বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ

চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার পর সনাতন জাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ

সোমবারের মধ্যে মামলা প্রত্যাহার দাবি, আজ ৬৪ জেলায় সমাবেশ
চট্টগ্রাম বু্যরো
  ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার পর সনাতন জাগরণ মঞ্চের বিক্ষোভ

জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে চট্টগ্রামে হিন্দু নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সোমবারের মধ্যে প্রত্যাহার না হলে দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সনাতনী জাগরণ মঞ্চের নেতারা। বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার বিকালে দেশের ৬৪ জেলায় সমাবেশ ও রোববার জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয় সমাবেশ থেকে।

এর আগে বুধবার রাতে মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সংগঠক ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়কসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন জাতীয় পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের

ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করায় রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে মামলাটি দায়ের করা হয়। ওই ঘটনায় রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রাষ্ট্রদোহ মামলা দায়েরের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে সনাতনী সমাজ বাংলাদেশের সমন্বয়ক স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, 'অনেকে বলছে, হিন্দুরা প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া-আমেরিকার দালালি করছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ক্ষমতায় আসার জন্য ইতোমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়া, আমেরিকা ঘুরে এসেছে সমর্থনের জন্য।'

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রাষ্ট্রপ্রধান দেবেন মন্তব্য করে মামলার বাদী কে এই ফিরোজ খান- এমন প্রশ্ন তুলে ইসকন নেতা গৌরাঙ্গ দাস বলেন, 'কিছুদিন আগে এই বাংলাদেশের একটা গোষ্ঠী জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছিল। আমরা দেখেছি, তারা আমাদের জাতীয় পতাকার ওপর ফিলিস্তিনের পতাকা দিয়েছে। আমরা আরও দেখেছি, পায়ের নিচে জাতীয় পতাকাকে পড়ে থাকতে। তখন মামলা কেন হলো না? রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রাষ্ট্রপ্রধান দেবেন। কিন্তু মামলার বাদী এই ফিরোজ খান কে? কোন জায়গা থেকে এসেছে?-এসব জানতে চাই।'

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের পতাকা সূর্যাস্তের পর নামিয়ে ফেলার নিয়ম আছে। কিন্তু এই নিয়ম মানা হচ্ছে কোথায়? এ ছাড়া সেইদিন সমাবেশে পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী কী বলেছেন, তা সারা বাংলাদেশ জানে। তিনি মহাসমাবেশ চলাকালীন সভাস্থলেই ছিলেন। তাহলে কেন এই গেরুয়া পতাকাকে কেন্দ্র করে মামলা দেওয়া হলো।'

মামলা প্রত্যাহারে গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী আগামী সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, 'আগামী সোমবারের মধ্যে মামলা তুলে নেওয়া না হলে এবং এই মামলা নিয়ে জলঘোলা কেউ করতে চাইলে, আমরা ওইদিন বৃহৎ কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব।'

প্রসঙ্গত, 'গত ৫ আগস্ট গণ-অভু্যত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা নিউমার্কেট মোড়ে একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। গত ২৫ অক্টোবর লালদীঘি ময়দানে সনাতনীদের সমাবেশের দিন ওই পতাকার ওপর ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে অস্বীকার করার সামিল'- এমন অভিযোগে বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, 'ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও পুন্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ (৩৮) কয়েকজনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১২০ (খ), ১২৪ (ক), ১৫৩ (ক), ১০৯ ও ৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।'

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরের প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) ও হৃদয় দাস (২৫)। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে।

৫ আগস্ট দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হিন্দুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ২৫ অক্টোবরের চট্টগ্রামে সমাবেশ করে সনাতনী জাগরণ মঞ্চ। সমাবেশে ৮ দফা দাবি তুলে তার সমর্থনে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ এবং ঢাকামুখে লং-মার্চের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সেই সমাবেশে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী বলেছিলেন, 'এই বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা। আমরা এই ভূমির ভূমিপুত্র, উড়ে আসিনি। আমরা মোগল-ব্রিটিশ পর্তুগিজ নই, আমরা এই ভূমির সন্তান। আমাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করবেন না। কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে এই ভূমি সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হবে। এই ভূমি আফগানিস্তান, সিরিয়া হবে। বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না।'

ওই হুঁশিয়ারির পাঁচ দিন পরই পতাকা টানানোর ঘটনায় তাকে আসামি করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করতে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কাজে লিপ্ত আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে