বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ

আদা-রসুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও নিম্নমুখী পেঁয়াজের দাম

গত দুই-তিন দিনে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আসতে শুরু করায় দাম কমেছে। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে পরিবহণ ব্যবস্থা অস্বাভাবিক না হলে সামনে পণ্যটির দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা...
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
আদা-রসুনের দাম স্থিতিশীল থাকলেও নিম্নমুখী পেঁয়াজের দাম

দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে আদা ও রসুনের বাজার। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ও দেশী পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গত দুই-তিন দিনে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আসতে শুরু করায় দাম কমেছে। নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে পরিবহণ ব্যবস্থা অস্বাভাবিক না হলে সামনে পণ্যটির দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল দেশীয় জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৭০-৭২ টাকায়। গত সপ্তাহে একই জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮২-৮৪ টাকা দরে। গত ২৩ ডিসেম্বর মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ৯০-১০৫ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশীয় মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ৩৫ টাকা। এদিকে গতকাল ভারতীয় জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৯৫-১০০ টাকায়। আগের সপ্তাহে একই জাতের পেঁয়াজের দর ছিল ১১৫-১২০ টাকার মধ্যে। গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম উঠেছিল ১৫০-১৬০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে প্রায় ৬৫ টাকার মতো।

খাতুনগঞ্জে এখন পাবনা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও শিবগঞ্জ থেকে আসা দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহই বেশি রয়েছে। সামনে মাগুরা, রাজশাহীসহ অন্যান্য এলাকার পেঁয়াজ বাজারে দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও সামনে আরও কমার সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে পেঁয়াজের বাজার নিম্নমুখী হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে আদা ও রসুনের বাজার। খাতুনগঞ্জে শনিবার রসুন মানভেদে কেজিপ্রতি ১৯০-২০৫ টাকা ও আদা বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী বলছেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে এখন দাম আবারও ১০০ টাকার নিচে নেমেছে। মূলত দেশীয় জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় বাজারে এখন পণ্যটির দাম কমতির দিকে। তবে গত বছরগুলোর তুলনায় বর্তমানে দাম বেশি রয়েছে। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা মাঠ থেকে পুরোদমে ফসল তুলতে শুরু করায় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এতে দেশীয় পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে পেঁয়াজের দাম কতটা বাড়বে বা কমবে।

অন্যদিকে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ দেশের পাইকারি বাজারগুলোয় আসতে শুরু করেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ এখনো কিছুটা কম থাকায় দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। ফলে কৃষকরা এখন ভালো দাম পাচ্ছেন। আর আদা ও রসুনের দাম এখনো স্থিতিশীল থাকলেও সামনে এই দুই পণ্যের দামও কমতে পারে।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ওমর ফারুক বলেন, 'খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানগুলোয় এখন দেশি জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। ভারতীয় পেঁয়াজের পরিমাণ এখনো কম। কিন্তু প্রচুর পরিমাণে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়মিত পেঁয়াজের ট্রাক খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোয় আসছে। তবে নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম নির্ভর করছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমতির দিকে অথবা অস্থিতিশীল আছে।'

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী সোলাইমান বাদশা বলেন, 'ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহর করে নেওয়ায় খাতুনগঞ্জে গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া দেশি পেঁয়াজেরও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম কমতে শুরু করেছে। সব স্বাভাবিক থাকলে সামনে দাম আরও কমবে। তবে আদা ও রসুনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।'

বাজার তথ্যমতে, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৩০ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। সর্বশেষ রবি মৌসুমে দেশে রেকর্ড ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। তবে পচনশীল পণ্য হওয়ায় এবং সংরক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় ভোক্তাপর্যায়ে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায় কিংবা শুকিয়ে ওজন কমে যায়। ঘাটতি পূরণে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে