শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
প্রাণের বইমেলা

দর্শনার্থী বেশি, বিক্রি কম

বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাট্য প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমি ও গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে হচ্ছে এই উৎসব ২০ দিনে নতুন বই এসেছে ১৯০৫
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দর্শনার্থী বেশি, বিক্রি কম
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃহস্পতিবার বইমেলায় একটি স্টলে বই দেখছেন পাঠকরা -ফোকাস বাংলা

সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় বইমেলার ২০তম দিন বৃহস্পতিবার অনেক শিক্ষার্থী মেলায় আসেন। এরপর সন্ধ্যার দিকেও সাধারণ দর্শকের সমাগম বাড়ে। কিন্তু দর্শনার্থীর তুলনায় বিক্রি বাড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, মেলার শেষ দিকে সাধারণত বিক্রি বেশি হয়। আজ একুশে ফেব্রম্নয়ারি থেকে বিক্রি বাড়বে বলে তারা আশাবাদী। এদিকে, বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা গেছে এদিন নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১১২টি। এ নিয়ে মেলার ২০ দিনে বই এসেছে ১৯০৫টি।

বইমেলায় ২০তম দিনে আগামী প্রকাশনী থেকে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক এম আবদুল আলীমের 'ভাষা আন্দোলনে মওলানা ভাসানী' ও 'ভাষা আন্দোলনে আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী' এবং আবদুন্‌ নূরের 'রক্তস্নাত একুশে' শিরোনামে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম দুটি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন মাসুক হেলাল এবং অন্যটির আনিসুজ্জামান সোহেল।

1

ঐতিহ্য থেকে প্রকাশিত হয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 'অনুবাদসমগ্র'। এতে হোমারের অডিসি, ইবসেনের বুনো হাঁস, অ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব ও হাউসম্যানের কাব্যের স্বভাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিজের অনুবাদ সম্পর্কে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'অনূদিত চারটি রচনার ভেতর বিষয়বস্তুর এবং উপস্থাপনার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে; কিন্তু সবকটিই উচ্চ সাহিত্যিক মূল্যসম্পন্ন রচনা। এদের পাঠকদের ভেতর ভিন্নতা থাকা সম্ভব, কিন্তু সাহিত্যনুরাগীদের জন্য চারটি গ্রন্থই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেই বিবেচনা থেকেই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমি অনুবাদের কাজটি করেছিলাম।'

প্রকাশকরা বলছেন, দর্শক মোটামুটি হলেও এবার এ পর্যন্ত মেলায় বই বিক্রির হার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কম। এমন অবস্থায় বইমেলার সঙ্গে বুধবার থেকে যুক্ত হয়েছে নাট্য প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমি এবং গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে মেলায় হচ্ছে নাট্য উৎসব।

'অমর একুশে নাট্যোৎসব ২০২৫' নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে ১০ দিন ধরে চলবে এই নাট্য উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায় থাকবে দুটি করে নাটকের প্রদর্শনী। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো এখানে নাটকের প্রদর্শনী হয়।

শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, 'আমরা এখন কঠিন একটা সময় পার করছি। এখানে দুই দিকে শত্রম্ন আক্রমণ করছে। এক হচ্ছে ভারত এবং তাদের দোসররা, অন্যদিকে আছে দেশের একদল মানুষ, যারা সন্দেহ পোষণ করে আমাদের নাচ, গান, নাটক নিয়ে। এদের কাছে টেনে অথবা বুঝিয়ে কিংবা অতিক্রম করে আমাদের যে কোনো উপায়ে এগিয়ে যেতে হবে।'

আয়োজনের সভাপতি গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজিদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চ প্রায়ই খালি পড়ে থাকে উলেস্নখ করে শিল্পকলা একাডেমির কাছে আবেদন করেন সেখানে নাটক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে। গ্রম্নপ থিয়েটার ফেডারেশন এর দায়িত্ব নেবে বলে আশ্বাস দেন তিনি। কামাল বায়েজিদ বলেন, 'অনেক তরুণই নাটক করতে চান। তাদের জন্য নাটক করার আরেকটা জায়গা তৈরি হবে।'

এদিন মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'উপন্যাস, 'ঔপন্যাসিক ও রশীদ করীমের উপন্যাসবীক্ষা : কয়েকটি প্রসঙ্গ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মপপশ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হামীম কামরুল হক। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি এবং সাখাওয়াত টিপু। সভাপতিত্ব করেন সুব্রত বড়ুয়া।

প্রাবন্ধিক বলেন, রশীদ করীমের সাহিত্যকর্মের মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যাই সর্বাধিক, সেই অর্থে তিনি প্রথমত ও প্রধানত একজন ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাসে মধ্যবিত্তমানসের দ্বিধান্বিত ও অন্তদ্বন্দ্বময় আত্মস্বরূপের উন্মোচন ঘটেছে।

আলোচকদ্বয় বলেন, রশীদ করীম তার জীবদ্দশায় ব্রিটিশ পর্ব, পাকিস্তান পর্ব ও বাংলাদেশ পর্ব প্রত্যক্ষ করেছেন, ফলে তার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক ব্যাপক। আধুনিক সমাজে ব্যক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো রশীদ করীমের উপন্যাসে প্রবলভাবে উপস্থিত হয়েছে। তিনি সমাজকে অনেক গভীরভাবে বিচার করেছেন। তাঁর উপন্যাসের চরিত্রগুলো পাঠককে মোহবিষ্ট করে এবং পাঠক সহজেই নিজেকে সেইসব চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম করতে পারেন।

সভাপতির বক্তব্যে সুব্রত বড়ুয়া বলেন, রশীদ করীম আমাদের বাংলা সাহিত্যের একজন সার্থক ঔপন্যাসিক। তাঁর সাহিত্য ও সাহিত্যচিন্তা নিয়ে গভীর গবেষণা প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের পাঠকদের সঙ্গে রশীদ করীমের সাহিত্যকর্মের পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ও গদ্যকার শাহাবুদ্দীন নাগরী এবং কবি ইমরান মাহফুজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মো. সোলায়মান চৌধুরী, লেলিনা আক্তার, শাহীন রিজভী, মো. আশরাফুল হক, তাজ ইসলাম, আলতাফ হোসাইন রানা, চঞ্চল শাহরিয়ার, জুবায়ের আন নায়েম এবং আউয়াল খোন্দকার।

আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ৮টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। সভাপতিত্ব করবেন কবি হাসান হাফিজ।

বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অমর একুশে বক্তৃতা প্রদান করবেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে