বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

চট্টগ্রামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জশনে জুলুস উদযাপিত

চট্টগ্রাম বু্যরো
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জশনে জুলুস উদযাপিত
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড় -যাযাদি

লাখো মানুষের অংশগ্রহণ, হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রামের জশনে জুলুস উদযাপিত হয়েছে। ৫২তম জুলুস ঘিরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে নতুন সাজে সেজেছিল নগরের মোড়, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজক। হামদ-নাত আর দরুদে মুখর পরিবেশে জুলুসে লাখো লাখো মানুষের ঢল নামে। জুলুসে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সি মানুষের অংশগ্রহণে একাকার হয়ে পড়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের রাজপথ।

সোমবার ভোর থেকে কেউ হেঁটে, কেউ মোটর সাইকেলে আবার কেউ ট্রাক কিংবা পিকআপের ওপর চেপে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসে জুলুসে অংশ নিতে। নগরের মুরাদপুর, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, অক্সিজেন, বায়েজিদ, জিইসি মোড়, টেকনিক্যাল মোড়, মোহাম্মদপুর, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্নভাবে এলাকায় জুলুসে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের পদচারণায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

1

সোমবার সকাল ৮টায় নগরের ষোলোশহর আলমগীর খানকা-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে শুরু হয় জুলুসটি। জুলুসে অংশগ্রহণকারীরা হামদ, নাত, দরুদ পড়তে পড়তে বিবিরহাট হয়ে মুরাদপুর, মুরাদপুর ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ডান দিকে মোড় নিয়ে ষোলোশহর ২ নম্বর গেট, ষোলোশহর ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে জিইসি মোড়, লর্ডস ইন হোটেল থেকে ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর বামে মোড় নিয়ে বিবিরহাট থেকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ ফিরে আসে। এরপর জুলুস দুপুরে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে গিয়ে জমায়েত হয়। এই বছর ৫২তম জুলুসে নেতৃত্ব দেন আলস্নামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ্‌। এতে প্রধান মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজাদা আলস্নামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসেম শাহ। এছাড়া জুলুসের আয়োজক সংস্থা আঞ্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং সার্বিক সহযোগিতা করে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।

জুলুস শেষে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন পীর আলস্নামা সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ। মোনাজাতে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সুখ শান্তি সমৃদ্ধি কামনা করেন।

জুলুস ঘিরে দেখা গেছে, রেললাইনের দুই পাশে এক কিলোমিটারজুড়ে বসে ভাসমান মেলা। টুপি, মেসওয়াক, তসবিহ, ইসলামি বই, আতর, পতাকা, পাঞ্জাবি, পাজামা, জুতোসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি হয় মেলায়। অনেকে তবররক হিসেবে শরবত, পানি, চকলেট, জিলাপি, খেজুর, আপেল বিতরণ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া জুলুসে অংশ নেয়া জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়ার শিক্ষার্থীদের পরনের পোশাক সকলের দৃষ্টি কাড়ে। জুলুসের অগ্রভাগে দেখা যায় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর মাথায় সবুজ পাগড়ি পরিহিত শিক্ষার্থীদের। এছাড়া আঞ্জুমান-এ সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) ৩০০ প্রশিক্ষিত সদস্য এবার জুলুসের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটির কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে।

চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীর মাদ্রাসা-এ মুহাম্মদিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া (আলিম) এর সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ হুমায়ুন পারভেজ বলেন, নবীর প্রেমে সিক্ত হয়ে এখানে লাখো জনতা অংশ নেয়। জুলুসে এলে মানুষ নিজের প্রশান্তি খুঁজে পায়।

গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও জসনে জুলুস মিডিয়া উপকমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার যায়যায়দিনকে জানান, আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্সের (এএসএফ) ৩০০ প্রশিক্ষিত সদস্য এবার জুলুসের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বাইরে গাউসিয়া কমিটির কর্মী ও জামেয়ার হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন।

আঞ্জুমান-এ সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এ জুলুস গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করবে। আমাদের স্বীকৃতি দিতেই হবে।

এদিকে, জুলুস উপলক্ষে নগরজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপির ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ট্রাফিক নির্দেশনাও।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) জয়নুল আবেদীন বলেন, জুলুস চলাকালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন ছিল। যেসব জায়গা দিয়ে জুলুসের শোভাযাত্রা গেছে ওদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডাইভারশন দিয়ে সড়ক সচল ছিল। জুলুস শেষ হওয়ার পর সেগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে