আমি আর নির্ঝর একই এলাকায় হেঁটে, চলে, নেচে গেয়ে, পুকুরে ডুবিয়ে চুবিয়ে গোসল করে বেড়ে ওঠা দুই বন্ধু। বৈশাখের তপ্ত রোদে শান বাঁধানো পুকুরের উপর হিজল ফুলের ঢেউ খেলানো কার্পেট ভাঙা-জোড়া নিয়ে দু'জনের মধ্যকার চলতো তুমুল লড়াই। আমি চাইতাম হিজল ফুলের ভাসমান বন্ধন ভেঙেচুরে ছিন্ন ভিন্ন করে নিজে কিছু কুড়িয়ে নিতে। নির্ঝর তার বিপরীত। ও শূন্যতা পছন্দ করত না। যখনি হিজলের লাল কার্পেটে শিশিরের স্পর্শ দেখতো কেমন যেন ভাবুক হয়ে উঠত। আমার দুষ্ট দৃষ্টিতে পেরেক ঠুকে দিত, যাতে ও প্রান্তে না যাই। জ্যৈষ্ঠের পুকুর ডুবানিও ছিল মনে রাখার মতো। নির্ঝরের বাবা অর্থনৈতিকভাবে ছিল বেশ সাবলম্বী। বাজারে নামকরা আড়তদার তিনি। পাকা ব্যবসায়ী। তার বাড়ির পাশ ঘিরেই তিনি শান বাঁধানো পুকুর করেছেন। পুকুরপাড় জুড়ে আম, তাল, গাব, হিজল, জাম, মেহগনি ইত্যাদি গাছের বাহারি সৌন্দর্য। সারা গ্রামের মানুষজন এই পুকুরের দুই ঘাটে গোসলসহ যাবতীয় ধোয়ামোছার কাজ করত। জ্যৈষ্ঠের আম, আর ভাদ্রের তাল পুকুরে আমাদের দু'জনের খুনসুটির চিত্র পটে আঁকা ছবির মতো জীবন্ত গ্রাম্যবেলায়। পড়াশোনায়ও নির্ঝর ছিল বেশ এগিয়ে। চেহারায় অমলিন স্নিগ্ধতার ছোঁয়া, নাটকীয় জুলফি, শান্ত। আর আমি ধূসর কালো মেঘ, তবুও কেউ কেউ স্কুল জীবনে লাভ লেটার দিয়েছিল বৈকি; মাধুবী লতা বিধর্মী হয়েও কেন যে আমাকে প্রেমপত্র দিয়েছিল তা আমার আজো অজানা! তবে সেই চিঠিটা কিছুদিন বুকপকেটে যত্নে রেখেছিলাম- কেন রেখেছিলাম তার উত্তরটা আজো খুঁজে পাইনি। কিন্তু এ জীবনে এসেও আমি লে হালুয়া! একটা মেয়েও আমার প্রেমে পড়েনি, ভাবা যায়! স্কুল-কলেজ জীবনের পূর্ণাঙ্গ পাতা শেষ করে দুই বন্ধু ভাগ্যক্রমে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যাই। নির্ঝর ফিজিক্স আর আমি ফ্যাকাল্টি অব ফার্মাসিতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন ছিল, নির্ঝরের ভাগ্যে জুটলো ফজলুল হক হল আর আমার শহীদুলস্নাহ হল। দুর্ভাগ্য এসে কপাল ছুঁয়ে দিল এখানেই। তবে হল দুটো কাছাকাছি হওয়ায় আসা-যাওয়া লেগেই থাকত। আগের মতোই একসঙ্গে চলা, লাইব্রেরিতে সময় কাটানো কিংবা মধুর ক্যান্টিনে বসে চা খেতে খেতে দর্শন আর রাজনৈতিক আলাপে ভ্যাপসা গরমেও জমে খীর হওয়া বানোয়ারি গল্পে টুইস্ট হয়ে এলো নদী। নদী ফিজিক্স ফার্স্ট ইয়ারে নির্ঝর আর আমি তখন থার্ড ইয়ার। বৃষ্টিভেজা এক খিচুড়ি সকাল। কিন্তু খিচুড়ি পাবো কোথায়? মধুর ক্যান্টিনে ২৫ টাকায় একটা পাটিসাপটা আর ১০ টাকায় এক কাপ রঙ চা নিয়ে বসে পড়লাম। মধুর ক্যান্টিনে যে চড়া দাম! খাবার খেতে গেলেও কয়েকবার ভাবি কোনটার দাম একটু কম। পাটিসাপটা খেতে খেতে প্রায় অর্ধচন্দ্রাকার হয়ে এলে নির্ঝর নদীর হাত ধরে ভেতরে ঢুকলো। সেদিনই নদীর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ধবধবে সাদা জুঁই ফুলের মতো সুবাসিত দেহ থেকে কেমন যেন একটা আদুরে মখমলি ঘ্রাণে ভেতর নড়েচড়ে উঠল। পড়েছিল সাদা থ্রি-পিচ, পিঠের উপর দোলানো চুল, নরমাল পলিশবিহীন মুখ, ন্যাচারাল ঠোঁটের এক ঝলক হাসিতে আমি আধমরা তখনই। একবারের জন্যও মনে হয়নি ও তো নির্ঝরের হাত ধরে এলো আমার সামনে। কেন মনে হয়নি জানি না। মনে হয়েছে নির্ঝর এতদিনে আমার প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছে। ও আমার শূ্ন্যতার জায়গাটা ফিল করতে পেরেছে। নদী ঠিক আমার মনের মতো, আমার দেখা প্যারাডাইস। লাদাখের প্যাংগং-লেক, বারোস আইল্যান্ড, উইস্টেরিয়া টানেল। ওর চোখ দুটি ছিল দীঘিনালা বিহারের মতোই সুন্দর, শান্ত এবং স্নিগ্ধ। কেবলই ডুবে যাচ্ছিলাম ওতে। পরিচয়ের প্রথম দেখাতেই নদীর প্রেমে পড়ে যাই, নদীও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়, বন্ধুর বন্ধু মানে আমারও বন্ধু। দুই বন্ধু মিলে সিনেমা দেখা, টিএসসির আড্ডায় এখন নদীকেও পাশে পাব নিশ্চয়ই। অধিকতর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে তেমন বিশেষত্ব না থাকলেও আমাদের ঢাবি ক্যাম্পাস ছিল অনন্য। রাশিয়ান ফটোগ্রাফার মুরাদ ওসমানের ফলো মি সিরিজ নিয়ে কাজ করার সময় নদী একবার আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যকে নতুন রূপে দেখাবার জন্য। সেই ছোঁয়া হাত যেন আমার হৃদয়ের গলিতে বরফ বাতাস ছড়িয়ে দিয়েছিল। মোবাইলের লাইম লাইটে তখন নদীর ছবিই দেখি। রুম শেয়ার করেছিলাম ইমরুলের সঙ্গে। ইমরুল জুনিয়র। তাই সব সময় একটু আনত স্বরে বড় ভাই সম্বোধন করে। নদীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করার আগেই আমি নদীর ফলোয়ার। হয়তো সে কখনো খেয়ালই করেনি। অতঃপর মন চাইলে কখনো সখনো হাই-হ্যালো। ইমরুল বুঝে আমাকে। জুনিয়র হলেও ছেলেটা বেশ ট্যালেন্টেড। বোটানির ছাত্র। চারুকলায় বেশ পারদর্শী। তাই হয়তো মনের রং রূপ রসের ইতিহাস বর্ণনা করতে বেশ পটু। একদিন মজার ছলে বলেই ফেললাম ওকে নদীর কথা। নদীর জন্মদিনে ওকে দিয়ে একটি ছবি আঁকিয়ে নদীকে গিফ্ট করব ভেবেছিলাম। সেই সুযোগে ইমরুল আমার পেট থেকে কথা বের করে নেয়। অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হলাম ভালোবাসি নদীকে। ভ্রম্ন কুচকালো ইমরুল। কারণ জিজ্ঞেস করলাম, বলল না কিছুই। এড়িয়ে গেলাম। ওকে জানালাম আগামী পরশুদিন নদীর জন্মদিনের কেক কাটবো আমার রুমে। ফজলুল হক হল থেকে নির্ঝরও আসবে। তুইও থাকিস কিন্তু, তোর আঁকা পেইনটিংটাই হবে ওর জন্য সেরা উপহার দেখিস। আচ্ছা বলে ইমরুল অদ্ভুত করুণার দৃষ্টি ছুড়ে মারল। বুঝলাম না কিংবা পাত্তা দিতেও চাইলাম না। দু'দিন পর বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে দেখতে আসছে খবর পেয়ে। শহীদুলস্নাহ হলের আদিত্য আর ইমরুলের রুমে গেস্ট আসবে। কৌতূহলের শেষ নেই, সকাল থেকেই আয়োজন। বিকালে কেক কাটা। আমার উদ্দেশ্য ছিল আজই মনের যত কথা আছে সব বলে দেব নদীকে। নদী যে আমার কতটা গভীর ফিলিং এ প্রতিনিয়ত ভেসে বেড়ায়! হয়তো মেসেঞ্জারে একটি বাটন চেপেই জানাতে পারতাম, কিন্তু নাহ্। এতে প্রপোজ করার আনন্দই নেই। পড়াশোনা শিকেয় তুলে বেশ ক'দিন ধরে নদী নদী করে পাগলপ্রায় অবস্থা শুধু আজকের দিনটির জন্য। নির্ঝরের এক ফোন কলে নদীর জন্য আপেক্ষিক ভালোবাসায় জমানো গ্রিনল্যান্ডের লাখ কোটি টন বরফ গলে গিয়েছিল আমার দ্রোহের উষ্ণতায়। এ যেন বরফ গলনের ভয়াবহ তোড়ন। কালেভদ্রে শুষ্ক বসন্ত নিয়ে আদিত্য বাঁচবে না, বাঁচতে পারে না। মেজাজ গরম, ক্লান্ত পাগলের মতো বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। আমার অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনে ইমরুলও পিছু নেয়। হন্তদন্ত হয়ে ছুটতে ছুটতে কলাভবনের সামনে এগুতেই নির্ঝর আর নদীর সঙ্গে দেখা। এইতো আদিত্য বলে বুকে জড়িয়ে কানে ফিসফিস করে আমার মরণ যন্ত্রণার বিষটা ঢেলে দেয় নির্ঝর। ভেতরের শূন্যতাকে বাইরের রূপে টেনে আনার ভঙ্গি- জানা ছিল না আমার। স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না তবুও বেগুনি শাড়িতে নীল পাড়ের কামিনী মায়ায় অপূর্ব দেখতে লাগছিল নদীকে। নদীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত মোড়ানো ছিল কেবল মায়া আর মায়া। আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। নদী দুষ্টুমির ছলে আমাকে বলল 'আদিত্য আপনার সারপ্রাইসড গিফট ডিও রইলো, একদিন চেয়ে নিব'। আজ আমাদের একা ছেড়ে দিন। ভূমিকম্পের এক ধাক্কায় যেন টলে পড়ছিলাম। ইমরুল পেছন থেকে টেনে নিয়ে আমাকে বসালো স্যাডো ক্যাম্পাসে। ইতস্তত ইমরুল বেশ শাসনের সুরেই এবার বলা শুরু করল, আমি জানতাম ওদের দু'জনের প্রেম আছে, কত জায়গায় ওদের বেশ ঘনিষ্ঠ দেখেছি। প্রেমের সম্পর্ক না থাকলে বুঝি! আপনি কেন জানতেন না সেটাই আমি জানি না। হঁ্যা, নদী যখন বলেছে আমাদের একলা ছেড়ে দিন তার মানে হয়তো আছে। হয়ত না। হয়ত না- আছে আছে- নিশ্চয়ই আছে। না, থাকবে না, থাকতে পারে না। কেন থাকবে! দুটো মানুষকে যখন একলা ছেড়ে দিতে বলা হয় তখন বুঝতেই হবে কিছু না কিছু আছে, তাই নারে আদিত্য?
ওই স্পটের কথা আর মনে নেই। যখন চোখ খুলি দেখি রুমটার সাজ অনেকটা মলিন হয়ে গেছে। ইমরুলের থাকার সাইটা ধ্বংসস্তূপের মতো। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ রুমবন্দি করে রাখলাম নিজেকে। ভেতরটা নানান চিন্তায় বিকল হয়ে যাওয়ার অবস্থা। খাওয়া-দাওয়া ভার্সিটির ক্লাস এখন উড়ে যাওয়া খেরো খাতার পাতা যেন। এক সপ্তাহ পর খোঁজ নিতে এলো নির্ঝর, মোবাইল ফোন অফ দেখে বেশ উদ্বিগ্ন হয়েই খোঁজ নিতে এলো। ভেবেছিল আমি অসুস্থ। ভালো না লাগা সময়কে ভালো লাগানোর উপায় খুঁজে বের করলাম দু'জন মিলে। নির্ঝর প্রস্তাব দিল কোথাও ঘুরে আসার। বললাম, যদি পারতাম ছেলেবেলার সেই পুকুর ঘাটে চলে যেতাম। তাতে কি! পাখির চোখে বিশ্ব দেখার মতো আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক দর্শনীয় জিনিস আছে। চল, বেরুলেই মন ভালো লাগবে। আমি বললাম চল, তবে আমি পুকুরই দেখবো, পুকুরেই গোসল করব।
নির্ঝরও নির্দ্বিধায় রাজি হয়ে গেল। শহীদুলস্নাহ হলের পুকুরটির ইতিহাস কম বেশি আমাদের সবারই জানা। পুকুরটির বয়স আনুমানিক দেড়শ' বছর। বাস্তব অবাস্তব মিলিয়ে কত কল্পকাহিনী এই পুকুরকে ঘিরে! তবুও নির্ঝর যেতে রাজি আমার ইচ্ছে পূরণের জন্য। ফিজিক্স, ফার্মাসির স্টুডেন্টরা এসবে তেমন একটা ভ্রম্নক্ষেপ করে না বললেই চলে। নির্ঝরকে নিয়ে চলে গেলাম শহীদুলস্নাহ হলের পুকুর পাড়ে। কিছুক্ষণ বসলাম। ভালো লাগছে না, অস্থির লাগছে। বললাম গোসল করব। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় নির্ঝর নিষেধ করল। তবুও নামতে থাকলাম। ও ভয় দেখাল। 'মানুষখেঁকো পুকুর' কিন্তু মনে রাখিস- আমি আরো নামতে থাকলাম। এক মুহূর্তে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। নির্ঝর আমাকে খুঁজতে খুঁজতে একেবারে মাঝ পুকুরে চলে গেল। ওর প্রতিটি শব্দ আমার কানে এসে পৌঁছেছে কিন্তু আমি কোনো সাড়া দেইনি। এক সময় নির্ঝরের কাছ থেকে আর কোনো শব্দ ভেসে আসছিল না অথচ আমার ভেতরের লু্য ঝড় আমার মুখ বন্ধ করে দেয়। আমি কোনো শব্দ করিনি। একটা অতৃপ্ত আত্মার সংমিশ্রণে আমি ফিরে আসি হলে। কিছু বাজপাখির চিৎকার তাড়া করছিল আমায়, সঙ্গে অন্ধকার কিছু প্রচ্ছায়া, বিকট শব্দের আত্মচিৎকার। মাথার ভেতর প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়। ভেজা কাপড় ছেড়ে কোনো প্রকারে বিছানায় শুয়ে পড়ি। হলের বাইরে প্রহরার ফাঁকে ঢুকে পড়া লেজ বাঁকানো কুকুরের চরাচর ব্যপ্ত শীৎকার বিরক্তির জন্ম দিচ্ছিল। সেদ্ধ ভাত দ্বিতীয়বার সেদ্ধ করার মতো মগজ উপচায়ে পরতে পরতে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ গাড়ি এসে থামলো আমার সিথান বরাবর। কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা ঠিক যেমন প্রশাসনিক গাউন জড়ানো। নিরাপত্তার গার্ড ঝুলানো বুকের আইডি কার্ডটি স্বচ্ছ। অন্যসব অন্ধকারের পাপ তাপ। আমার দুই হাত পেছনে বেঁধে নিয়ে গেল লতাপাতাবিহীন এক শুকনো বনে। চারিদিকে কেমন যেন এক রক্তাক্ত গুমোট গন্ধ। হৃৎপিন্ডটা হাতের তালুতে নিয়ে হাঁটছি। নিঃশ্বাসগুলো বাইরে বের হচ্ছে না কিংবা ভেতরে দুর্গন্ধের বদল হাওয়া খুঁজছি। হঠাৎ তারা আমাকে নিক্ষেপ করল এক অন্ধকার গুহার ভেতর। আমার শরীরটা কোনোরকম আটকে আছে যেন। নিঃশ্বাসের নিঃসরণ হচ্ছে না। অন্ধের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি এক চিলতে রোদ্দুর। আমার ঠোঁট লালায়িত রক্তবর্ণ হয়ে ঝুলছে পিঠের উপর। হাতে পায়ের জড়তায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বেঁচে থাকার আশায় যখন হতাশ তখন সাবান জলের মিশ্রিত বমিতে নিক্ষেপ করে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। অতঃপর মাটির আস্বাদে দেহটি হেলেদুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শিরদাড়া আবার নুয়ে আসে উপরের দৃশ্যটি দেখে- যা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। পাহাড় সমান দেহ সমৃদ্ধ একটি লতানো সাপ এতক্ষণ আমাকে গিলে রেখেছিল অতঃপর আমি এখানে। অদ্ভুত আর প্রকান্তদেহী সাপ বলতে শুরু করল 'তোর মতো নষ্ট খাবার আমার পেটে হজম হলোনা, তাই, ফেলে দিয়ে গেলাম'। হঠাৎ আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল। কি অদ্ভুত কান্ড ঘটে চলেছে একের পর এক! পৃথিবীতে এত বড় সাপ হয় নাকি! আর কি করে আমাকে গিলতে পারে, কী ভয়ংকর ! আবার কথা বলছে। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠলাম। কয়েক মিনিট থ' হয়ে বসে রইলাম। কি ছিল সবটা। জলের ভেতর মাছ উপরি কোটরে থেকে থেকে যেমন টিপটিপ করে হঠাৎ হঠাৎ নিঃশ্বাস নেয় আমিও তেমনভাবে পৃথিবী পাঠ করতে গিয়ে দেখি আসলে সাপ কোনো দিন এত বড় হয়নি; হয় না কখনো। ছোট হয়ে গিয়েছিলাম আমিই। এতটা ছোট; এতটাই ছোট যে, আমি খেয়ে ফেলেছিলাম আমার অহম, আমার বিবেক। ছুটে গিয়ে দাঁড়াই শহীদুলস্নাহ হলের পুকুরপাড়। দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে খুঁজতে থাকি নির্ঝরকে। ততোক্ষণে ইমরুল এসে খবর দেয় গতরাতে অজ্ঞান অবস্থায় নির্ঝরকে হাপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
এখন ওইখানেই আছে। ছুটে যাই হাসপাতাল, পা চলছিল না। তবুও যেতে আমাকে হবেই। পুরোটার জন্য আমিই দায়ী। কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে ওকে দেখে চোখের এবং বুকের কান্না থামাতে পারিনি। নির্ঝর আমার দিকে তাকিয়ে ছিল শুধু। এই চাহনিটা ঠিক কেমন ছিল আমি জানি না। তবে আমার জন্য এ যেন কলিজাপোড়া যন্ত্রণা। ফিরে আসা মুহূর্তে নদীর হাত নির্ঝরের বুক ছুঁয়ে বন্ধুত্বের সেতুতে এঁটে দেয়
এক নির্ভেজাল টোলপস্নাজা।