রাজধানীসহ দেশজুড়েই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। রোববার দেশের আট জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার দেশের দুই জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবারই জানিয়েছিল, রোববার থেকে এর পরিধি বাড়তে পারে। আজও শীতের তীব্রতা এমনটাই থাকতে পারে। তবে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কম বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
রোববার দেশের যে আট জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বইছে, তার বেশির ভাগই উত্তরের জনপদ। এর মধ্যে ছিল নওগাঁ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও পঞ্চগড়; উত্তরাঞ্চল বাদ দিয়ে আর অন্য দুই জেলা হলো মৌলভীবাজার ও চুয়াডাঙ্গা।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রোববার রাজধানীতেও কমে গেছে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিন এ নগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সেখানে তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, শনিবারের চেয়ে শীতের তীব্রতা অনেকটাই বেড়েছে। সোমবারও তাপমাত্রা প্রায় একই রকম থাকতে পারে। তবে আগামী বুধবার থেকে তাপমাত্রা আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
চলতি মাসে দেশে একবারই মাত্র মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। মৃদু শৈত্যপ্রবাহও খুব বিস্তৃত ছিল না। এ দফায় শৈত্যপ্রবাহ কেমন হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তরে আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, এ দফায় মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা থাকলেও তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা কম।
যদি কোনো এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সেই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে বলে ধরা হয়। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ১ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪ দশমিক ১ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে তা তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আর অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ তখনই হয়, যখন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হয় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে।
নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা:এদিকে, মাঘের মাঝামাঝি সময়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ নওগাঁয় জেঁকে বসেছে শীত। রোববার সকালে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি শীত মৌসুমে নওগাঁর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সকালে কুয়াশার পরিমাণ কমে সূর্যের দেখা মিললেও উত্তরের হিমেল বাতাসে শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে।
নওগাঁ বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, রোববার সকাল ৯টায় বদলগাছীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর নওগাঁয় তাপমাত্রা এত দিন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৮ ডিগ্রি থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সে হিসাবে নওগাঁয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলেছে।
সকালে কুয়াশা কেটে সূর্যের দেখা মিললেও কনকনে শীত অনুভূত হওয়ায় কাজে যেতে পারেননি খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের কারণে শহরে মানুষের আনাগোনাও কমেছে। যারা বের হয়েছেন, তারা গরম কাপড় জড়িয়ে বাইরে যাচ্ছেন।
শহরের তাজের মোড় লিটন ব্রিজের পূর্ব পাশে যমুনা হোটেলের সামনে প্রতিদিন বসে শ্রম কেনাবেচার হাট। সেখানে দিনমজুরেরা কাজের আশায় অপেক্ষা করেন। রোববার সকাল ৯টার দিকে সেখানে কয়েকজন দিনমজুরের সঙ্গে কথা হয়। সাইদুর রহমান নামের এক দিনমজুর বলেন, 'চার দিন ধরে সূর্যের দেখা নাই। অ্যাজকা সকালে সূর্য উঠিছি। কিন্তুক তারপরেও কনকনা শীত লাগোছে। দুই দিন থ্যাকে কাজ পায়নি। অ্যাজকা রোদ ওঠায় কাজ জুটতে পারে।'
সকাল ১০টার দিকে তাজের মোড়ে কথা হয় ভ্যানচালক খবির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ভোরবেলা যখন রিকশা লিয়ে ব্যাইর হই, তখন মনে হছিল ঠান্ডাত হাত-পা জড়ো হয়ে যাছিল। এখন সূর্য ওঠায় অ্যানা ভালো লাগোছে। কয় দিন সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি। অ্যাজকা সূর্যের মুখ দেখা গেছে। কিন্তুক তারপরেও বাতাস বহোছে। ক্যানক্যানে ঠান্ডা লাগোছে।'