বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ভস্মীভূত তিন রিসোর্ট ক্ষতি প্রায় ৬ কোটি

মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ আগুন

নিরাপদে পর্যটকরা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মধ্যরাতে সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ আগুন
টেকনাফের সেন্ট মার্টিনে মঙ্গলবার মধ্যরাতে ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে তিনটি ইকো রিসোর্টের ২৬ কক্ষ -সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে মঙ্গলবার মধ্যরাতে সৃষ্ট ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে তিনটি ইকো রিসোর্টের ২৬ কক্ষ। এতে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে কোনো পর্যটক হতাহত হননি। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের। বুধবার রিসোর্ট মালিকদের বরাতে টেকনাফ পুলিশ প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ইকো রিসোর্টে মালিকদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে সেন্ট মার্টিনের গলাচিপা এলাকার বিচ ভ্যালি এবং কিংশুক ও সাইরি ইকো রিসোর্টে আগুন লাগে। পশ্চিম সৈকতের সাইরি ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনাকক্ষ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

1

ধারণা করা হচ্ছে, বৈদু্যতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। এতে সাইরির অভ্যর্থনাকক্ষ, পাশে থাকা বিচ ভ্যালির ১৮ কক্ষ, কিংশুক ইকো রিসোর্টে ৭ কক্ষ পুড়ে যায়। বাতাস থাকায় দ্রম্নত আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জানান। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চেষ্টায় বুধবার ভোর চারটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

বুধবার সকালে এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস বলেন, 'সেন্ট মার্টিনে সাইরি রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে যায়। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষতি হয়েছে বলে জেনেছি। পাশাপাশি সাইরি রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাতও হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবু আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এ ছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।'

বিচ ভ্যালির ইকো রিসোর্টে ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দম্পতি বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় অধিকাংশ পর্যটক রিসোর্টের বাইরে ছিলেন। এ কারণে হতাহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে অধিকাংশ পর্যটকের মালামাল পুড়ে গেছে। তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। কটেজগুলোয় আগুন নিয়ন্ত্রণের বিকল্প কোনো ধরনের ব্যবস্থা না থাকায় সব কটি কক্ষ পুড়ে গেছে।

দ্বীপের বাসিন্দা ও সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'প্রথমে সাইরি ইকো রিসোর্টে আগুন লাগে। এরপর সেখান থেকে দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজনসহ কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, টু্যরিস্ট পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এর মধ্যে কিংশুক ইকো রিসোর্ট পুরোটাই ভস্মীভূত হয়েছে। রিসোর্টের মালিক সরওয়ার আলম পরিবার নিয়ে গত রাতে সেখানেই ছিলেন। মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, 'আমি আমার বউ-বাচ্চা নিয়ে দীর্ঘদিন পরে সেন্ট মার্টিন এসেছি। আমার বাচ্চাদের সামনে তিলে তিলে গড়া স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।'

পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, 'হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নিই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫ কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ, বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি ছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রম্নত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তা ছাড়া আমাদের ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে।'

রিসোর্ট বিচ ভ্যালির মালিক মো. সরোয়ার কামাল বলেন, 'আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল রক্ষা করতে পারেনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা কী করবো?'

সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, 'দ্বীপে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদের মধ্যে রয়েছেন। তার ওপর আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো।'

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, 'আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। তারা আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তা করা যায় সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে