যশোরের চৌগাছার বলস্নভপুর গ্রামে চাঁদা না পেয়ে মৎসজীবী হিন্দুপলস্নীর বাসিন্দাদের প্রাণনাশের হুমকি ও বাঁওড় দখলের চেষ্টা চালিয়েছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। এসময় সমিতির সদস্যদের মাছ শিকারের জাল কেটে নষ্ট করে দেয় তারা। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনার পর হিন্দুপলস্নীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় চৌগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলস্নভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তারক কুমার বিশ্বাস।
সাধারণ ডায়েরিতে অভিযুক্তরা হলেন, বলস্নভপুর গ্রামের ফকির চাঁদের ছেলে আইজেল হক, মতলেব মন্ডলের ছেলে জিন্নাত মন্ডল, নিমাই বিশ্বাসের ছেলে কার্তিক বিশ্বাস, হাশেম আলীর ছেলে সবদার, রহিম বক্সের ছেলে খালেক হোসেন, হাবিছনের ছেলে সোহরাব গাজী, কিনে মলিস্নকের ছেলে গহর মলিস্নক ও শুকুর মলিস্নক, মাবুদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান এবং সিরাজুল ইসলামের ছেলে আলম বিশ্বাস।
তারক কুমার বিশ্বাস বলেন, 'ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ছয় বছর মেয়াদে (১৪৩১-১৪৩৬ বঙ্গাব্দ) চৌগাছার বলস্নভপুর বাঁওড় জলমহালটি ইজারা নিয়ে চাষ করছে বলস্নভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। এর আগে তিন বছর মেয়াদে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সমিতি বাঁওড়ে মাছ চাষ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কিছু দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক বাঁওড়টি দখলের পাঁয়তারা করছে। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরের দিনও দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় ওই চক্রটি। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে আমাদের হুমকি দেয়, নির্বাচনে তাদের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম হাবিবুর রহমান বিজয়ী হলে বাঁওড় দখল করে নেবে। তিনি বিজয়ী হওয়ার পর থেকে আমাদের অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছে সন্ত্রাসীরা। আমাদের ক্ষতি করতে পারে, এই আশঙ্কায় গত ২০ জুন ২০২৪ তারিখে চৌগাছা থানায় ১০ জনের নাম উলেস্নখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
শনিবার সকালে সমিতির সদস্য বাঁওড়ের মাছ শিকারের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় বলস্নভপুর গ্রামের ফকির চাঁদের ছেলে আইজেল হক, মতলেব মন্ডলের ছেলে জিন্নাত মন্ডল, নিমাই বিশ্বাসের ছেলে কার্তিক বিশ্বাস, হাশেম আলীর ছেলে সবদারের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দেয়। তারা হুংকার দেয় তাদের কোটি টাকার চাঁদা পরিশোধ না করে বাঁওড়ে মাছ শিকারে নামলে হাত-পা কেটে নেওয়া হবে। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে চৌগাছা থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই সন্ত্রাসীরা প্রায় সাত লাখ টাকা মূল্যের জাল কেটে নষ্ট করে দেয়। একই সঙ্গে সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। বাধা দিলে জায়গায় হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়। এ ঘটনাটি চৌগাছা থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।'
এ বিষয়ে বলস্নভপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুমার রায় বলেন, 'উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা ও নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধির ইন্ধনে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অত্যচারে আমরা চরম আতঙ্কে দিন পার করছি। বর্তমানে বাঁওড়ে আমাদের প্রায় ৭০ লাখ টাকার সম্পদ রয়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছি। একই সঙ্গে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা শঙ্কিত।'
এ বিষয়ে চৌগাছা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, 'বর্তমানে যারা বাঁওড়টির ইজারাদার তারা শনিবার সকালে মাছ ধরতে গেলে অপর একটি পক্ষ বাঁওড়ে আসে। এতে দু'পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যায়। বর্তমানে ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দু'পক্ষকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ডেকেছেন। সমাধানের চেষ্টা চলছে।'
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, 'বর্তমান ইজারাদাররা শনিবার মাছ ধরবেন, এ মর্মে তারা লিখিত আকারে জানিয়েছেন। তারা মাছ ধরতে নামলে অপর একটি পক্ষ বাধা দেয়। সেটা নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সমাধান করার জন্য দু'পক্ষকে ডাকা হবে।'