সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

সুনীলের কবিতার বর্ণিল ভুবন

সাগর জামান
  ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সুনীলের কবিতার বর্ণিল ভুবন
সুনীলের কবিতার বর্ণিল ভুবন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র। দুই বাংলায় রয়েছে তার সমান খ্যাতি। বিচিত্র বিষয়ে দু'হাতে লিখে গেছেন তিনি। তিনি বিশ শতকের শেষভাগে সক্রিয় একজন প্রথিতযশা বাঙালি সাহিত্যিক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মৃতু্যর পূর্ববর্তী চার দশক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্ববৈশ্বিক বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত। বাংলাভাষী এই সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসেবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক। তার কবিতার বহু পঙ্‌ক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্ত।

কাব্য এবং গদ্যচর্চার ক্ষেত্রে সুনীল সমান পারদর্শী। সাহিত্যের সর্বস্তরে তিনি তার অনবদ্য দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন সফলভাবে। তিনি কখনো এক বৃত্তের মধ্যে ঘুরপাক খাননি। নির্দিষ্ট বলয়ে আটকে থাকেননি। দুই শতাধিক গ্রন্থের জনক সুনীল গাঙ্গুলী নীল লোহিত কিংবা সনাতন পাঠকের আড়ালে তার নিপুণ কলমের ব্যবহার ঘটিয়েছেন। রাজনৈতিক কলাম মুন্সীয়ানী প্রবন্ধ রচনা করে তিনি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। মাত্র ৪ বছরে বয়সে তিনি বাবার চাকরির কারণে বাংলাদেশের মাদারীপুর থেকে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান। বেড়ে ওঠেন। সাহিত্য জগতে সম্রাটের মতো আবির্ভূত হন। তার সাহিত্য খ্যাতি দুই বাংলায় সমান মহিমায় আলোর মতো ছড়িয়ে পড়ে। তিনি খ্যাতির তুঙ্গে নিজেকে আসীন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুনীল ছিলেন অদম্য, অক্লান্ত আড্ডাবাজ মানুষ। দুই বাংলার লেখকদের সঙ্গে ছিল তার অভিন্ন সখ্য। তিনি বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাকে তার হৃদয়ের দুই ভাগে পরিপূর্ণভাবে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি বাংলা ছেড়ে মাত্র এক বছর প্রবাসী হয়ে স্বদেশের টানে ফিরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতি শিল্প সাহিত্যের ওপর ছিল তার গভীর আগ্রহ। বাংলাদেশের তরুণ কবিদের কবিতাও পড়তেন তিনি। এমনকি অনেককে আর্থিকভাবেও সাহায্য করতেন। সুনীলের বিপুল সৃষ্টিকর্মের একটা অংশজুড়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকরা তার লেখায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

সুনীল ছিলেন খুবই অতিথিপরায়ন, সৌজন্যপ্রবণ মানুষ। সুনীল যেমন ছিলেন কবিতায় উজ্জ্বল তেমনি ছিলেন গল্পে উপন্যাসে আলোকিত লেখক। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদপুরুষ সব্যসাচী লেখকের অভিধায় ভূষিত। তার লেখালেখি শুধু সাহিত্যনির্ভর ছিল না। আনন্দ বাজার পত্রিকা তার সত্যনিষ্ঠ কলামে সমৃদ্ধ হয়েছে। নতুন কবি, লেখকদের তার কবিতা প্রনোদনা জুগিয়েছে। শুধু কবি-সাহিত্যিক নয় প্রেমিক-প্রেমিকারা সুনীলের কবিতার মাধ্যমে তাদের ভাব-প্রেমাবেগ প্রকাশ করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'নীরা' নারী জাতির মধ্যে নানাভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রেমিকরা তাদের প্রেমিকাদের মধ্যে নারীকে খুঁজে পেয়েছেন। সুনীলের কবিতার মূল্যবান লাইন অনেক সময় গল্পকারদের গল্পের শিরোনাম হয়েছে। ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে তিনি যেসব কবিতা লিখেছেন সেসব কবিতা তার নিজস্ব জীবন ছাপিয়ে সমকালকে স্পর্শ করেছে। অসাধু রাজনীতিকদের প্রতারণা, মিথ্যে প্রতিশ্রম্নতি, কথা না রাখার কথা ইত্যাদি বিষয় তার কবিতায় প্রযোজ্য হয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রায়ই স্বদেশের মায়ায় ছুটে আসতেন বাংলাদেশে। এখানকার মানুষের ভিড়ে মিশে যেতেন। তার আপন ভুবনে অন্তরঙ্গ আড্ডায় মেতে উঠতেন। তার ভালোবাসার বিষণ্ন আলোর বাংলাদেশকে দু'চোখ ভরে দেখতেন। ভালোবাসার টানে ফিরে যেতেন শৈশবের সেই গ্রামে। সুনীল একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশর মমতামাখা ভুবনে স্থায়ীভাবে থেকে যাবেন। তিনি প্রয়োজনে মৃতু্যকে বেছে নিতে চেয়েছেন কিন্তু বাংলা থেকে নির্বাসিত হতে চাননি। বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবিতার মাধ্যমে বাঙালি জাতির মনের কথা বলে, মনের মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যখন তার মন খারাপ হওয়ার কথা কবিতায় ব্যক্ত করেছেন, পাঠকরা তখন অবাক বিস্ময়ে নিজের মন ভালো না থাকার অনুভূতিকে উপলব্ধি করেছেন। অর্থাৎ পাঠককুল নিজের অনুভূতি সুনীলের কবিতায় অনুরিত হতে দেখেন। কিংবা ধ্বংসের মধ্য দিয়ে ভালো কিছু নির্মাণের ভাবনায় পাঠকদের তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। উদ্ধৃতি দেওয়া যেতে পারে-

মন ভালো নেই/মন ভালো নেই/,মন ভালো নেই/,

কেউ তা বোঝে না,/সকলি গোপন/,মুখে ছায়া নেই/

চোখ খোলা তবু,/চোখ বুজে আছি/,কেউ তা দেখেনি/

প্রতিদিন কাটে/,দিন কেটে যায়।/আশায় আশায়

আশায় আশায় আশায় আশায়/

এখন আমার ওষ্ঠে লাগে না কোনো প্রিয় স্বাদ/

এমনকি নারী,/এমনকি নারী,/এমনকি নারী

এমন কি সুরা,/এমনকি ভাষা/

মন ভালো নেই,/মন ভালো নেই,/মন ভালো নেই/

বিকেল বেলায় একলা একলা পথে ঘুরে ঘুরে

পথে ঘুরে ঘুরে পথে ঘুরে ঘুরে

কিছুই খুঁজি না,/কোথাও যাই না,/কাউকে চাইনি

কিছুই খুঁজি না/ কোথাও যাই না/

আমিও মানুষ আমার কি আছে অথবা কী ছিল/

ফুলের ভিতরে বীজের ভিতরে যুগের ভিতরে

যেমন আগুন আগুন আগুন আগুন আগুন/

মন ভালো নেই/মন ভালো নেই/ মন ভালো নেই/

তবু দিন কাটে/,দিন কেটে যায়/আশায় আশায়

আশায়, আশায় আশায়।

এভাবে সাহিত্য অনুরাগী মানুষের অনুভূতি সুনীল তার কবিতায় তুলে ধরেন। তার ব্যক্তিগত জীবন আশা-নিরাশার মিশেল স্রোতে প্রবাহিত হয় এবং এই প্রবহমান জীবনবোধ অন্যদের জীবনে একীভূত হয়। আপাতদৃষ্টিতে আমাদের চোখ খোলা থাকলেও আমরা অনেক কিছু দেখি না। সবাই নির্বিকার জীবনে অভ্যস্ত হয়ে থাকি। সমাজের অসঙ্গতি দূর করতে ভূমিকা রাখি না। মানুষের এ ধরনের প্রবৃত্তি দেখে সুনীল বিচলিত হয়েছেন। তার মন ভালো থাকেনি। আশা আর স্বপ্নের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছেন। সুনীলের অবিশ্রান্ত লেখনীতে বিভিন্নতা, বৈচিত্র্যময় বিষয়ের পাশাপাশি এ ধরনের বিষয় ধরা পড়েছে। সুনীল ছিলেন খুবই পরিশ্রমী লেখক। তার কবিতা এবং গদ্যে কোনো অলস্যময়তা চোখে পড়ে না। তার জনপ্রিয়তা প্রচুর। তিনি তার অমিত শক্তিধর লেখনীর মাধ্যমে মানুষের মনের মানুষ ও প্রাণের লেখক হয়ে গিয়েছিলেন। তার সত্তর বছরের জন্মদিনে তার কিছু ভক্তরা একটা পোস্টার প্রকাশ করেছিল। তাতে লেখা ছিল 'এও কি সত্যিরে সুনীলদা সত্তরে'। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে ছিল চির উন্নত তারুণ্য। তিনি মন ও মননে সবসময় তরুণ ছিলেন বলেই তরুণদের তিনি তার ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। প্রাসঙ্গিক কারণে 'কীর্তিবাসের কথা এখানে উলেস্নখ করা যায়। কীর্তিমান লেখক সুনীল তরুণদের মূল্যায়ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয়বর্ষের ছাত্রকালে কীর্তিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনের অনেক সৃজনশীল কাজের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য কাজ ছিল তরুণ কবি সাহিত্যিদের পুরস্কৃত করা। বলা যায়, সুনীল দাপটের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যকে শাসন করেছেন। সাহিত্যের সব শাখাতে তিনি দৃপ্ত বিচরণ করেছেন। কবি সুনীল তার প্রথম উপন্যাস 'যুবক যুবতী'র মাধ্যমে কথা সাহিত্যে কীর্তিমান সুনীল কৃতিত্বের পরিচয় দেন। যুবক-যুবতী তার প্রথম উপন্যাস গ্রন্থ। আত্মপ্রকাশ দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর সেটা গ্রন্থাবদ্ধ হয়। 'যুবক যুবতী' এবং 'আত্মপ্রকাশ' প্রকাশের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন, তিনি কবিতার পাশাপাশি গল্প উপন্যাস ও গদ্য সাহিত্যে সমান দক্ষ। সুনীল সাহিত্য পর্যালোচনা করতে গেলে দেখা যায়, গদ্যের মধ্যে নিহিত আছে কবিতার মেজাজ। এতে বোঝা যায়, সুনীল মনে-প্রাণে ছিলেন একজন সম্পূর্ণ কবি। প্রাসঙ্গিকভাবে তার কবিতার দিকে দৃষ্টিপাত। ব্যক্তিগত হতাশা প্রকট হয়ে ওঠে। বন্ধুর উদ্দেশে তিনি লেখেন- আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি/, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ,/এই কি মানুষ জন্ম? নাকি শেষ

পুরোহিত কঙ্কালের পাশা খেলা:/প্রতি সন্ধ্যাবেলা আমার বুকের মধ্যে হাওয়া ঘুরে ওঠে,/হৃদয়কে অবহেলা করে রক্ত/,মানুষের পায়ের কাছে কুকুর হয়ে বসে থাকি,/তার ভেতরের কুকুরটাকে দেখব বলে/আমি আক্রোশে হেসে উঠি না।/আমি ছারপোকার পাশে ছারপোকা হয়ে হাঁটি।/মশা হয়ে উড়ি একদল মশার সাথে।/খাঁটি অন্ধকারে শ্রীলোকের খুব মধ্যে ডুব দিয়ে দেখেছি দেশলাই জ্বেলে (ও গাঁয়ে আমার কোনো ঘরবাড়ি নেই)।

সুনীল তার কবিতার ক্যানভাসে জাগতিক জীবনের নানা হতাশা অপ্রাপ্তির বেদনার উচ্চারণে মানুষের পশু প্রবৃত্তি, অশুভ কামনা বৈষম্যমূলক মনোভঙ্গির চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। একটি সুস্থ মন, সুন্দর জীবনবোধ, হারানোর বেদনা, সুন্দরকে স্বীকার করতে না পারার, ভালোবাসতে না পারার অক্ষমতা অন্যের কষ্টকে অনুধাবন করতে না পারার ব্যর্থতা তাকে পীড়িত করেছে। এসব কথা চিত্রিত হয়েছে সুনীলের কবিতায়। মানুষ প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছে। রাজনীতিকদের অসততা, দুর্নীতি, ক্ষমতার লড়াই মাঝখানে সাধারণ মানুষ নিস্পেষিত। মিথ্যাচারিতা বেড়ে গেছে সর্বত্র। মানুষকে ঠকাচ্ছে মানুষ। মানুষের মধ্যে মিথ্যে স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছে মানুষ। মানুষের কল্যাণের রাজনীতি নেই। মানুষের জন্য মানুষ নেই। সবাই মিথ্যে বলে। স্বপ্ন দেখায়। কথা দেয়, কথা রাখে না। ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা থেকে হলেও সুনীলের 'কেউ কথা রাখেনি' শীর্ষক কবিতায় এসব অনুষঙ্গের ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া যায়। কেউ কথা রাখেনি,/তেত্রিশ বছর কাটল কেউ কথা রাখেনি/ছেলেবেলায় এক বোষ্টমি/তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে/

বলেছিল শুক্লাদ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে।/

তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবশ্যা চলে গেল/কিন্তু সেই বোষ্টমি

আর এলো না/পঁচিশ বছর প্রতীক্ষায় আছি।/

মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল/,বড় হও দাদাঠাকুর/

তোমাকে আমি তিনপ্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে যাবো/

সেখানে পদ্মফুলের মাথায়/সাপ আর ভ্রমর খেলা করে/

নাদের আলী আমি আর কত বড় হবো?/আমার মাথা এই

ঘরের ছাদ ফুঁড়ে আকাশ স্পর্শ করলে/তারপর তুমি

আমায় তিন প্রহরের বিল দেখাবে?/

এভাবে নানা স্বপ্নের এবং স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনার কথা চিত্রিত হয়েছে সুনীলের বিখ্যাত এই কবিতায়। ব্যক্তিগত হতাশা প্রকাশের মধ্যদিয়ে সমাজের বৈষম্যমূলক চিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। তার এই কবিতায় লক্ষ কোটি মানুষের মনের কথা বলেছেন তিনি। সুনীলের ব্যক্তিগত অনুভব অনেক মানুষের অনুভূতিতে মিশে গেছে। সুনীল হয়ে উঠেছেন মানুষের মনের কবি। মানুষের মনের কথাই তার কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। তার কবিতা অনায়াসে মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছে। সুনীলের কবিতায় প্রেম প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি প্রেমকে প্রসন্ন একটি জায়গায় দাঁড় করিছেন। তার প্রেমের বাণী সততাবদ্ধ হয়েছে। সুনীলের বিবেচনায় প্রেম মানুষকে সত্যবাদী করে। মিথ্যাচারিতা ভুলিয়ে দেয়। তার কবিতায় ভালোবাসা সত্যবদ্ধ হয়ে ধরা পড়েছে। প্রেমের স্পর্শ সবাইকে পাপমুক্ত করে। এরকম উপলব্ধি নিয়ে সুনীল উচ্চারণ করেনঃ এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ/

আমি কী এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?/শেষ বিকেলে সেই ঝুল বারান্দায়/ তার মুখে পড়েছিল দুর্দান্ত সাহসী এক আলো/

যেন এক টেলিগ্রাম/মুহূর্তে উন্মুক্ত করে/

নীরার সুষমা/চোখ ও ভুরুতে মেশা হাসি/,নাকি অভ্র বিন্দু/

তখন সে যুবতীকে/খুকি বলে ডাকতে ইচ্ছে হয়/

আমি ডানহাত তুলি,/পুরুষ পাঞ্জার দিকে/

মনে মনে বলি যোগ্য হও/

যোগ্য হয়ে ওঠো/

ছুঁয়ে দিই নীরার চিবুক/

এই হাত ছুঁয়েছে নীরার মুখ/

আমি কী এ হাতে কোনো পাপ করতে পারি?/

এই ওষ্ঠ বলেছে নীরাকে ভালবাসি/

এই ওষ্ঠে আর কোনো মিথ্যে কী মানায়?/

সুনীল জীবনকে উপভোগ করেছেন সাহিত্য রসের আবিষ্টতায়। জীবনের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে কৌতুক করেছেন। তার মধ্যে সংকীর্ণতা ছিল না কোনো বিষয়ে। তিনি মুক্ত মানুষ ছিলেন। সে কারণে তার কবিতা হয়ে উঠেছে বোধসাধ্য, কালজয়ী।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বিশাল জগতে সুনীল আকাশের মতো শোভা মেলেছেন, আলো ছড়িয়েছেন। দখল করে রেখেছেন এ অনন্য ভুবনকে। বিরল প্রজ এই শক্তিমান লেখকের চিরপ্রস্থান সাহিত্য অনুরাগী প্রতিটি মানুষকে নীল বেদনায় নিমজ্জিত করেছে। ভাসিয়ে দিয়েছে শোকে। তবু তিনি বেঁচে থাকবেন বিপুল সৃষ্টি সম্ভারের মধ্যে, পাঠকের হৃদয়ে। সুনীলের সাহিত্যকর্ম আপন আলোয় অনির্বাণ আলো ছড়াবে এমনটাই মনে করেন তার ভক্তকুলরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে