সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাভারে গ্রেপ্তার ৩

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় সাভারে গ্রেপ্তার ৩

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শনিবার সকালে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এর আগে শুক্রবার তাকে মির্জাপুর থানা থেকে টাঙ্গাইলের পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (মির্জাপুর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'এএসআই আতিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।'

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। পরদিন মঙ্গলবার ভোরে বাসের যাত্রীরা মির্জাপুর থানার পুলিশকে বিষয়টি জানান। সে সময় এএসআই আতিকুজ্জামান থানায় ডিউটি অফিসার ছিলেন। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী যাত্রী ওমর আলী মির্জাপুর থানায় মামলা করার পর শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন। রাতে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯), শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর

গ্রামের ইসমাইল মোলস্নার ছেলে মো. সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ (২৮)।

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস নামের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও যৌন-নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারদের মধ্যে শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিতের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উলস্নাপাড়া থানায় একটি এবং ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রম্নয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহণের একটি (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) বাস ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় বাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিল। রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এবং হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি আবার রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা হয়।

বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে চা-বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চার জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেয় বাসটি। রাত দেড়টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার হাইটেক সিটি পার্কসংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫ থেকে ৬ মিনিট পর হঠাৎ ৮ থেকে ৯ জন যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে।

মামলায় বলা হয়, তাদের মধ্যে তিনজন ডাকাত গাড়ি চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে টানাহেঁচড়া করে কিলঘুষি মেরে তাকে উঠিয়ে নিয়ে পেছনে উল্টা করে বেঁধে রাখে। ডাকাতদের মধ্যে থেকে একজন চালকের আসনে বসে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বাসটি চালিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া সাকিন এলাকার ফুটওভার ব্রিজের কাছে পৌঁছে ডাকাত দলের সদস্যরা লুটপাট শুরু করে।

এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সব মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা গাড়িটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়ায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। এভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা যাত্রীদের মালামাল লুট ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর আশুলিয়ার নন্দনপার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে যাত্রীরা জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। টহল পুলিশ মির্জাপুর থানায় বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন।

তারা মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান। পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠায়। পরে তারা ওইদিনই জামিনে মুক্তি পান বলেও মামলায় উলেস্নখ করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার বলেন, 'মামলা হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন সোর্স ব্যবহার করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল, একটি ছুরি ও ২৯ হাজার ৩৭০ টাকা উদ্ধার করা হয়। বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।'

'ওই বাসে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তাররা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন' বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে