ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জেলখানায় হামলার সুযোগে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো ডাবল মার্ডার মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত শাহীন মলিস্নককে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। গ্রেপ্তার শাহীন ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপনে ছিল।
গত ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকার ধানমন্ডি লেক এলাকায় ছদ্মবেশে অভিযান চালিয়ে তাকে এটিইউ'র একটি দল গ্রেপ্তার করে। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে এটিইউ'র মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল যায়যায়দিনকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর চলতি বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুর জেলার কাশিমপুর কারাগারে হামলা-ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এমন সুযোগে কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি জেল থেকে (৯) অনেক বন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ি থানায় মামলা হয়েছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শুধু গাজীপুরে নয়, দেশের বিভিন্ন জেলখানায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর পর এমন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে মামলা হয়েছে। ওইসব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে যৌথবাহিনীর পাশাপাশি এটিইউ অভিযান পরিচালনা করছে। চলমান অভিযানে জেল পলাতক আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয় শাহীনকে। তার পিতার নাম নিজাম উদ্দিন মলিস্নক। বাড়ি খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন কলারবগি সুতারখালি গ্রামে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাপ্ত নথিপত্র মোতাবেক শাহীন ডাবল মার্ডার মামলায় মৃতু্যদন্ডপ্রাপ্ত। শাহীনের সঙ্গে আরজিনা বেগম (৩৭) নামের এক বিবাহিত নারীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে তাদের প্রেম অনৈতিক সম্পর্কে গড়ায়। তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আরজিনা বিবাহিত ছিল। তার স্বামী ও এক মেয়ে ছিল। এজন্য বিপত্তি দেখা দেয়। পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকা ঝামেলাহীন সংসার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু স্বামী ও মেয়ে বেঁচে থাকলে সেটা সম্ভব হবে না। তাই প্রেমিক-প্রেমিকা স্বামী ও মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা মোতাবেক ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর প্রেমিক-প্রেমিকা সম্মিলিতভাবে আরজিনা বেগমের স্বামী জামিল শেখ (৪২) ও মেয়ে নুসরাত জাহানকে ঢাকার বাড্ডার বাসায় হত্যা করে। এ ঘটনায় জামিলের ভাই শেখ শামীম হোসেন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি করা হয় আরজিনা ও তার প্রেমিক শাহীনকে। ওই মামলায় গত বছরের ১৯ জুন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত শাহীন ও আরজিনাকে মৃতু্যদন্ডে দন্ডিত করেন। শাহীন মলিস্নক গ্রেপ্তারের পর থেকেই গাজীপুরের কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি জেলে বন্দি ছিল। কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি জেলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হামলা হলে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল শাহীন। গ্রেপ্তার হওয়া সাজাপ্রাপ্ত শাহীনকে জেল পালানোর মামলায় গাজীপুরের কোনাবাড়ি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।