বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সচিব

৫ বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া হবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দেওয়ার সময় বাড়ছে ১ মাস দুই স্তরে পদোন্নতি গ্রেড-১ পাবেন বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিবরা
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
৫ বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া হবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন

পাঁচটি বিসিএসের মাধ্যমে মোট ১৮ হাজার ১৪৯ জনকে নিয়োগ দেবে সরকার। এর মধ্যে ক্যাডার পদে ১২ হাজার ৭১০ জন এবং নন-ক্যাডারে ৫ হাজার ৪৩৯ জন। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

তবে জনপ্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া আরও ২ হাজার কর্মকর্তা ৪৭তম বিসিএসের পর নিয়োগ হবে। সেগুলো আলাদা কোনো বিসিএসের মাধ্যমে নাকি নন-ক্যাডারের মাধ্যমে হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। সব মিলে ২০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন।

1

সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, গেজেট হয়ে যাওয়া ৪৩তম বিসিএস থেকে শুরু করে আসন্ন ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে এসব নিয়োগ দেওয়া হবে।

শিগগিরই ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে ৩ হাজার ৪৮৭টি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

সচিব বলেন, ৪৩তম বিসিএসে ২০৬৪ জনের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি তাদের যোগদানের তারিখ নির্ধারিত আছে।

তিনি আরও বলেন, 'অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে গোয়েন্দা সংস্থা- এনএসআই ও ডিজিএফআই এর মাধ্যমে অধিকতর যাচাই-বাছাই চলমান আছে।'

৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের সময় ৪৪তম বিসিএস এর মৌখিক পরীক্ষা চলমান ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ১১ হাজার ৭৩২ জন। এরমধ্যে ৩৯৩০ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গত ২৫ আগস্ট ওই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর 'অধিকতর স্বচ্ছতার স্বার্থে' আগে নেওয়া ৩৯৩০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

এখন ৪৪তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থীর, অর্থাৎ ১১৭৩২ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সচিব বলেন, ৪৫তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১২৭৮৯ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। প্রথম পরীক্ষকের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে দ্বিতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়নের কাজ শেষের পথে ছিল।

সম্প্রতি নতুন কমিশন গঠনের পর লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে 'স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে' এ লিখিত পরীক্ষার সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

৪৬তম বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল গত ৯ মে প্রকাশিত হয়। তাতে ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়।

এক্ষেত্রে 'সম্ভাব্য বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে' নির্বাচিত প্রার্থীদের সঙ্গে সমান সংখ্যক, অর্থাৎ ১০ হাজার ৬৩৮ জনকে যোগ করে মোট ২১ হাজার ২৭৬ জন প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য যোগ্য বিবেচনা করে পুনরায় ফলাফল ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।

সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার জারি করা হবে বলে জানান সচিব।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের সময়ে প্রথম এই বিসিএসের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডারে ৩৪৮৭টি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

সচিব জানান, ৪৩তম বিসিএসে ক্যাডার পদে ২০৬৪ জন, ৪৪তম বিসিএসে ১৭১০ জন, ৪৫তম বিসিএসে ২৩০৯ জন, ৪৬তম বিসিএসে ৩১৪০ জন এবং ৪৭তম বিসিএসে ৩৪৮৭ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এ ছাড়া নন-ক্যাডার পদে ৪৩তম বিসিএস থেকে ৬৪২ জন, ৪৪তম বিসিএসের ১৭৯১ জন, ৪৫তম বিসিএসে ১৫৭০ জন, ৪৬তম বিসিএসে ১১১১ জন, ৪৭তম বিসিএসে ৩২৫ জনসহ ক্যাডার ও নন ক্যাডার পদে ১৮১৪৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এসব নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হতে কতদিন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে সচিব বলেন, 'যত দ্রম্নত সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছি। সবশেষ যে ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার আসছে, সেখানে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলেছি আমরা।'

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের

হিসাব দেওয়ার সময় বাড়ছে

এদিকে, সম্পদের হিসাব জমা দিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সময় এক মাস বাড়ানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সম্পদ বিবরণী জমা দিতে পারবেন সরকারি কর্মচারীরা।

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দিতে একটি ছক প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সময় বেঁধে দিয়েছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।

নির্ধারিত সময়ে হিসাব বিবরণী জমা না দিলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন সচিব।

সম্প্রতি এনবিআর রিটার্ন দাখিলের সময় একমাস বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের হিসাবে বিবরণী নিয়েও সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসল।

সচিব বলেন 'সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার সময় এক মাস বাড়ানো হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে সার্কুলার ইসু্য করব। এনবিআরের রিটার্ন দাখিলের সঙ্গে এর একটা সম্পর্ক আছে। সেজন্য আমরাও এক মাস পিছিয়েছি।'

সচিব মোখলেস বলেন, 'গত ১৬ বছরে কেউ সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়নি। কীভাবে এটা জমা দিতে হবে তা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। সময় বাড়ানোর সেটাও একটা কারণ।' তবে আগামীতে প্রতিবছরই ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব দিতে হবে বলে জানান তিনি।

দুই স্তরে পদোন্নতি হবে, গ্রেড-১

পাবেন বঞ্চিত অতিরিক্ত সচিবরা

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, সরকার অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেবে। এছাড়া বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির পর অল্প সময়ের মধ্যে অবসরে যাবেন তাদের গ্রেড-১ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পদায়নের জন্য নতুন করে ফিটলিস্ট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'বিসিএস নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের নতুন মন্ত্রিপরিষদ সচিব যোগদান করেছেন। এসএসবি ফরমেশন হয়েছে। উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দ্রম্নত সময়ে শুরু হবে। যেহেতু অনেকের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য পদ দেওয়া যায়নি। কিন্তু ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি বাদ পড়া আরেকটা বিষয়। যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব আরেকটা।'

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অনেক বিতর্ক অনেক দিন হয়েছে, নতুন ডিসি ফিটলিস্ট করার কাজটা শুরু হবে। এই কাজটা যে রকম গতবার দিনে রাতে করতে হয়েছে। মাঠ কিন্তু অনেক ভালো। তারপরও সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা নতুন ডিসি দেওয়ার চেষ্টা করবো। এ কাজটা এসএসবির মাধ্যমে শিগগরি শুরু হবে।'

মোখলেস উর রহমান বলেন, বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব, পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩ দিনে তিন পদোন্নতি। এটা বিষয় নয়। তারা সারা বছরই বঞ্চিত ছিলেন। এই বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব হয়ে চাকরির শেষ প্রান্তে, সিদ্ধান্ত হয়েছে গ্রেড-১ দিয়ে তাদের পদোন্নতি দেব। অনেকের এক মাস আছে, ১৫ দিন আছে, ২০ দিন আছে। এটা আমি মনে করে অনেকের পদোন্নতি হবে এবং সামাজিক, পারিবারিক, আর্থিকভাবে তারা উপকৃত হবে। এটার জন্য তারা চাকরি করে। দাবি করার আগেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বঞ্চিত যারা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সবাইকে কি গ্রেড-১ দিতে পারবেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'সরকারি যারা চাকরি করি বিধি-বিধানের মাধ্যমে করতে হয়। যদি ডিসিপিস্ননারি মামলা থাকে, ফৌজদারি মামলা থাকে, যদি কারো বিরুদ্ধে...যেমন এক কলিগের বিরুদ্ধে আরেক কলিগের মোটরসাইকেল চুরির মামলা; মানে মামলা-মোকদ্দমা-অভিযোগ-তদন্ত যদি থাকে এদের বিবেচনায় আনা হবে না। তাদের গ্রেড-১ দেওয়া হবে না।'

অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি বিধি মোতাবেক শুরু হবে জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, আর নতুন করে দল বেঁধে দাবি করার কিছু নেই। যে বিষয়গুলো চিহ্নিত সে বিষয়গুলো সরকার বিধি মোতাবেক যার যতটুকু প্রাপ্য সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।

বিসিএসে কোটা পদ্ধতি কীভাবে প্রয়োগ হবে- জানতে চাইলে সচিব বলেন, ৭ শতাংশ অন্যান্য এবং ৯৩ শতাংশ মেধা, সেভাবে হবে।

'টার্গেট ছিল একটা করে স্টাম্প ফেলে দেওয়া'

'মোখলেস উর রহমান টার্গেট ছিল না, তাদের টার্গেট ছিল জনপ্রশাসন সচিব। তাদের আরও টার্গেট ছিল, এই পদটাকে যদি ভালনারেবল করা যায়, তবে সরকারের একটা করে স্টাম্প পড়ে যাবে।

দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের মুখে পড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এসব কথা বলেন। বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সরকার পরিবর্তনে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সচিবের বিরুদ্ধে 'তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন!' এবং 'আমার ফাইভ সি হলেই চলবে স্যার, ১০ সি নিয়ে রাখব'- শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতীয় দৈনিক।

তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র এ সচিব বলেন, ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব জয় করা যায়। আমি এটাকে পজিটিভলি নিয়েছি। যে পত্রিকা বা মিডিয়া প্রচার করেছে, হয়তো তারা না বুঝে বা ভুল বুঝে করেছে, এখন তারা রিয়েলাইজ করে, ইট ওয়াজ রং। এর বেশি আমি বলব না।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, এর জন্য আমাকে তিনজন হাই-পাওয়ার উপদেষ্টার তদন্ত ফেস করতে হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে রিপোর্ট দিয়েছিল। তা প্রসেসড হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছে। এখানে কমেন্ট হলো- (পত্রিকায়) ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা রিপোর্ট করা হয়েছে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, এখানে আরেকটু যোগ করি। মোখলেস উর রহমান তাদের টার্গেট ছিল না, তাদের টার্গেট ছিল জনপ্রশাসন সচিব। তাদের আরও টার্গেট ছিল। ন্যাশনাল অথবা ইন্টারন্যাশনালি, হোয়াটএভার ইট ইজ- যদি পদটাকে ভালনারেবল করা যায়, তবে সরকারের একটা একটা করে, যদি ক্রিকেটের ভাষায় বলি- স্টাম্প পড়ে যাবে। দ্যাট ওয়াজ দ্য পালস।

তিনি বলেন, আলটিমেটলি যেহেতু সারা জীবন একইভাবে জীবন যাপন করেছি, এখনও করি, আমি পজিটিভ লোক। আমি যেহেতু জনপ্রশাসনের সচিব, এই মিনিস্ট্রিকে অন্য সব মিনিস্ট্রির অভিভাবক বলা হয়, আমার মাধ্যমে কোনো কিছু নেগেটিভ অথবা আমার মাধ্যমে কোনো কিছু পাওয়া না হোক, এটা ঘটবে না ইনশালস্নাহ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে