বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে আবারও চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ৩১ মে ২০২৩, ০০:০০
ফেডারেশন কাপে মঙ্গলবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপো জয়ের পর মোহামেডানের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস -বাফুফে

দীর্ঘ ১৪ বছরের অপেক্ষা। ফেডারেশন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে অবশেষে আবারও দেখা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী-মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। পুরো ম্যাচ জুড়ে দু'দলই খেলল নিজেদের সেরা ফুটবল। কিন্তু ১২০ মিনিটেও হলো না ম্যাচের ফলাফল। শেষ পর্যন্ত কিনা সেই ১৪ বছর আগের মতোই টাইব্রেকার। আলফাজের শিষ্যরা পারলেও টাইব্রেকারে সেরা হতে পারলেন না মারিও লেমোসের শিষ্যরা। মঙ্গলবার কুমিলস্নার ভাষা শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীকে টাইব্রেকারে (৪-৪) ৪-২ গোলে হারিয়ে এক যুগেরও বেশি সময়ের শিরোপা খরা ঘুচিয়েছে মোহামেডান।

টাইব্রেকারে গোল করেন মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতে, আলমগীর কবির রানা, রজার ও কামরুল। মিস করেন শাহরিয়ার ইমন। আবাহনীর পক্ষে গোল করেন- এমেকা, ইউসেফ। মিস করেন রাফায়েল অগাস্তো, কলিন্ড্রেস। নির্ধারিত সময়ে একাই চার গোল করেন মোহামেডানের মালীর ফরোয়ার্ড দলীয় অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে। সবশেষ ২০০৯ সালে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঢাকা আবাহনীকে টাইব্রেকারে (০-০) ৪-১ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান।

ঘরের ফুটবলে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেনি অনেকদিন। কুমিলস্নায় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। উপলক্ষ আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ। 'কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমান-সমান'। আবাহনী-মোহামেডানের সেই সোনালি যুগের ছায়াই যেন দেখতে পেলেন কুমিলস্নার ফুটবল দর্শকরা। দারুণ লড়াই হলো পুরো ১২০ মিনিট জুড়ে। তারপরও ভাগ্য নির্ধারিত হলো টাইব্রেকারে। ম্যাচ শুরুর ১৮ মিনিটের মাথাতে লিড নেয় আবাহনী। বক্সের বাইরে থেকে এমেকার বাড়িয়ে দেওয়া বল পেয়ে বা পায়ের কোনাকোনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম (১-০)। ২৯ মিনিটে আবারও বলের জোগান দেন এমেকা। শট ও নেন ফাহিম। তবে এবার আর পরাস্ত করতে পারেননি মোহামেডানের গোলরক্ষককে। ৩৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার আরও একটা সুযোগ এসেছিল আকাশি-নীলদের। তবে কলিন্ড্রেসের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি এমেকা। ৪৩ মিনিটে গোলরক্ষককে ওয়ান টু ওয়ান পজিশনে পেয়ে সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় গোলটি আদায় করে নেন কোস্টারিকান ফুটবলার ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে বক্সে লং পাস দেন মোহাম্মদ হৃদয়। কলিন্ড্রেসের পাশেই ছিলেন মোহামেডানের ডিফেন্ডার মুরাদ হাসান। তাকে কাটিয়ে আগুয়ান গোলরক্ষকের পাশ দিয়েই ডান পায়ের দারুণ শটে লক্ষ্যভেদ করেন কলিন্ড্রেস (২-০)। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে (৪৫+৩) কলিন্ড্রেসের ফ্রি কিক ফিস্ট করে পোস্টের ওপরে পাঠিয়ে দেন সাদা-কালোদের গোলরক্ষক। এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় ঢাকা আবাহনী।

প্রথমার্ধে আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেলকে বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুটি গোল আদায় করে নেয় মোহামেডান। ৫৭ মিনিটে ব্যবধান কমায় সাদা কালোরা। বক্সে বল পেয়ে ডান পায়ের বাক খাওয়ানো শটে আবাহনীর জাল কাঁপিয়ে দেন মোহামেডানের অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে (২-১)। ৫৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে করা মোহামেডানের এক ফুটবলারের শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল। তবে বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি বক্সের ডান প্রান্ত থেকে শাহরিয়ার ইমন বল বাড়িয়ে দেন সতীর্থের উদ্দেশ্যে। দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন সুলেমান দিয়াবাতে (২-২)। প্রথমার্ধে যে ম্যাচ হারের আশঙ্কায় ছিল মোহামেডান। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল আদায় করে সেই দলকেই শিরোপার স্বপ্ন দেখান সুলেমান দিয়াবাতে। ৬৬ মিনিটে আবারও ম্যাচে লিড নেয় আবাহনী। বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের শট ফিরিয়ে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক। ফিরতি বলে আবারও শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এমেকা (৩-২)। আবারও উলস্নাসে ফেটে পড়ে আবাহনী গ্যালারি। ৮৩ মিনিটে ডান প্রান্তের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল বক্সে জটলার মধ্যে থেকে হেডে আবাহনীর জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক করেন সুলেমান দিয়াবাতে (৩-৩)। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ৩-৩ গোলের সমতায় শেষ হওয়াতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। ৯৫ ও ৯৬ মিনিটে আবাহনীর পর পর দুটি আক্রমণ রুখে দেন মোহামেডানের গোলরক্ষক সুজন। ১০৬ মিনিটে মোহামেডানের সুলেমান দিয়াবাতেকে আটকে দিতে গিয়ে ফাউল করে বসেন সোহেল। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। সুলেমান দিয়াবাতের স্পট কিক আশ্রয় নেয় আবাহনীর জালে (৪-৩)। ১১৮ মিনিটে রহমত মিয়া দারুণ গোলে ম্যাচে ফেরায় আবাহনীকে (৪-৪)। অতিরিক্ত সময়েও সমতায় শেষ হওয়াতে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৪-২ গোলে জিতে মোহামেডান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে