বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবি

'সমাধান নিয়েই ফিরতে চাই পড়ার টেবিলে'

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধ যানজটে দুর্ভোগ চরমে
যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -যাযাদি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে 'মুক্তি' এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় অবরোধ করে বুধবারও বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজে থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। এ সময় ওই এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে নগরবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হন। আন্দোলনকারীরা বলেছেন, আমরা রাজপথে থেকেই সমাধান নিয়ে পড়ার টেবিলে ফিরতে চাই। তবে রাস্তায় জনদুর্ভোগ না করে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

এর আগে গত ২১ ও ২৩ অক্টোবর এবং মঙ্গলবার সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কের অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা 'অধিভুক্তি নাকি মুক্তি, মুক্তি, মুক্তি', 'শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য, মানি না, মানব না', 'আর নয় দাসত্ব, হতে চাই স্বতন্ত্র', 'ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক', 'নিপীড়ন নাকি অধিকার, অধিকার, অধিকার', 'প্রশাসনের প্রহসন, মানি না মানব না' স্স্নোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, সাত কলেজকে নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি মেনে নিলে তবে এই আন্দোলনের ইতি টানা হবে।

ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া অয়াফরিন মৌ বলেন, 'আমরা আমাদের সমস্যার সমাধান চেয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা থেকে শুরু করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে গেছি। তারা এ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি। তারা কমিটি বাতিল করে কোন সংস্কার কমিশন গঠন করেননি। আমরা রাজপথে আছি রাজপথ থেকেই সমাধান নিয়ে পড়ার টেবিলে ফিরতে চাই।'

আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি আব্দুর রহমান বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যত টাকা সাত কলেজ থেকে উপার্জন করে তার চেয়ে অনেক কম বিনিয়োগ তারা সাত কলেজের জন্য করে।'

এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কাজে তাদের 'ভোগান্তির শেষ থাকে না। 'এফিলিয়েটেড' শব্দটি আগে সার্টিফিকেটে ছিল না, এখন জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমন ৩৭টি সমস্যা আমরা চিহ্নিত করেছি। এসব সমস্যার সমাধান করতে আমরা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় চাই।'

জনদুর্ভোগ নিয়ে রহমান বলেন, 'আমরা চাই না মানুষের কষ্ট হোক। আমাদের দাবি দ্রম্নত মেনে নিলে আমরা আর জীবনেও এভাবে রাস্তা অবরোধ করব না।'

শিক্ষাঙ্গনে ফিরতে অনুরোধ শিক্ষা উপদেষ্টার

এদিকে, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। একটি সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থা পাওয়া শিক্ষা খাতে শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। এসব দাবিদাওয়ার মধ্যে ন্যায্য-অন্যায্য এবং কিছু ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী দাবিও আছে। একটি বৈষম্যবিরোধী দাবি মানলে অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হতে পারে। শিক্ষা খাতের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দাবি পূরণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকে এবং এর জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া কঠিন। অথচ সবকটি দাবির পেছনের আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকেই সবচেয়ে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন এবং দাবিগুলোকে শুধু রাস্তায় আন্দোলন করে তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য মনে করছেন। এতে একদিকে যেমন রাস্তা অবরোধের ফলে অপরিসীম জনদুর্ভোগ হচ্ছে, সরকারও দাবিগুলো যথাযথ বিবেচনার সুযোগ পাচ্ছে না।'

বিবৃতিতে বলা হয়, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনার জন্য সরকার ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে, যা সাত সপ্তাহের মধ্যে দ্রম্নত একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। সমস্যাটির শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে ঢাকার সাতটি কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতা থেকে বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করার একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের উভয় পক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ওই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অসুবিধা ও বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে।'

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, সমস্যাগুলো জটিল এবং এগুলোর সুষ্ঠু সমাধান কী হতে পারে, তা বিবেচনায় নূ্যনতম কিছু সময়ের প্রয়োজন। তাই শিক্ষার্থীদের রাস্তায় জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ধৈর্য ধরার ও নিজ নিজ শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে