বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস পালিত

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
যথাযোগ্য মর্যাদায় মুজিবনগর দিবস পালিত

বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বুধবার সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। পরে এই বৈদ্যনাথতলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নামকরণ করা হয়।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বুধবার সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্বাধীনতার স্থপতি এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

দিবসটি স্মরণে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও এম. মনসুর আলীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। দিবসটির কর্মসূচির মধ্যে সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণসহ সারাদেশে দলটির কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে ভুয়া ৮ হাজার

জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী

এদিকে, মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই শেষে মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কাউন্সিলে পাঠান। তারপর মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেট প্রকাশ করা হয়। যদি কোনো ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকেন সেটা কেউ অভিযোগ করলে বা মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে সেগুলো বাতিল করা হবে। প্রমাণ হওয়ায় ভুয়া আট হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, 'ভুয়া তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান যুগে প্রতারণা করা সহজ। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকলে সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশের পূর্বে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

আ. ক. ম মোজাম্মেল বলেন, 'মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের প্রথম সরকার। '৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের ধারাবাহিকতায় আজকের এই সরকার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের স্মৃতিকে অমস্নান করে রাখার জন্য মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কিছু অবজারভেশন আছে। তিনি কিছু মতামত ব্যক্ত করেছেন। সেটা দিয়েছেন। এটা যাতে আন্তর্জাতিক মানের করা যায় সে বিষয়ে তিনি বলেছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সর্বস্তরের অংশীদারদের নিয়ে সভা করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রকল্পটা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই একনেকে তোলা হবে। একনেকে অনুমোদন করার পরই দ্রম্নতই কাজ শুরু হবে। আগামী ১৭ এপ্রিলের আগেই মুজিবনগরকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে যাবে।'

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উলস্নাহ বলেন, 'যারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা প্রদান করবে, প্রচারণা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। যারা মুজিবনগর সরকারকে স্বীকার করে না তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুজিবনগর সরকার হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম সরকার। এর বিরোধিতা যারা করে তারা মূলত স্বাধীনতাবিরোধী।'

অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। তাই এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে পরিতাপের বিষয় হলো বিএনপি-জামায়াতসহ অনেকেই মুজিবনগর সরকারের শপথের এই দিনটি পালন করে না। শুধু আওয়ামী লীগ প্রতিবছর এই দিনটি নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতে হলে মুজিবনগর সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে। তাই মুজিবনগরকে আধুনিকায়ন করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।'

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও মুজিবনগর দিবস অনুষ্ঠানের সভাপতি আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাসিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেখানেই বাধা আসবে, যেখানেই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হবে বা প্রচার করা হবে, সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে। এই হোক আমাদের আজকের মুজিবনগর দিবসের প্রত্যয়। দেশে বিএনপি-জামায়াত একেক সময় এককে রকম কথা বলে বেড়ায়। যার কোনো ভিত্তি নেই। তারা স্বাধীন সার্বভোম রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে বিভোর। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত করে তারা ফায়দা লুটতে চায়। তবে তাদের সে আশা পূরণ হবে না। দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র বানানোর খায়েশ বিএনপির পূরণ হবে না।'

এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি সভাপতিত্বে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উলস্নাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম মোজাম্মেল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র এ. এইচ. এম খাইরুজ্জামান লিটন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, সৈয়দা জাকিয়া নুর, পারভিন জামান কল্পনা, অ্যাড গেস্নারিয়া সরকার ঝর্ণা, নির্মল কুমার চ্যাটার্জি, মেহেরপুর-২ গাংনী আসনের সংসদ সদস্য এস. এম. নাজমুল হক, মেহেরপুরের আশপাশের জেলার সংসদ সদস্যসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে