বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতাল

বগুড়ায় টাকা ছাড়া মিলছে না আহত ছাত্রদের সেবা

ইমরান হোসাইন লিখন, বগুড়া
  ১৬ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বগুড়ায় টাকা ছাড়া মিলছে না আহত ছাত্রদের সেবা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় সরকারের বহন করার কথা থাকলেও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টাকা ছাড়া সেবা পাচ্ছেন না আহত শিক্ষার্থীরা। নিজের টাকায় কিনতে হচ্ছে স্যালাইন, ব্যথার ওষুধ ও অপারেশনের যাবতীয় সামগ্রী। এছাড়া ক্ষতস্থান ড্রেসিংয়ে যেতে ট্রলির জন্যও প্রতিবার গুনতে হচ্ছে অর্থ।

আহত শিক্ষার্থী ও সাধারণ রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, কোনো কিছুর প্রয়োজনে নার্স বা ওয়ার্ড বয়দের একাধিকবার ডেকেও খুঁজে পান না তারা। গত কয়েকদিন ধরে একাধিকবার হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।

1

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওষুধ বাইরে থেকে কেনা এবং তাদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে যে অভিযোগ

উঠেছে তা অপপ্রচার। চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারা বলছেন, যে ওষুধগুলো হাসপাতালে নেই সেগুলো সমাজসেবার মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধসহ বিভিন্নভাবে আহত হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তি হয়েছিল ২০৯ জন শিক্ষার্থী। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২১ জন। অন্যরা সুস্থ হয়ে চলে গেছেন।

গত ৪ আগস্ট বগুড়া শহরের গালাপট্টি এলাকায় পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হন শামীম আহমেদ। তিনি শহরের নারুলী এলাকার হাসমত আলী মেম্বারের ছেলে। পেশায় একজন মুদি দোকানি। তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিলে সেখানে অপারেশন করে তার পা থেকে ৩০টি স্পিস্নন্টার বের করা হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য শজিমেক হাসপাতালে নিলে আরও ৫টি স্পিস্নন্টার বের করা হয়।

শামীমের অভিযোগ, গত ৪ আগস্ট থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ডাক্তাররা ঠিকমতো দেখতে আসেননি। দুই একদিন পর এলেও এক নজর দেখে চলে গেছেন। হাসপাতালের নার্স এবং ওয়ার্ড বয়রাও ঠিকমতো তাদের খোঁজখবর রাখছেন না। শরীরে স্পিস্নন্টারের ক্ষতগুলো ড্রেসিংয়ের জন্যও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনেক ডাকাডাকির পর ড্রেসিংয়ের জন্য আসলেও দিতে হচ্ছে ১শ' টাকা করে। এছাড়া ড্রেসিংরুমে যাওয়ার জন্য প্রতিবার রোগী বহনকারী ট্রলির জন্যও ওয়ার্ডবয়দের দিতে হয় নূ্যনতম ৫০ টাকা।

৫ আগস্ট বিকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন সদর উপজেলার নুনগোলা ইউনিয়নের পলস্নী কুকরুল গ্রামের সবুজ। ওইদিন পায়ে স্পিস্নন্টারবিদ্ধ হলেও তাকে তিন পুলিশ সদস্য থানায় নিয়ে ২ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত হলে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হলে পরিবারের লোকজন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি জানান, তার পা অপারেশন করে গুলি বের করা হয়েছে। অপারেশনের সময় সব কিছুই তাকে কিনতে হয়েছে। এখনো স্যালইন, ব্যথার ওষুধসহ সবকিছুই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

ধুনট উপজেলার আব্দুল মজিদ নামে আরেক রোগী জানান, তার শরীরে অসংখ্য স্পিস্নন্টার রয়েছে। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা। তিনি ডাক্তারকে বলেছিলেন, অপারেশন করে বুলেটগুলো বের করার জন্য। কিন্তু ডাক্তার তাকে ৬ সপ্তাহ পর হাসপাতালে যেতে বলেছেন। বলেছেন, এই মুহূর্তে অপারেশন করা সম্ভব না। ওষুধ লিখে দিচ্ছি, বাসায় গিয়ে খাও।

তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে মাত্র একটি ওষুধ দেওয়া হয়েছে। অন্য মেডিসিন নিজের টাকায় কিনতে হয়েছে।

একই ধরনের অভিযোগ করেন চিকিৎসাধীন অনেকেই।

রোগীর স্বজন ইয়াস?মিন আক্তার ব?লেন, 'আমাদের দরকার চিকিৎসা। সেই চিকিৎসা আমরা ঠিকমতো পাচ্ছি না। শরীরে অসংখ্য গুলি আছে কিন্তু ডাক্তার বলছেন ওগুলো বের না করলেও কোনো সমস্যা নেই।'

বগুড়া ফয়েজুলস্নাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মৌসুমী বলেন, 'প্রথম থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাশেই আছি আমি। ৩ ও ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে আহত চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন হাসপাতালে এসে দেখতে পাচ্ছি প্রায় সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়।'

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, 'আমার মনে হয় এই খবরটা সঠিক নয়। হয়তো অনেকেই ভিন্নভাবে খবরটা প্রচার করছে। আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি হাসপাতাল থেকে রোগীদের সব ধরনের ওষুধ দেওয়ার জন্য। অনেক সময় এমন হয় অনেক ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া যায় না, যেগুলো বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে সেগুলো আমরা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে দিচ্ছি। রোগী এবং রোগীর স্বজনদের বলা হয়েছে এরপরেও যদি কোনো সমস্যা হয় আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে।'

এ বিষয়ে সমাজ?সেবা অ?ধিদপ্ত?র বগুড়া শ?জি?মেক শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ম?লিস্নক ব?লেন, 'গত ১০ এবং ১১ আগস্ট রোগী এবং স্বজন?দের সঙ্গে সাক্ষাতে বলা হয়েছে যে, হাসপাতাল থে?কে ছাড়পত্র দেওয়ার পরও প্রেস?ক্রিপশন অনুযায়ী সব ওষুধ দেওয়া হ?বে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে