রিবেণী' এবং আতিকুর রহমান উজ্জ্বলের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন 'নৃত্যাঙ্গন'-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবিদা রহমান সেতু, সুমা রাণী রায়, ডালিয়া সুলতানা, আরিফ চৌধুরী পলাশ, মুন্নী কাদের, রোমানা আক্তার, জোহুরা আক্তার সোনিয়া এবং মো. রেজাউল করিম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন চন্দন দত্ত (তবলা), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড), এফএম আলমগীর কবীর (বাঁশী) এবং দীপঙ্কর রায় (অক্টোপ্যাড)। আজকের অনুষ্ঠান আজ বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : জামাল নজরুল ইসলাম' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আসিফ। আলোচনায় অংশ নেবেন সুব্রত বড়ুয়া এবং আরশাদ মোমেন। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে