দেশের অব্যাহত জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ৬৯৩ কোটি ব্যয়ে এক কার্গো এলএনজি ও ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টন সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কয়েকটি ক্রয় প্রস্তাবেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এসব ক্রয়প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ২টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৭৬ কোটি ৬৬ লাখ ৮ হাজার ৯২৭ টাকা।
সভা সূত্রে জানা যায়, 'ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রিসিলিয়েন্ট স্মল স্কেল ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রজেক্ট ইমপিস্নমেন্টাশন সাপোর্ট কনসালট্যান্টস (পিআইএসসি) প্যাকেজে পরামর্শক নিয়োগ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রজেক্ট ইমপিস্নমেন্টেশন সাপোর্ট কনসালট্যান্ট নিয়োগের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য তালিকাভুক্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হলে তারা তা দাখিল করে। তার মধ্যে ৫টি প্রস্তাব কারিগরি ও আর্থিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়। প্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে নর্থইস্ট হাইড্রলিক কনসালট্যান্টস লি.; মেটামেটা রিচার্স; রিসোর্স পস্নানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্টস প্রা.লি.-কে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৯ টাকা।
সভায় 'আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট-২য় পর্যায় (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে নিয়োজিত এনজিওসমূহের সঙ্গে চুক্তির ২য় ভেরিয়েশনসহ ২য় সংশোধিত চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। নগর ও পৌরসভাসমূহে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর ১৬ ধরনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দানের জন্য আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারী প্রজেক্ট চলমান আছে। প্রকল্পের ২য় সংশোধনের মাধ্যমে অতিরিক্ত ১২ মাস স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ২২টি পার্টনারশীপ এলাকায় নিয়োজিত এনজিওসমূহের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য ২য় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৮২ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৭৮ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এলএনজি সরবরাহে সাত প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ল
পেট্রোবাংলার সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই করা সাতটি প্রতিষ্ঠানের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহে মেয়াদ বৃদ্ধিসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা এবং এলএসপি সফটওয়্যার ব্যবহারের মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
সভা সূত্রে জানা গেছে, এমএসপিএ সই করা ২৩টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এলএসপি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে 'পিপিআর-২০০৮'-এর বিধি-৮৫ অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্র অনুসরণে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। চুক্তি সই করা এসব প্রতিষ্ঠানে মধ্যে ৮টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর শেষ হয় এবং ৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সালের ২ ফেব্রম্নয়ারি শেষ হবে। নতুন ২৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ সই প্রক্রিয়াধীন, যা তালিকাভুক্ত হতে আনুমানিক আরও ৪৫ দিন সময় প্রয়োজন। এ অবস্থায় দেশের বিদু্যৎ, শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য আন্তর্জাতিক ক্রয়ে এমএসপিএ সই করা বিদ্যমান ২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ও এলএসপি সফটওয়্যার ব্যবহারের মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর নীতিগত অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দেয়।
৬৯২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে
কেনা হচ্ছে এক কার্গো এলএনজি
জ্বালানি চাহিদা মেটাতে আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের জন্য আরও এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। আন্তর্জাতিক কোটেশনে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কোরিয়ার পসকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এই এক কার্গো এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি এককের দাম ১৪.৬৯০০ মা.ডলার হিসেবে এক কার্গো এলএনজি ক্রয়ে ব্যয় হবে ৬৯২ কোটি ৯৯ লাখ ১৯ হাজার ৩৬০ টাকা।
আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে স্পট মার্কেট থেকে ৫৯ কার্গো এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত ৪ নভেম্বর তারিখে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
আগামী ২০২৫ সালের ১৬-১৭ জানুয়ারি ২০২৫ সময়ে ১ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করেছে। গত ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে কোটেশন আহ্বান করে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২৩ প্রতিষ্ঠানকে এলএসপি সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোটেশন দাখিলের জন্য ই-মেইলে চিঠি পাঠানো হয়।
দর প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে দাখিলকৃত ৩টি কোটেশন দরপত্র ও প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ও আর্থিকভাবে মূল্যায়ন করে সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রতিবেদন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নিকট দাখিল করে। ৩টি কোটেশনের মধ্যে ৩টি কোটেশনই রেসপন্সিভ হয়।
এর মধ্যে কোরিয়ার পসকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম ১৪.৬৯০০ মা.ডলার উলেস্নখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। অন্য ২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলেরায়েট এনার্জি ১৪.৮৪০০ মা.ডলার উলেস্নখ করে ২য় এবং সিঙ্গাপুরের পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল ১৪.৮৬০০ ডলার উলেস্নখ করে ৩য় দরদাতা হয়।
৬৩৪ কোটি টাকায় কেনা হবে
এক লাখ ৩০ হাজার টন সার
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জন্য রাশিয়া, সৌদি আরব, মরক্কো এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে ৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার, ৩০ হাজার টন এমওপি সার এবং ডিএপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৬৩৪ কোটি ৩২ লাখ ১২ হাজার টাকা।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সৌদি আরবের কৃষি পুষ্টি কোম্পানি (সাবিক) থেকে ১৪তম লটের ৩০ হাজার টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ৮৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৪৯ দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জন্য কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) বাংলাদেশের কাছ থেকে ১০ম লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৩৪৩ দশমিক ২৫ মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার প্রোডিন্টরগ ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন- বিএডিসির মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৬ষ্ঠ লটের ৩০ হাজার টন এমওপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এ সার আনবে। এতে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৪৮৯ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কো ওসিপি নিউট্রিক্রপস এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের মধ্যে হওয়া চুক্তির আওতায় ১০ম (ঐচ্ছিক-১ম) লটের ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এ সার আনবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮০ কোটি ৫৬ হাজার টাকা। প্রতি টন সারের দাম পড়বে ৫৮৪ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।