জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো পথ খুঁজতে গেলে জনমনে সন্দেহ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি আয়োজিত 'বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত করার কোনো সুযোগ নেই। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া ছাড়া গণতন্ত্রের অগ্রগতির সুযোগ নেই। আরও গণতন্ত্রের শুরু ও অগ্রগতির জন্য একমাত্র নির্বাচন ব্যতিত আর কোনো পথও নেই। অন্য কোনো পথ খুঁজতে গেলে জনমনে সন্দেহের উদ্রেগ হবে, জনগণ হতাশ হবে, গণতন্ত্র আবারও মুখ থুবড়ে পড়বে।
বিএনপি নেতা বলেন, দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে তারা বিদায় করেছে। সুতরাং এই দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালিত চলবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠন করতে হবে। এর ব্যতিক্রম কিছু করার সুযোগ নেই। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর জনগণের প্রত্যাশা ছিলো একটি সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রতিনিধিত্বশীল সংসদের মাধ্যমে তারা তার মালিকানা ফিরে পাবে।
আমীর খসরু বলেন, আমরা দুই বছর আগেও যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোকে নিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছি। সুতরাং শেখ হাসিনার পতনের পর আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে, তার প্রস্তাব আমরা আগেই দিয়েছি। সেই কথাগুলোর এখন আলোচনা চলছে, নতুন কোনো কিছু নেই।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন- জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, এনডিপির ক্বারি আবু তাহের ও আব্দুলস্নাহ আল সোহেল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির এস এম শাহাদাত ও সাইফুল আলম, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) খোকন চন্দ্র দাস, এনপিপির নবী চৌধুরী প্রমুখ।
সংস্কারের জন্য তিন মাস সময়ই যথেষ্ট: হাফিজ
এদিকে, বিএনপি অতি দ্রম্নত নির্বাচন চায় জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তার জন্য তিন মাস যথেষ্ট। সুতরাং অন্তর্র্বতী সরকারকে বলব, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার আসার সুযোগ দিন।
গতকাল রোববার দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মেজর হাফিজ এসব কথা বলেন।
মেজর হাফিজ বলেন, '৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি। নির্বাচিত সরকার ছিল না বলে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। আবার কেন নির্বাচিত সরকারের জন্য আমাদের তর্ক-বিতর্ক করতে হবে।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'শুধু শুধু সময় ক্ষেপণ করবেন না। ছয় মাসেই বোঝা গেছে আপনাদের দৌড় কতটুকু? তবুও আপনাদেরকে সম্মান করি। আমরা সব রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঐক্য চাই। ছাত্র-জনতার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আশা করি, এই ঐক্যের পথে আপনারা কেউ দেয়াল তৈরি করবেন না।'
তিনি বলেন, নির্বাচনের কথা বললে উপদেষ্টাদের মুখ কালো হয়ে যায়। মনে হয়, আমরা কোনও অন্যায় দাবি করছি। বিএনপিকে ক্ষমতায় বসান, সেটাও বলছি না। বলছি, আপনারা কিংস পার্টি গঠন করবেন না। যারা রাজনীতি করতে চায়, তারা সরকার থেকে বেরিয়ে রাজনৈতিক দল গড়ে তুলুক।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে মেজর হাফিজ বলেন, তাদের পছন্দের নেত্রী বিদায় হওয়াতে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। এখন বাংলাদেশের মধ্যে প্রবেশ করে আম গাছ কেটে নিয়ে যায়, বাংলাদেশের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা নীরবে অবলোকন করছি। ভুলে যাবেন না, '৭১ সালে যুদ্ধ করে আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি।
তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি, তাকে আমরা সম্মান জানাই। তার কোনো সফলতা দেখতে পাচ্ছি না, তবুও তাকে আমরা সম্মান জানাবো। কিন্তু নাবালকের কথায় আপনি চলবেন না।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ফজলুর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।