বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
ঢাকা মহানগর উত্তরের রুকন সম্মেলনে জামায়াত আমির

আ'লীগের তৈরি কালো আইনেই জুলাই গণহত্যার বিচার চাই

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান -যাযাদি

বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন আন্দোলনে 'গণহত্যার' বিচার আওয়ামী লীগের তৈরি বিভিন্ন 'কালো' আইনেই চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেসব আইন নিয়ে 'প্রশ্ন' ও 'সমালোচনা' থাকার পরও 'আইন সবার জন্য সমান আর বিচার বিভাগ স্বাধীন' দাবি করে আওয়ামী লীগ ওইসব আইনের ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ায় এখন তাদেরও 'সমান বেনিফিট পাওয়ার অধিকার' আছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

শফিকুর রহমান বলেন, 'তারা দীর্ঘদিন যেসব কালাকানুন-আইন তৈরি করেছিলেন, তাই দিয়েই তাদের বিচার হবে।'

রোববার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, 'অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগের সংকটে ও আন্দোলনে যারা গণহত্যা করেছে তাদের বিচারটা আগে করতে হবে। তাদের বিচার আগে করতে হবে। শহীদদের তাজা রক্ত এখনো ভাসছে। আহতরা এখনো কাতরাচ্ছে। সাক্ষী আলহামদুলিলস্নাহ মজবুত। আলামত জীবন্ত এবং স্পষ্ট। এই বিচার করা খুবই সহজ। এজন্য যতদ্রম্নত সম্ভব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে ওদের যে সঠিক পাওনা বুঝিয়ে দিন। আমরা অবিচার জুলুম কারও ওপর চাই না।'

আওয়ামী লীগের তৈরি 'কালো' আইনেই তাদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, 'আমরা বারবার বলে আসছি, তারা বলতেন আইন সবার জন্য সমান আর বিচার বিভাগ স্বাধীন। সেই সমান আইনে সমান বেনিফিট পাওয়ার অধিকার আওয়ামী লীগের আছে না? ভুল করে নাম নেওয়ার জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন। তারা যেন তাদের সঠিক পাওনাটা পায়। তাদের যেন তাদের পাওনা থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত করা না হয়। যার যেটা পাওনা সেটাই যেন পায়।'

শফিকুর রহমান তার পুরো বক্তব্যে ওই একবারই আওয়ামী লীগের নাম উচ্চারণ করেন এবং 'ভুল' করে বলায় ক্ষমা চান। তার মতে আওয়ামী লীগ জনগণের দ্বারা 'নিষিদ্ধ' দল এবং এই দলের নেতারাও এখন তাদের দলের নাম নেন না। এ অবস্থায় তিনি বা তার দল আওয়ামী লীগের নাম নিতে চান না।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের স্মৃতিচারণ করে জামায়াতের আমির বলেন, '২৮ অক্টোবরের পরে আঁতাত করে পেছনের দরজা দিয়ে সাজানো পাতানো একটা নির্বাচন দিয়ে ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসেছিল একটি দল। এখন তাদের নাম কেউ সাহস করে নেয় না। তাদের দল যারা করে তারাও তাদের দলের নাম নিতে চায় না। আমরা মজলুম জনগণ তাদের নাম নেব কেন? অবশ্য তাদের তাদের নিষিদ্ধ করার ইতিহাস আছে। তারা যখন একদলীয় বাকশাল কায়েম করেন, তখন তারা তাদের দলসহ সব দল নিষিদ্ধ করেছেন। আর এবার জনগণ তাদের দলকে নিষিদ্ধ করেছে আলস্নাহতায়ালার সাহায্য নিয়ে।'

আওয়ামী লীগ 'সবচাইতে বড় চরমপন্থি'

প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হয়। শিল্প কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। মন্দির ও মাজারেও ঘটে একই ধরনের ঘটনা। দেশের আইনে নিষিদ্ধ এমন সংগঠনের কর্মসূচিও দেখা যায় একের পর এক।

এ নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে 'বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান' বিষয়ক অনেক আলোচনা-সমালোচনাও হচ্ছে।

সাম্প্রতিক ঘটনার পেছনে আওয়ামী লীগের হাত থাকার অভিযোগ করে জামায়াত নেতা শফিকুর বলেন, 'তারা অপকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে একটা পথ বের করতে পারতেন। সেটা না করে আনসার লীগ নামে, সেটা না করে তারা বিচার লীগ নামে, সেটা না করে তারা এই দাবি লীগ নামে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। এবার তারা মাশাআলস্নাহ ন্যাচারালি কিনা, আর্টিফিশিয়াল কিনা দাঁড়ি রাখারও চেষ্টা করছে। মাথায় টুপি দিচ্ছেন এখন, আরেকভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। একদিকে ধর্মপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, আরেকদিকে বিশ্ববাসীকে মেসেজ দেওয়া যে 'আমরা যতদিন ছিলাম বাংলাদেশে চরমপন্থার উত্থান হতে দিইনি। আমরা এখন নাই এবং বাংলাদেশে চরমপন্থা আছে।'

এ সময় তিনি আওয়ামী লীগকে 'সবচাইতে বড় চরমপন্থি' আখ্যা দিয়ে বলেন, 'তারাই তাদের সন্তানদের হাতে হাতুড়ি তুলে দিয়েছিলেন, আর মাথায় হেলমেট পরিয়ে দিয়েছিলেন। এদের চেয়ে বড় চরমপন্থি এবং সন্ত্রাসী বাংলাদেশে আর কেউ জন্ম নেয়নি। এদের শাসনআমল পুরোটাই ছিল চরমপন্থা এবং সন্ত্রাস। তারা সন্ত্রাস করে গেলেন, আমরা কী করব? আমরাও কী সন্ত্রাস করব? না, আমরা সন্ত্রাস করব না। আমরা সন্ত্রাসীদের ঘৃণা করি।'

আওয়ামী লীগের শাসনামল নিয়ে জামায়াত আমির বলেন, 'সাড়ে সতের বছর তাদের রাজত্ব ছিল অন্যায় এবং গর্বের। দম্ভ এবং দাপটের। তারা মানুষকে মানুষ পর্যন্ত মনে করে নাই। সব মানুষকে নিয়ে দফায় দফায় উপহাস করেছেন। ভালো না, এগুলো ভালো কাজ না। আলস্নাহতায়ালা সাময়িক কিছু পরিণতি তাদের উপহার দিয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম, এর থেকে তারা শিক্ষা নেবে। কিন্তু আসলে কয়লা ধুইলে যে ময়লা যায় না। কালো কয়লা যত ধুইবেন আর চিকচিকা কালো হয়। তার কালো রংটা আরও ফুটে উঠবে। আপনি যত স্বচ্ছ পানি দিয়ে, সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুইবেন ওটা কিন্তু সাদা হবে না।'

ক্ষমতার পালাবদলের সময় কোনো হামলার সঙ্গে জামায়াত জড়িত ছিল না দাবি করে দলটির প্রধান বলেন, 'এত বড় একটা বিপস্নবের পর, গণ-অভু্যত্থানের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মজলুম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ আমাদের প্রিয় সংগঠনগুলো যদি প্রতিশোধ নিতেই হয়, তাহলে সবার আগে অধিকার ছিল আমাদের। আপনারা সাক্ষী, ৫৪ হাজার বর্গমাইলের কোথাও একটা মানুষের ওপর আমরা প্রতিশোধ ব্যক্তিগতভাবে নিইনি।'

তিনি বলেন, 'আমরা জাতিকে আশ্বস্ত করেছি যে কোনো সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে কোনো প্রতিশোধ নেব না। তারা যেমনটি আইন হাতে তুলে নিয়ে মানুষকে দুঃখ-কষ্ট দিয়েছেন, মানুষের ওপর জুলুম করেছেন, আমরা ওটা করব না। কিন্তু ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকের রয়েছে। দেশবাসী জুলুমের শিকার হয়েছেন, আমরা জুলুমের শিকার হয়েছি, আমরা জুলুমের প্রতিকার চাইব বিদ্যমান আইনের মাধ্যমেই। এবং আমরা সেই প্রতিকারটাই চাচ্ছি।'

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আন্দোলনে নিহত বিসিআইসি কলেজের এক এইচএসসি শিক্ষার্থীর পিতা। সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে