বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিসিবি থেকে যতটা পান, ততটা কি দিতে পারছেন শান্ত?

ক্রীড়া ডেস্ক
  ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
বিসিবি থেকে যতটা পান, ততটা কি দিতে পারছেন শান্ত?
বিসিবি থেকে যতটা পান, ততটা কি দিতে পারছেন শান্ত?

চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে নাজমুল হোসেন শান্তকে তিন ফরম্যাটেই জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে বেশ আশা ও স্বপ্ন নিয়েই টি২০ বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সুপার এইটে একের পর এক হতাশাজনক পারফরম্যান্সে লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিয়েছে টাইগাররা।

বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইটের শেষ ম্যাচে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও উল্টো ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। টাইগারদের এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর দেশজুড়ে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ ক্রিকেটাররা। যেখানে অন্যতম মুখ নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক হওয়ায় ব্যর্থতার দায় তারই সবচেয়ে বেশি।

1

সাধারণত একজন কর্মচারীর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে তাকে বেতন দেয় প্রতিষ্ঠান। বিসিবি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন পান চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা। তবে সেই অনুযায়ী তারা কতটা পারফর্ম করেন? আসলেই কি যতটা পান, ততটা দিতে পারছেন অধিনায়ক শান্ত?

বিসিবির সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে প্রতি মাসে ৯ লাখ ১০ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন শান্ত। এছাড়া টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০-তে প্রতিটি ম্যাচ খেলার জন্য যথাক্রমে ৮ লাখ, ৪ লাখ ও আড়াই লাখ টাকা করে পান তিনি।

এ বছর জুন পর্যন্ত শান্ত দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন। অর্থাৎ শুধু ম্যাচ ফি থেকেই তিনি পেয়েছেন মোট (টেস্টে ১৬ লাখ, ওয়ানডেতে ২৪ লাখ ও টি২০-তে ৪৫ লাখ) ৮৫ লাখ টাকা। আর বেতন বাবদ তার আয় ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

অর্থাৎ ম্যাচ ফি ও বেতন মিলিয়ে এ বছর ২৩ ম্যাচে বিসিবির কাছ থেকে সবমিলিয়ে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন। কিন্তু তার কাছ থেকে বিনিময়ে কী পেয়েছে দেশের ক্রিকেট?

টেস্ট দিয়েই শুরু করা যাক। এ বছর দুই টেস্টের চার ইনিংসে ৮ গড়ে ৩২ রান করেছেন শান্ত। শুধু ম্যাচ ফি হিসাব করলে ৩২ রান থেকে তিনি পেয়েছেন ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ রানপ্রতি ৫০ হাজার টাকা!

ওয়ানডেতে ৩ ম্যাচ খেলে শান্তর রান ১৬৩। এখানে একটি অপরাজিত সেঞ্চুরির সুবাদে গড় যথেষ্ট ভালো (৮১.৫)। তবে ম্যাচ ফি হিসাব করলে রানপ্রতি তিনি পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭২৪ টাকা (প্রায়)।

এ বছর বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি খেলেছে টি২০। এই ফরম্যাটে ১৮ ম্যাচের ১৭ ইনিংসে ৩০৬ রান করেছেন শান্ত। ১০০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা তার সর্বোচ্চ সংগ্রহ অপরাজিত ৫৩। অর্ধশতক সাকুল্যে সেই একটি। ১৯.১৩ গড়ে রান করেছেন টাইগার কাপ্তান।

৪৫ লাখ টাকা ম্যাচ ফি পাওয়া শান্ত ৩০৬ রান হিসেবে প্রতি রানের জন্য পেয়েছেন ১৪ হাজার ৭০৫ টাকা। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি রান করেছেন ৫০১, ম্যাচ ফি থেকে গড়ে রান প্রতি পেয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার (১৬,৯৬৬) টাকা।

আর বেতনসহ ধরলে অঙ্কটা বিশাল। এ হিসেবে দেশের জন্য করা প্রতিটি রানের জন্য ২৭ হাজার ৮৬৪ টাকা করে পেয়েছেন শান্ত। বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্জন টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইটে ওঠা। এর আগে জিম্বাবুয়ের কাছে ঘরের মাঠে হার, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হার ও সেমিতে খেলার সেরা সুযোগ পাওয়া ম্যাচে লজ্জার হার।

পারফরম্যান্সই নাকি ক্রিকেটারদের হয়ে কথা বলে। নাজমুল হোসেন শান্তর অধীনে বাংলাদেশ খাতা কলমে বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ জিতলেও বাস্তবে দলের অবস্থা কেমন তা যেকোনো ক্রিকেট ভক্তই জানেন। এমনকি তিনি নিজেও পারফর্ম করতে ব্যর্থ।

শুধু শান্ত নন, জাতীয় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের অবস্থাই অভিন্ন। দুয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই পারফরম্যান্সে ছন্নছাড়া হলেও বেতন পাচ্ছেন ষোলআনা। এত প্রাপ্তির পরও ক্রিকেটারদের দায়বদ্ধহীনতায় দেশের ক্রিকেটভক্তরা যারপরনাই ব্যথিত।

যাদের আবেগ বিসিবির আয়ের মূল উৎস, যেখান থেকে মূলত বেতন পান ক্রিকেটাররা, সেই সমর্থকদের কি প্রাপ্যটা ঠিকঠাক বুঝিয়ে দিতে পারছেন শান্ত বা জাতীয় দলের অন্যরা? মাস ও ম্যাচ শেষে নিজেদের এই আয় পকেটে ঢোকার সময় একবারও কি তাদের মনে পড়ে হারের পর অশ্রম্নসজল সমর্থকদের কথা?

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে