শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
পাবনার বেড়া পাউবো

আবেদন প্রত্যাহারে কর্মকর্তারা ঢাকায়, কার্যক্রমে স্থবিরতা

একযোগে ৩৭ জনের স্বেচ্ছায় বদলি
আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
আবেদন প্রত্যাহারে কর্মকর্তারা ঢাকায়, কার্যক্রমে স্থবিরতা

পাবনার বেড়া উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ৩৭ জন একযোগে স্বেচ্ছায় বদলি চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। সংশ্লিষ্টদের এই আবেদন ঘিরে এলাকায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে আবেদন প্রত্যাহারের কথা বলে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৯ কর্মকর্তা গত দু'দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এতে দাপ্তরিক কার্যক্রমে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও বেড়া পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পওর (পরিচালন ও সংরক্ষণ) বিভাগের বিভিন্ন কাজ বুঝিয়ে দেওয়া-নেওয়া, সম্পন্ন করা এবং লেনদেন নিয়ে বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে গত ৯ মে স্বেচ্ছায় বদলি চেয়ে বাপাউবোর মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেন ৩৭ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

1

আবেদনে তারা উলেস্নখ করেন, 'একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিব্রত, হয়রানি, মানসিক, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে নামে বেনামে মিথ্যা, হয়রানি ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পত্র প্রেরণ করছেন। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের বিব্রতকর জবাবদিহি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।' এমন পরিস্থিতিতে কাজের পরিবেশ নেই দাবি করে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেন তারা। আবেদনের বিষয়টি জানার পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, আগে বদলি হওয়া কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কাজ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেই দ্বন্দ্বে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে না পেরে একযোগে বদলির আবেদন করেন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা। এতে সব পর্যায়ের কর্মচারীদের বাধ্য করেই বদলির আবেদনে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কর্মচারীদের অনেকেই জানেন না বদলির আবেদনে কি লেখা হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর বদলির আবেদন প্রত্যাহার করতে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) ঢাকার অফিসে যান।

বুধবার সকালে বেড়া পাউবোর পওর বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তাদের রুম তালাবদ্ধ। তবে তিনজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অফিস করছেন। বেশির ভাগ কর্মচারী অফিসে নেই। সাংবাদিকদের দেখেই তাদেও ছোটাছুটি বেড়ে যায়। শীর্ষ কর্মকর্তারা না থাকায় এবং অফিস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী ব্যতীত সব কর্মকর্তা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন। তবে একটা দপ্তরের কি এমন কাজ বা অভিযোগ যে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে অফিস সহায়ক পর্যন্ত কাজের পরিবেশ না থাকায় স্বেচ্ছায় অন্যত্র বদলির আবেদন করতে হলো- বিষয়টি নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী রাকিবুল ইসলাম, তাউফিকুর রহমান ও অফিস সহায়ক মজিবুর রহমানসহ একাধিক কর্মচারী বলেন, 'স্যাররা আবেদনে স্বাক্ষর করতে বলায় আমরা স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আবেদনে কি লেখা আছে বলতে পারি না। শুধু বলছে বদলির আবেদন করবে, স্বাক্ষর করতে, করে দিছি।'

এ ব্যাপারে তিন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান, আব্দুল খালেক, হাবিবুর রহমান বলেন, 'স্যারদের অফিসিয়াল কাজ থাকায় তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।'

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বেড়া পাউবোর (পওর বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বিকাল পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

পাউবো পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।

পাউবো রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, 'পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে জানিয়েছেন ঢাকায় একটি মিটিংয়ে যাবার কথা। কিন্তু ৯ জন একসঙ্গে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছু জানাননি। আর একযোগে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলি চাওয়ার আবেদন ডিজি মহোদয় বরাবর দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো ডকুমেন্ট এখনো পাইনি। তাই সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।'

বাপাউবোর মহাপরিচালক আমিরুল হক ভূঁঞা বলেন, 'আমি তো দেশের বাইরে ছিলাম। বুধবার সকালেই এসেছি। বিষয়গুলো জানা নেই। তবে এভাবে একসঙ্গে সবাই ঢাকায় আসার তো কোনো সুযোগ নেই। গেলে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ছুটি নিয়ে যেতে হবে। আর একযোগে সবাই বদলি হওয়ার সুযোগ কীভাবে আছে আমার তো জানা নেই। কি কি দরখাস্ত আসছে আগে দেখি। কেন দিয়েছে, কি কারণে দিয়েছে, সবগুলো দেখি আগে, তারপর বলা যাবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে