বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ১৮ দফা দাবি

আমরা এখন কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশে আছি :জোনায়েদ সাকি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আমরা এখন কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশে আছি :জোনায়েদ সাকি
রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শুক্রবার 'বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি'র তৃতীয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্যরা -ফোকাস বাংলা

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর মানুষ একটা বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, 'একাত্তরের পর যা হয় নাই, নব্বইয়ের পর যা হয় নাই, সেটি এবার না হলে তারা মানবে না। ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ চায় সবাই। সেই জায়গায় থেকে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশে আছি।'

শুক্রবার সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে 'বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি'র তৃতীয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

এ সময় বক্তারা বলেন, 'এই জুলাই গণ-অভু্যত্থানের মূল শক্তি শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। তাদের ত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আপনারা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন। তাদের ওপর গুলি চালিয়ে আপনি আপনার গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। শ্রমিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এটি শুধু শ্রমিক আন্দোলন না, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন।'

জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আমাদের প্রত্যেকের বাঁচার মতো শ্রমভাতা নিশ্চিত করতে হবে।'

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয়তা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। কিন্তু সেটি নিশ্চিত করতে হলে আগে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে হবে। সেখানে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন থাকবে। মালিক যদি তার ব্যর্থতার জন্য বেতন দিতে না পারে, তাহলে সেই দায় সরকারকে দিতে হবে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, 'গত আওয়ামী লীগের সময়ে অবকাঠামোগত হত্যাকান্ড একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। সেটা আমরা দেখেছি রানা পস্নাজা হত্যাকান্ড ও তাজরীন ফ্যাশন হত্যাকান্ডে। এগুলোর বিচার করতে না পারার মূল দায় সে সময়ের রাজনীতি। আমাদের এখন মূল দাবি গণতান্ত্রিক ও শ্রমবান্ধব একটি আইন চাই। আমরা নতুন দাবি তুলছি। শিল্প পুলিশ বিলুপ্ত করতে হবে, কারণ তারা মালিক পক্ষের ঠ্যাঙারু বাহিনী ছাড়া আর কিছুই না।'

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নওরিন রশিদ, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, নারী সংহতি আন্দোলনের সভাপতি শ্যামলী শীল প্রমুখ।

এ সময় তারা ১৮ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দাবিগুলো হলো-

১. হাজিরা বোনাস, টিফিন ও নাইট বিল : সব পোশাকশিল্প কারখানায় শ্রমিকের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস হিসেবে অতিরিক্ত ২২৫ টাকা, বিদ্যমান টিফিন বিলের সঙ্গে ১০ টাকা এবং বিদ্যমান নাইট বিল ১০ টাকা বৃদ্ধি করে নূ্যনতম ১০০ টাকা করা হবে।

২. নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন : অক্টোবর ২০২৪ মাসের মধ্যে সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।

৩. রেশনিং ব্যবস্থা : আপাতত শ্রমঘন এলাকায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হবে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিকেও শ্রমঘন এলাকায় সম্প্রসারিত করা হবে। শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী রেশন ব্যবস্থার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

৪. বকেয়া মজুরি প্রদান : আগামী ১০ অক্টোবর ২০২৪-এর মধ্যে শ্রমিকের সব বকেয়া মজুরি বিনা ব্যর্থতায় পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় শ্রম আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৫. বায়োমেট্রিক বস্ন্যাকলিস্টিং : বিজিএমইএ কর্তৃক বায়োমেট্রিক বস্ন্যাকলিস্টিং করে শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে একটি টেকনিক্যাল টিম পর্যালোচনা করে অক্টোবর ২০২৪-এর মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন।

৬. ঝুট ব্যবসা : ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব, চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৭. মামলা প্রত্যাহার : ২০২৩-এর মজুরি আন্দোলনসহ ইতোপূর্বে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সব হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা রিভিউ করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। মজুরি আন্দোলনে নিহত চারজন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. বৈষম্যবিহীন নিয়োগ : কাজের ধরন অনুযায়ী নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা হবে।

৯. জুলাই বিপস্নবে নিহত এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবার জন্য শ্রমিক নেতারা একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন। প্রাপ্ত তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের 'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন'-এ পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হবে।

১০. রানা পস্নাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকারের উদ্দেশে ইতোমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশের আলোকে পরবর্তী প্রয়াজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

১১. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।

১২. অন্যায় ও অন্যায্যভাবে শ্রম আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না।

১৩. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করতে হবে।

১৪. শ্রমিক ও মালিক পক্ষের তিনজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত অতিরিক্ত সচিব (শ্রম)-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি নিম্নতম মজুরির বিধি-বিধান ছয় মাসের মধ্যে সক্ষমতা পর্যালোচনা করবে।

১৫. শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) পুনরায় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিসেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।

১৭. কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটসম্পন্ন অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চার আদলে ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৮. নিম্নতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ কমিটি বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সক্ষমতা ও করণীয় বিষয়ে নভেম্বর ২০২৪-এর মধ্যে একটি সুপারিশ দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে