প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর্জেন্টিনার সঙ্গে বাংলাদেশের আবেগময় ফুটবল সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।
রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সিজা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। এ সময় আর্জেন্টিনা সে দেশে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা চালু করতে বাংলাদেশের সাহায্য কামনা করে।
আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনের কথা উলেস্নখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের মধ্যে আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এর ওপর ভিত্তি করে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি। মাঠ প্রস্তুত, আমরা এটাকে অন্য ক্ষেত্রে নিয়ে যেতে পারি।'
প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য পূর্ণ মালিকানা বা যৌথ উদ্যোগে উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ অনুসন্ধান এবং জ্বালানি সহযোগিতার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার কথা বলেন।
রাষ্ট্রদূত সিজা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, 'আর্জেন্টিনা ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতার অনেক ক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়েছে, যা দুই দেশের জন্য উলেস্নখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।'
তিনি এ সময় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে বাংলাদেশের দূতাবাস খোলার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান।
মার্সেলো সিজা বলেন, 'আমাদের যে ভালো অনুভূতি রয়েছে, তাতে দুই দেশের লাভের জন্য আমরা এর সদ্ব্যবহার করতে পারি।'
তিনি উলেস্নখ করেন, 'বর্তমানে আর্জেন্টিনার প্রায় ৭০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য তাদের অনুকূলে রয়েছে এবং তারা বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়িয়ে এই সম্পর্ককে ভারসাম্যপূর্ণ করতে চায়।' আর্জেন্টিনা বর্তমানে বাংলাদেশে সয়াবিন, গম, ভুট্টা এবং কাঁচা তুলাসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো পোশাক আমদানি করে।
মার্সেলো সিজা তুলা, যৌথ বিনিয়োগ, ফার্মাসিউটিক্যালস, টেক্সটাইল, ফুটবল সহযোগিতা (নারীসহ), ক্ষুদ্রঋণ, বাণিজ্য প্রতিনিধিদল, এলএনজি, চাল রোগ ইত্যাদি বিষয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রদূত ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট গুম প্রতিরোধে আর্জেন্টিনার সক্রিয়ভাবে গৃহীত গুম থেকে সব ব্যক্তির সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে (আইসিপিপিইডি) সইয়ের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম প্রতিরোধে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন। এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী সাক্ষাৎ
এদিকে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারডিয়া সিম্পসন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেছেন। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত সিম্পসন জুলাই-আগস্ট মাসের তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলো স্মরণ করেন এবং উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি (জুলাই-আগস্টের গণঅভু্যত্থান) ছিল আবেগময়। এই যাত্রায় ১
আমরা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিলাম।
তিনি বাংলাদেশের মানুষকে 'খুবই উদার এবং অতিথিপরায়ণ' হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এদেশে তার চার বছরের সময়কে 'অসাধারণ' বলে উলেস্নখ করেন।
ড. ইউনূস রাষ্ট্রদূতকে এ বছরের আগস্ট মাসে গণঅভু্যত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, সরকার সেই সময়ে বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা অন্য রাষ্ট্রদূতদেরও আমন্ত্রণ জানাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি একটি ঐক্যমত্য গঠন কমিশনের নেতৃত্ব দেবেন, যেখানে সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
নারডিয়া সিম্পসন অন্তর্র্বতী সরকার এবং তার সংস্কার উদ্যোগের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এসময় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি-বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
'আয়নাঘর' পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা
এদিকে 'আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব' উলেস্নখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বলেছেন, আপনাদের তদন্তে যে ঘটনাগুলো উঠে এসেছে, তা গা শিউরে ওঠার মতো। আমি শিগগিরই আয়নাঘর পরিদর্শনে যাব।'
রোববার বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের (দ্য কমিশন অব এনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসাপিয়ারেন্স) সদস্যদের সাক্ষাতের সময় তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে গুমের ঘটনায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়ে 'জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল' যা 'আয়নাঘর' নামে পরিচিতি পেয়েছে তা পরিদর্শনের অনুরোধ জানান কমিশনের সদস্যরা। প্রধান উপদেষ্টা 'আয়নাঘর' পরিদর্শন করলে গুমের শিকার ব্যক্তিরা আশ্বস্তবোধ করবেন ও অভয় পাবেন বলে জানান তারা। বৈঠকে কয়েকটি গুমের ঘটনার নৃশংস বর্ণনাও প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়।