বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

রমেক হাসপাতালে বদলি আতঙ্ক!

আবেদুল হাফিজ, রংপুর
  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
রমেক হাসপাতালে বদলি আতঙ্ক!
রমেক হাসপাতালে বদলি আতঙ্ক!

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে আওয়ামী সমর্থিত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বদলি আতঙ্কে রয়েছেন। ইতোমধ্যে হাসপাতালের পরিচালকসহ ৪ জনকে বদলি করা হয়েছে। তারা হলেন পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মজিদুল ইসলাম, নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. জামাল উদ্দিন মিন্টু এবং বস্নাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান ডা. জোবাইদা জান্নাত।

রমেক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে মোট চিকিৎসক রয়েছেন ২১০ জন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৩২৪ জন। এর মধ্যে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ২ জন, ৩য় শ্রেণির ৬৬ জন এবং ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন ২৫৬ জন। এক্ষেত্রে সেখানে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে আওয়ামী সমর্থিত সংখ্যা দুই শতাধিক।

1

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রমেক হাসপাতালে অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে বহাল রয়েছেন। তাদের অধিকাংশ আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। সরকারি বিধি মোতাবেক ৩ বছরের বেশি কেউ একই জায়গায় থাকতে পারবে না। অথচ সেখানে ঘটছে প্রতিনিয়ত এর ব্যত্যয়। ফলে সেখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা কর্মস্থলে বেশি সময় না দিয়ে অধিকাংশ সময় বিভিন্ন

বেসকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজি সেন্টারে অবস্থান করতেন। এতে করে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকি তারা দালালের মাধ্যমে বাইরে থেকে হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে উৎসাহিত করছেন।

ভুক্তভোগীদের একজন নগরীর কেরানীপাড়ার বাসিন্দা আব্দুলস্নাহ মারুরের মা ফাতেমা বেগম। গত ২১ জুন রমেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে জরায়ু অপারেশনের জন্য তিনি ভর্তি হয়েছিলেন। পরদিন রক্ত পরীক্ষার জন্য ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে স্যাম্পল পাঠানো হয়। তার রক্তের গ্রম্নপ ছিল 'ও' পজেটিভ। কিন্তু ভুলবশত অপারেশনের সময় তাকে 'এ' পজেটিভ রক্ত দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর রোগীর ক্যাথেটার দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এ সময় চিকিৎসকরা তাকে আবারও অপারেশনের কথা বলেন। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করা হলে তখন ভুল রক্ত দেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে করে তার মার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জুলাই ভোরে তার মৃতু্য হয়। এ ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তটি আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে মৃতের স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়।

অন্যদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রমেক হাসপাতালে ১০ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় আহতদের দেখতে আসার খবরে নিহতের স্বজনরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে এলে এর কয়েকদিন পর রমেক হাসপাতালের পরিচালক, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন), নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার এবং বস্নাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধানকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে চিকিৎসক, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রমেক হাসপাতালে পরিচালক পদে সেনাবাহিনীর সদস্যকে বসানোর দাবিও জানান। এর সঙ্গে তারা হাসপাতালের বিভিন্ন দুর্নীতি বন্ধ ও দালাল চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙার দাবি তুলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিচালকসহ ৪ জনের বদলি আদেশ হওয়ার পর এখন ওই পদগুলো শূন্য রয়েছে। এতে করে হাসপাতাল পরিচালনা কাজে ঘটছে ব্যাঘাত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক এবং কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তারা অনেকেই দোষ না করেও কালোতালিকায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। এছাড়াও অনেক চিকিৎসক রাজনীতি না করেও বলির পাঠা হতে পারেন।

নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. জামাল উদ্দিন মিন্টু বলেন, 'গত ১২ আগস্ট বদলির আদেশ পেয়েছি।' তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে