বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেড়েছে ঢাকামুখী গাড়ির চাপ ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর ভিড়

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
বেড়েছে ঢাকামুখী গাড়ির চাপ ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীর ভিড়
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন শেষে কর্মস্থলে ফিরছেন মানুষ। ছবিটি শনিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তোলা -যাযাদি

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ শেষে কর্মস্থল রাজধানী ঢাকায় ফিরছেন মানুষজন। স্বাভাবিকভাবেই মহাসড়কগুলোতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। এতে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমের ঢাকামুখী টোল পস্নাজায় সৃষ্টি হয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট। এদিকে ঢাকায় ফেরা ট্রেনগুলোতেও বেড়েছে যাত্রীদের চাপ। তবে ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড়ে আসন সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে টিকিট না পেয়ে দাঁড়িয়েই ঢাকায় ফিরছেন। অপরদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটেও যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। শনিবার সকালে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আমাদের ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ঢাকামুখী মহাসড়কে যানবাহনের বাড়তি চাপ থাকলেও স্বাভাবিক গতিতেই চলাচল করছে যানবাহনগুলো। এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুতে বেশ কয়েকটি যানবাহন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটে।

1

সরেজমিনে বেলা দেড়টার দিকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ঢাকামুখী লেনে সেতু পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। বৃষ্টিতে ভিজে মোটর সাইকেল, খোলা ট্রাক ও পিকআপের যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পরে দুপুর ২টার দিকে সেতুর ওপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সেতুর ওপর চারটি গাড়ি বিকল হওয়ায় ও বৃষ্টির কারণে সেতুতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন হয়। বিকল গাড়ি রেকার দিয়ে সরাতে সময় লেগে যায়। এতে বিভিন্ন সময় টোল আদায় বন্ধ রাখা হয়। ফলে সেতুর ওপর ঢাকামুখী যানবাহনের লাইন লেগে যায়।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান কবীর পাভেল জানান, 'সেতুর ওপর চারটি গাড়ি বিকল ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন সময় টোল আদায় বন্ধের ফলে সেতুতে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গমুখী যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। এতে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করে। দুপুরের পর থেকে সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমে যায়।'

এদিকে কমলাপুর রেল স্টেশনেও বেড়েছে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ। পাশাপাশি অনেকেই ঈদের সময় ছুটি না পাওয়ায় ঈদের পরে ছুটি নিয়ে পরিবারকে সময় দিতে ঢাকা ছাড়ছেন। শনিবার সকালে সরেজমিনে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

লালমনিরহাট থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে ঢাকা এসে পৌঁছেছে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। লালমনিরহাট স্টেশন থেকে ট্রেনটিতে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন মো. তারেক আজিজ। ফেরার পথে ট্রেনে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাতে ট্রেনে উঠার সময় সবই ঠিকঠাক ছিল। বগুড়া ও সান্তাহারের পর থেকে ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের ভেতরের আবহাওয়া অসহ্য গরমে পরিণত হয়। আর ট্রেনটি সকাল ৭টায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও ঢাকায় এলো দুই ঘণ্টা দেরিতে।'

বুড়িমারী এক্সপ্রেসের আরেক যাত্রী মাজহার মাহবুব বলেন, 'গ্রামে ঈদের ছুটি কাটিয়ে শনিবার ঢাকায় ফিরেছি। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠেছি। ট্রেনের টিকিট না পেয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। দাঁড়িয়ে এসেছি। ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় ছিল অনেক।'

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকাল থেকেই ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের ভিড় বেশি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনগুলো দেরিতে আসায় ঢাকা স্টেশন থেকে দেরিতে ছেড়ে যায়। ঢাকা স্টেশন থেকে আলাদাভাবে দেরিতে ছেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই।

অপরদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার বলে খ?্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে।

ঢাকায় ফেরা যাত্রীরা বলছেন, ঈদ শেষে স্বজনদের রেখে কর্মস্থলে ফিরতে কষ্ট হচ্ছে। তবে ঘাট এলাকায় ভিড় থাকলেও স্বস্তির কথা জানান তারা। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৮টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ চলাচল করছে।

শনিবার সকাল থেকেই কর্মস্থল ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ বাড়তে থাকে ঘাট এলাকায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আরও বেড়ে যায়।

মাহফুজ নামের এক যাত্রী বলেন, 'এবার ঘাটে কোনো ঝামেলা হয়নি। তবে ভাড়াটা বেশি নিয়েছে। রাস্তা ফাঁকা আছে, সব মিলিয়ে ভালোভাবে আসতে পেরেছি।'

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দূরপালস্নার পরিবহণ এবং প্রাইভেট কারের চাপ বাড়ছে। তবে এই নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি চলাচল করায় পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশন (বিআইডবিস্নউটিসি) দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, 'আমাদের বহরে থাকা ১৮টি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে চলাচল করছে। তবে ঘাটে কিছু যানবাহনের সিরিয়াল রয়েছে। তবে যাত্রীরা স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছেন।'

উৎসবে সরব বরিশাল-ঢাকা নৌরুট

এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী সংকটে দিন পার করছে বরিশাল-ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নৌরুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। ইদানীং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ লম্বা ছুটির সময়গুলোয় এসব লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেড়েছে।

গত ঈদুল ফিতরের পর এবারের কোরবানির ঈদে আপ-ডাউন ট্রিপ মিলিয়ে সর্বোচ্চ যাত্রী পেয়েছে বরিশাল-ঢাকা, ঝালকাঠি-ঢাকা, বরগুনা-ঢাকা, পিরোজপুর-ঢাকা, পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের লঞ্চগুলো।

বরিশাল-ঢাকা রুটের সুরভি শিপিং লাইন্সের কর্মকর্তা মো. রেশাদ জানান, 'পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর নৌপথে যাত্রীখরা শুরু হয়। তবে চলতি বছরে ঈদে লম্বা ছুটির সময়গুলোয় যাত্রী হচ্ছে প্রচুর। অর্থাৎ, উৎসব কেন্দ্রিক সরব হচ্ছে নৌরুট।'

সুন্দরবন লঞ্চ কোম্পা?নির কাউন্টার ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হওয়ায় শুক্রবার যাত্রী তুলনামূলক বেশি ছিল। ত?বে আজ ও কালকের পর যাত্রীর চাপ আর তেমন থাকবে না।'

বরিশাল সদর নৌ থানার ওসি আব্দুল জলিল বলেন, 'শুক্রবারের মতো কর্মস্থলে ফিরতে নদীবন্দরে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। যাত্রীরা যেন নিরাপদে ফিরতে পারেন তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চল?ছে।'

বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'যাত্রী বাড়লেও কোনো লঞ্চ যেন অতিরিক্ত যাত্রী না নেয় সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে। আর নির্ধারিত সময়ের বেশি পন্টুনেও থাকতে দেওয়া হচ্ছে না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে