এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে চার-ছক্কায় ঝড় তুলেছিলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। তার নব্বুই ছাড়ানো ইনিংসে দুইশোর কাছে পুঁজি গড়েছিল ফরচুন বরিশাল। ওই পুঁজি নিয়ে তাসকিন আহমেদ, জিসান আলমরা শুরুতেই ব্যাকফুটে ঠেলে দেন ফরচুন বরিশালকে। পরে চরম বিপাকে থাকা অবস্থায় জ্বলে উঠেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ আর ফাহিম আশরাফ। ১১ বল আগেই ম্যাচ জিতে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বরিশাল।
সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচে নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। আগে ব্যাট করে ইয়াসিরের ৪৭ বলে ৯৪ রানে ভর করে ১৯৭ রান করেছিল রাজশাহী। ১৮.১ ওভারে ওই রান পেরিয়ে জিতে বরিশাল। ২৬ বলে ৫ চার, ৪ ছক্কায় ৫৬ করে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউলস্নাহ। ২১ বলে ৭ ছক্কায় ৫৪ করেন ফাহিম।
জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ফরচুন বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৫৮ রান। ১৬তম ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৯ রান তুলে সেই সমীকরণ সহজ করেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। পরের ওভারে তিন ছক্কা ও এক চারে ২৫ রান নেন ফাহিম আশরাফ। দুই মিডল অর্ডার ব্যাটারের এমন ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ১১ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৭ রান করে দুর্বার রাজশাহী। জবাবে খেলতে নেমে ১৯ ওভার ১ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে জয় নিশ্চিত করে বরিশাল।
বড় ল্য তাড়া করতে নেমে বরিশালের শুরুটা হয়েছিল খুবই বাজে। ইনিংসের প্রথম বলেই নাজমুল হোসেন শান্তকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন জিশান আলম। সুবিধা করতে পারেননি আরেক ওপেনার তামিম ইকবালও। ৫ বলে ৭ রান করেছেন অধিনায়ক। ১২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর উইকেটে আসেন কাইল মেয়ার্স। গত আসরে দুর্দান্ত খেলা এই ক্যারিবিয়ান এবার শুরুর ম্যাচেই ব্যর্থ। ৫ বলে ৬ রান করা এই হার্ডহিটারকে রায়ান বার্লের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ।
৩০ রানে টপ অর্ডারের ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বিপদে পড়ে বরিশাল। সেই বিপদ আরো বাড়িয়েছেন মুশফিকুর রহিম-তাওহিদ হৃদয়রা। দুজনই শুরু পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৬১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউলস্নাহকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ১৭ বলে ২৭ রান করে আফ্রিদি ফিরলে ভাঙে ৫১ রানের জুটি। এই জুটিতে কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরে বরিশাল।
এরপর ফাহিম আশরাফকে নিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে যান মাহমুদউলস্নাহ। দুজনেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সমীকরণ মেলানোয় মনোযোগ দেন। তাতে সফল দুজনই। ২৬ বলে অপরাজিত ৫৬ রান করেছেন মাহমুদউলস্নাহ। আর ফাহিমের ব্যাট থেকে এসেছে ২১ বলে ৫৪ রান।
১৯৭ রানের বিশাল লক্ষ্যে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় বরিশাল। জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত জিসান আলমের প্রথম বলেই হন এলবিডবিস্নউ। অধিনায়ক তামিম ইকবাল ফেরেন পরের ওভারে। তাসকিন আহমেদকে আপার কাটে এক ছক্কা মারার পর ফুললেন্থের বলে হন এলবিডবিস্নউ।
ক্যারিবিয়ান কাইল মেয়ার্স চারে নেমে থিতু হতে পারেননি। তাসকিনের বলে ক্যাচ তুলে হাঁটা ধরেন তিনিও। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমেরও একই দশা। হাসান মুরাদকে টার্গেট করতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন ১৩ রান করে। নবম ওভারে মুরাদ থিতু হওয়া হৃদয়কে (২৩ বলে ৩২) তুলে নিলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বরিশাল।
পরে মাহমুদউলস্নাহ-শাহিন আফ্রিদি মিলে ২৫ বলে যোগ করেন ৫১ রান। ১৭ বলের উপস্'িতিতে ৩ ছক্কায় ২৭ করে তাসকিনের বলেই কাটা পড়েন শাহিন। মাহমুদউলস্নাহ চালিয়ে যান লড়াই, তার সঙ্গে যোগ দিয়ে উত্তাল হয়ে উঠে ফাহিম আশরাফের ব্যাট। একের পর এক ছক্কায় ম্যাচ অতি সহজ করে দেন তারা। তাসকিন ছাড়া আর ভালো মানের কোন পেসার না থাকাতেও স্স্নগ ওভারের হিসাব মিলিয়ে উঠতে পারেনি রাজশাহী।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা রাজশাহীর শুরুটা হয় বাজে। ২৫ রানের মধ্যেই বিদায় নেন দুই ওপেনার জিসান আলম ও মোহাম্মদ হারিস। কিন্তু এরপরই ম্যাচের মোড় ঘোরানো জুটি গড়েন বিজয়-ইয়াসির তৃতীয় উইকেটে দুজনে মিলে যোগ করেন ১৪০ রান। বিজয় শুরুতে ৩৯ বলে ফিফটি স্পর্শ করলেও তাকে দ্রম্নত ছাপিয়ে যান ইয়াসির। চার-ছক্কায় ঝড় তুলেন এই ডানহাতি ব্যাটার।
রিপন মন্ডল, তানভির ইসলামদের তুলোধুনো করতে থাকেন তিনি। তানভিরের বল পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে পাঞ্চ করে কাভারের উপর দিয়ে মারেন দেখার মতন ছক্কা, রিপনকে লং অন দিয়ে উড়ান একাধিকবার। উত্তাল ইনিংসে সেঞ্চুরির আশাও জাগিয়েছিলেন। শেষ ওভারের শেষ দুই বল স্ট্রাইকে থাকতে পারলে হয়ত হয়েও যেত। তবে সেঞ্চুরি না পেলেও দলকে জেতার মতন রান এনে দিয়েছিলেন তিনি, বোলাররা পারেননি নিজেদের কাজটা করতে।